weather ২৮.৯৯ o সে. আদ্রতা ৮৪% , বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর ২০২৫, ২৩ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক বিভাজন, দ্রুত সুপারিশ করবে ঐকমত্য কমিশন

প্রকাশ : ০৯-১০-২০২৫ ১১:৪৬

ছবি : সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক
সংবিধানসহ রাষ্ট্রের ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সংস্কার নিয়ে প্রস্তাবিত জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি ও গণভোটের সময় নির্ধারণে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য দূর হয়নি। এ অবস্থায় পাঁচ দিনব্যাপী আলোচনা শেষে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জানিয়েছে, বিশেষজ্ঞদের মতামত ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাব সমন্বয় করে আগামী দু-এক দিনের মধ্যেই সরকারকে সুপারিশ পেশ করা হবে।

কমিশন আশা করছে, আগামী ১৫ থেকে ১৭ অক্টোবরের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো চূড়ান্তভাবে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে। বুধবার (৮ অক্টোবর) রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে শেষ দিনের আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

এতে দলগুলোকে মূলত দুটি দলে বিভক্ত দেখা গেছে। বিএনপি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ জাসদ, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটসহ কয়েকটি দল জাতীয় নির্বাচনের দিনই গণভোট আয়োজনের পক্ষে মত দেয়। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও আরো কয়েকটি দল নির্বাচন পূর্ব সময়ে গণভোট আয়োজনের দাবি তোলে।

তবে গণভোটে কী প্রশ্ন থাকবে, ভিন্নমতের প্রস্তাবগুলো কীভাবে উপস্থাপন হবে— এসব বিষয়ে স্পষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি।

আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন সম্ভব নয়। এতে সময় ও খরচ বাড়বে, পাশাপাশি নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। তিনি বলেন, একটি সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে গণভোট আয়োজন সম্ভব, যার ভিত্তিতে একটি নতুন আইন বা অধ্যাদেশ জারি করা যেতে পারে।
তিনি আরো বলেন, 'গণভোটে জুলাই সনদ অনুমোদন পেলে তা আগামী সংসদের জন্য বাধ্যতামূলক হবে। তবে ভিন্নমতগুলোকেও সনদে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে এবং দলগুলো তা নির্বাচনী ইশতেহারে তুলে ধরবে।

জামায়াতে ইসলামী এবং এনসিপি শুরুতে নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে চাইলেও পরে তাদের অবস্থানে পরিবর্তন আসে। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বা মধ্যভাগে গণভোট হতে পারে। জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে একই দিন গণভোট হলে কিছু জটিলতা তৈরি হবে। 

জামায়াতপন্থী আইনজীবী শিশির মনির বলেন, গণভোটের জন্য একটি বিশেষ আদেশ লাগবে, যেখানে সনদের পূর্ণাঙ্গ কপি তফসিল হিসেবে থাকবে। তিনি বলেন, আগামী সংসদের দুটি ভূমিকা থাকতে হবে— একটি সাধারণ, আরেকটি গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য ‘কনস্টিটুয়েন্ট পাওয়ার’। এর মাধ্যমেই সংস্কারগুলো টেকসই হবে।

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, যে কোনো প্রক্রিয়ায় যাওয়া ঠিক হবে না যাতে সংস্কারের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। আগে একটি সাংবিধানিক আদেশ জারি করে গণভোট করতে হবে।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বিএনপি ও জামায়াতকে একসঙ্গে বসে মতপার্থক্য নিরসনের আহ্বান জানান। রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ূম ও গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি প্রস্তাব দেন, দলগুলো নিজেরা আলাদাভাবে বসে মতপার্থক্য কমিয়ে আনতে পারে কি না, সে চেষ্টা করা হোক।

তবে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন বলেন, জুলাই সনদের খসড়া ইতোমধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে। এখন শুধু বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়েই আলোচনা হওয়া উচিত।

