ইরান-ইসরায়েল সংঘাত
যুক্তরাষ্ট্রে হোয়াইট হাউসের সামনে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ
প্রকাশ : ১৯-০৬-২০২৫ ১১:২৬

ছবি : সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার চলমান সামরিক উত্তেজনা এখন বৈশ্বিক উদ্বেগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এই সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য জড়িত হওয়া নিয়ে মার্কিন রাজনীতি ও সাধারণ জনগণের মধ্যে তীব্র মতপার্থক্য দেখা যাচ্ছে। হোয়াইট হাউসের সামনে বিক্ষোভ করছেন একদল যুদ্ধবিরোধী মার্কিন নাগরিক, যারা ইসরায়েলকে দেওয়া বিপুল সামরিক সহায়তা এবং ইরানে ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি যুদ্ধ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী ইরানের দুটি গ্রামে হামলার আগে সেখানকার বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে; যা সংঘাতের নতুন মাত্রা নির্দেশ করছে। ফ্রান্সসহ ইউরোপীয় মিত্রেরা কূটনৈতিকভাবে সংকট সমাধানের আহ্বান জানাচ্ছে এবং ইরানের বেসামরিক স্থাপনায় হামলা বন্ধে তৎপর হচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সংঘাতের সপ্তম দিনে এসে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৩৯ জনে; যার মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বেসামরিক নাগরিক রয়েছে বলে জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস। তবে ইরান সরকারের দেওয়া পরিসংখ্যানে নিহতের সংখ্যা কম দেখানো হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনো চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত নেননি যে, যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি এই সংঘাতে জড়াবে কিনা। তার বক্তব্য অনুযায়ী, তিনি ‘শেষ মুহূর্তে’ সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন।
সব মিলিয়ে, ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা একটি বৃহৎ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সংকটে রূপ নিচ্ছে, যার পরিণতি হতে পারে আরো রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, শরণার্থী সংকট ও ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা।
হোয়াইট হাউসের সামনে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ: হোয়াইট হাউসের সামনে একদল বিক্ষোভকারী বিক্ষোভ করছেন। তাদের দাবি, ইসরায়েল ও ইরানের সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র যেন আর জড়িত না হয়।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল-জাজিরা।
বিক্ষোভকারীরা ইরানে ইসরায়েলি বোমা হামলা ও ইসরায়েলি বাহিনীকে কোটি কোটি ডলার সামরিক সহায়তা দেওয়ার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছেন। বিক্ষোভকারীরা যুদ্ধে সরাসরি জড়িত না হতে ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান।
এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহী তিনটি রণতরী বহর মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থান করছে। বিক্ষোভকারীরা দাবি করেন, এই বহরগুলো যেন কেবল প্রতিরক্ষামূলক উদ্দেশ্যে সেখানে থাকে। হামলা না চালায়।
ইরানের দুটি গ্রামে হামলার আগে বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার পরামর্শ ইসরায়েলের: ইরানের দুটি গ্রামে অবস্থিত ‘সামরিক অবকাঠামো’ লক্ষ্য করে হামলা চালানোর আগেই বাসিন্দাদের সরে যেতে পরামর্শ দিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। বৃহস্পতিবার ভোরে আরবি ও ফারসি ভাষায় এক টেলিগ্রাম বার্তায় এই পরামর্শ দেওয়া হয়। খবর এএফপির।
জরুরি সতর্কবার্তায় বলা হয়, ইরানি শাসকগোষ্ঠীর সামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) হামলা চালানোর আগেই ইরানের দুটি গ্রাম— আরাক ও খন্দাবের বাসিন্দা, শ্রমিকসহ সেখানে অবস্থানরত সবাই যেন অবিলম্বে সরে যান।
পারমাণবিক বা ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির সঙ্গে সম্পর্ক নেই— ইরানের এমন স্থানে হামলা বন্ধের আহ্বান মাখোঁর: ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাত আলোচনার মাধ্যমে নিরসনের প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে ফ্রান্স ও দেশটির ইউরোপীয় মিত্ররা। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর কার্যালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। খবর আল জাজিরার।
ফ্রান্সের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নোয়েল বারোকে এ উদ্যোগের খসড়া তৈরির নির্দেশও দিয়েছেন মাখোঁ। খবরে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে সমন্বয় করে একটি আলোচনাভিত্তিক সমাধান প্রস্তাব করা হবে, যাতে দ্বন্দ্বের অবসান ঘটানো সম্ভব হয়। তবে এ পরিকল্পনার বিস্তারিত জানানো হয়নি।
একই সঙ্গে মাখোঁ ইরানভিত্তিক এমন সব স্থাপনায় ইসরায়েলি হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন, পারমাণবিক বা ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির সঙ্গে যেগুলোর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
এলিসি প্রাসাদ জানিয়েছে, ইরানের পারমাণবিক বা ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির সঙ্গে সম্পর্কহীন লক্ষ্যবস্তুতে ইসরায়েলি হামলা ক্রমশ বৃদ্ধি এবং ইরান ও ইসরায়েল— উভয় দেশেই বেসামরিক প্রাণহানি বাড়তে থাকায় ফরাসি প্রেসিডেন্ট উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তার মতে, এ সামরিক অভিযান অবিলম্বে বন্ধ করা প্রয়োজন, কারণ এগুলো গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি তৈরি করছে।
এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েল ও ইরান থেকে ফরাসি নাগরিকদের স্বেচ্ছায় দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন মাখোঁ। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
ইসরায়েলের হামলায় ইরানে এ পর্যন্ত নিহত ৬৩৯, আহত ১৩২০-হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস: ওয়াশিংটনভিত্তিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস বলেছে, ইসরায়েলের হামলায় ইরানে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৬৩৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন এক হাজার ৩২০ জনের বেশি। খবর আল জাজিরার
হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস আরও বলেছে, নিহতদের মধ্যে ২৬৩ জন বেসামরিক নাগরিক এবং ১৫৪ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য। বাকিদের পরিচয় দেয়নি সংস্থাটি। ২০২২ সালে মাসা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ইরানে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলাকালে হতাহতের তথ্য জানিয়েছিল হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস।
সংস্থাটি বলেছে, হতাহতের তথ্য তারা ইরানের স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের সঙ্গে মিলিয়ে দেখেছে। ইরানে গড়ে তোলা নিজেদের নেটওয়ার্কের সহায়তায় তথ্য যাচাই করা হয়েছে।
ইরান এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলা চলাকালে নিয়মিতভাবে হতাহতের তথ্য দেয়নি। ইরানের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং এক হাজার ২৭৭ জন আহত হয়েছেন।
ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র জড়াবে কিনা, ‘শেষ মুহূর্তে’ সিদ্ধান্ত-ট্রাম্প: ইরানে ইসরায়েলের চলমান হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়াবে কিনা, সে সিদ্ধান্ত এখনো নেননি বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘একেবারে শেষ মুহূর্তে আমি সিদ্ধান্ত নেব।’
হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন রুমে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেলেও সেখান থেকে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ইঙ্গিত মেলেনি। বিষয়টি নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের আলোচনা চলছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, তার সামনে সব ধরনের সম্ভাব্য সামরিক ও কূটনৈতিক ‘পদক্ষেপ’ তুলে ধরা হয়েছে। তবে, এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমরা ট্রাম্পকে বলতে শুনেছি, তিনি সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একেবারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চান। সেই সিদ্ধান্ত কী হবে বা কবে তা নেওয়া হবে, সে সম্পর্কে কিছুই অনুমান করা যাচ্ছে না।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com