তেহরানে ঝুঁকিতে বাংলাদেশ দূতাবাস, উদ্বেগ
প্রকাশ : ১৭-০৬-২০২৫ ০৯:০৩

ছবি : সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক
ধারাবাহিক হামলায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে তেহরান। রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে একাধিক সংবেদনশীল স্থাপনায় হামলার কারণে চরম ঝুঁকিতে পড়েছে তেহরানে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ভবন। তেহরান ইউনিভার্সিটির পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর এক কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত হওয়ায় বাংলাদেশ মিশন এখন সরাসরি হামলার আশঙ্কার মুখে রয়েছে।
সোমবার (১৬ জুন) সকালে তেহরানের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে মিশনে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
বর্তমানে ইরানে প্রায় দুই হাজার বাংলাদেশি অবস্থান করছেন, যাদের বেশিরভাগই রাজধানীর বাইরে চলে গেছেন। তবে তেহরানে এখনো শতাধিক বাংলাদেশি আটকা পড়ে আছেন, যাদের মধ্যে দূতাবাসকর্মী, শিক্ষার্থী, পেশাজীবী ও রেডিও তেহরানে কর্মরতরা রয়েছেন। এ ছাড়া বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় অনেকেই দেশে ফিরতে পারছেন না।
পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় বাংলাদেশ সরকার দূতাবাসের কার্যক্রম তৃতীয় দেশে স্থানান্তরের বিষয়টিও ভাবছে। এদিকে ইরানে থাকা বাংলাদেশিদের সহায়তার জন্য দূতাবাস জরুরি হটলাইন চালু করেছে। হোয়াটসঅ্যাপসহ দুটি নম্বরে যেকোনো সময় যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশের ইরান মিশন থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, তেহরানে বাংলাদেশ মিশন ভবনের এক কিলোমিটারের মধ্যে ইরানের একটি পরমাণু কেন্দ্রসহ কমপক্ষে দুটি সংবেদনশীল স্থাপনা রয়েছে। সেগুলোতে হামলার ক্রমাগত চেষ্টা করে যাচ্ছে ইসরায়েল। ফলে বাংলাদেশ মিশন, আশপাশে বসবাসরত কূটনীতিক-কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং তাদের পরিবারের জীবন ও সম্পদ ঝুঁকিতে। সম্ভাব্য হামলায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আতঙ্কের মধ্য দিনাতিপাতকারী ওই সব কূটনীতিক ও স্টাফদের পরিবারকে শহরের ৩০-৪০ কিলোমিটার বাইরে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়া জরুরি হয়ে পড়ছে।
তেহরানের দূতাবাসের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, দেশটিতে থাকা প্রায় দুই হাজার বাংলাদেশি নাগরিক এখন পর্যন্ত মোটামুটি নিরাপদে রয়েছেন। তাদের প্রায় সবাই তেহরানের বাইরে চলে গেছেন। ইসরায়েল তেহরানকে টার্গেট করেছে এবং স্পর্শকাতর স্থাপনাগুলোকে নিখুঁত নিশানা করা হয়েছে জানিয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, ইসরায়েল তেহরান খালি করার ঘোষণা দিয়েছে। সর্বশেষ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ ইন্টারন্যাশনালে এক পোস্টে নাগরিকদের তেহরান ছাড়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
ইরান পরিস্থিতি সরকার পর্যবেক্ষণ করছে উল্লেখ করে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রয়োজনে ইরানের বাংলাদেশ দূতাবাসের কার্যক্রমও তৃতীয় দেশে স্থানান্তরের চিন্তাভাবনা চলছে।
তেহরান মিশনের পাঠানো প্রতিবেদনের উল্লেখ করে কর্মকর্তারা বলছেন, ইরানে বাংলাদেশের দূতাবাস কমপ্লেক্স মোটেও নিরাপদ নয়। ওই ভবনের এক কিলোমিটারের মধ্যে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্রের অবস্থান। তা ছাড়া সেখানে আরও একটি সংবেদনশীল অবকাঠামো রয়েছে। গত কয়েক দিনে ইসরায়েল এটি ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। পাশাপাশি তেহরানের প্রধান দুটি আইটি সেন্টারের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রটি বাংলাদেশ দূতাবাস ভবনের খুব কাছাকাছি অবস্থিত। ওই অবকাঠামোতেও যেকোনো সময় হামলার আশঙ্কা রয়েছে।
ইরানে বাংলাদেশ দূতাবাসে রাষ্ট্রদূত, দুজন কর্মকর্তা, পাঁচজন কর্মচারী এবং তাদের পরিবারসহ প্রায় ৪০ জন রয়েছেন। রেডিও তেহরানে আটজন বাংলাদেশি ও তাদের পরিবারসহ রয়েছেন ২৭ জন। তেহরানে শিক্ষার্থী রয়েছেন প্রায় ১০ থেকে ১২ জন। পেশাজীবী আছেন প্রায় ১০ জন। এ ছাড়া ২৮ জন বাংলাদেশির ১৩ জুন দেশে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা আটকা পড়েছেন। সব মিলিয়ে তেহরানে শতাধিক বাংলাদেশি রয়েছেন বলে জানতে পেরেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইরানের একাধিক স্থানে প্রায় ৬০০ বাংলাদেশি আছেন, তারা ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে সে দেশে বসবাস করছেন। সেখানে বিয়ে করে তারা স্থায়ী হয়েছেন। এর বাইরে আরো প্রায় ৮০০ বাংলাদেশি ১০ বছরের বেশি সময় ধরে অবৈধভাবে ইরানে অবস্থান করে বিভিন্ন খাতে কাজ করছেন। প্রায় দুইশ শিক্ষার্থী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছেন। এ ছাড়া মানব পাচারের ট্রানজিট দেশ হিসেবে ইরানে সব সময় ৩০০ থেকে ৫০০ বাংলাদেশি অবস্থান করেন অন্য দেশে পাচার হওয়ার অপেক্ষায়।
এমন পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের জন্য হটলাইন সেবা চালু করা হয়েছে। রবিবার ইরানে বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃপক্ষের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বলা হয়, ইরানে বসবাসরত সব বাংলাদেশি নাগরিকের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য দূতাবাস ইমার্জেন্সি হটলাইন স্থাপন করেছে। এ ক্ষেত্রে জরুরি প্রয়োজনে ইরানে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের + ৯৮৯৯০৮৫৭৭৩৬৮ ও + ৯৮৯১২২০৬৫৭৪৫ নম্বরে (হোয়াটসঅ্যাপসহ) যোগাযোগ করতে বলেছে দূতাবাস কর্তৃপক্ষ।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com