আলোচনার সমাপনী ভাষণে সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত তুলে ধরেন ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। সেগুলো হলো: ১. একটি আদেশ জারি করতে হবে। ২. ওই আদেশের মাধ্যমে গণভোট আয়োজন করতে হবে। ৩. গণভোটে দুটি আলাদা প্রশ্ন থাকতে হবে, ঐকমত্য বা বৃহত্তর ঐকমত্য আছে যেসব বিষয়ে, সেগুলো নিয়ে একটি, আর ভিন্ন মত বা নোট অব ডিসেন্ট আছে যেসব বিষয়ে, সেগুলো নিয়ে আরেকটি। ৪. নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ গঠিত হবে। ৫. এই আদেশে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গণভোটে অনুমোদন সাপেক্ষে জুলাই জাতীয় সনদে বর্ণিত সংবিধান-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সংস্কারসমূহ সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করবে।

আলী রীয়াজ বলেন, বিশেষজ্ঞ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত সমন্বিত করে আগামী দু-এক দিনের মধ্যে আলোচনা করে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হবে। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা অংশ নিয়েছেন, তাঁদেরও এ বিষয়ে অবহিত করা হবে।

সমাপনী বক্তব্যে আলী রীয়াজ বলেন, আমরা সবাই জাতীয় ঐক্য রক্ষা করে একটি জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যে সংগ্রাম, সেই সংগ্রামে আমরা সবার সহযোগিতা থাকবে। যে যেখানে থাকি, যেভাবে থাকি, যে দল করি, যে আদর্শে বিশ্বাস করি, আমাদের এই ঐক্য যেন বজায় থাকে, সেটা যেন অব্যাহত থাকে এবং আমরা যেন একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারি। যার অংশীদার হব আমরা এবং যেন আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম তার সুফলটা ভোগ করতে পারে।

২০২৪ সালের অক্টোবরে সরকার ছয়টি পৃথক সংস্কার কমিশন গঠন করে— সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ ও জনপ্রশাসন নিয়ে। ফেব্রুয়ারিতে কমিশনগুলো তাদের চূড়ান্ত প্রস্তাব জমা দেয়। এসব প্রস্তাবের ভিত্তিতে তৈরি হয় ‘জুলাই সনদ’।

ঐকমত্য গঠনের জন্য গঠিত হয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন, যার সভাপতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং আলোচনায় নেতৃত্ব দেন সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

প্রথম পর্বে দলগুলোর সঙ্গে আলাদাভাবে এবং দ্বিতীয় পর্বে সম্মিলিতভাবে আলোচনা হয়। সব মিলিয়ে ৮৪টি প্রস্তাব নিয়ে সনদের খসড়া তৈরি হলেও বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো আসেনি।

পিপলসনিউজ/আরইউ

-- বিজ্ঞাপন --


CONTACT

ads@peoplenewsbd.com

সেফ এক্সিট নিয়ে ভাবাটা হবে ‘দুঃখজনক’; উপদেষ্টা ফাওজুল কবিরের পোস্ট সেফ এক্সিট নিয়ে ভাবাটা হবে ‘দুঃখজনক’; উপদেষ্টা ফাওজুল কবিরের পোস্ট গ্রামের এক কিশোর এখন আন্তর্জাতিক গ্যাং লিডার গ্রামের এক কিশোর এখন আন্তর্জাতিক গ্যাং লিডার মালিবাগে বোরকা পরে এসে দোকানের তালা ভেঙে ৫০০ ভরি সোনা চুরি মালিবাগে বোরকা পরে এসে দোকানের তালা ভেঙে ৫০০ ভরি সোনা চুরি জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক বিভাজন, দ্রুত সুপারিশ করবে ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক বিভাজন, দ্রুত সুপারিশ করবে ঐকমত্য কমিশন বিশ্ববাজারে রুপার দামও ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিশ্ববাজারে রুপার দামও ইতিহাসে সর্বোচ্চ