সেফ এক্সিট নিয়ে ভাবাটা হবে ‘দুঃখজনক’; উপদেষ্টা ফাওজুল কবিরের পোস্ট
প্রকাশ : ০৯-১০-২০২৫ ১৩:০২

ছবি : সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বুধবার (৮ অক্টোবর) দীর্ঘ তিন ঘণ্টা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ-সরাইল অংশে যানজটে আটকা পড়ে অবশেষে মোটরসাইকেলে করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বরোড মোড়ে এসে নাজুক মহাসড়কটি পরিদর্শন করেন। মোটরসাইকেলে করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাওয়ার কিছু ছবি সেসময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
এতে দেখা যায়, মোটরসাইকেলে চালকের পেছনে বসেছেন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, তার মাথায় হেলমেট থাকলেও নেই চালকের মাথায়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে বেশ সমালোচনাও করেন নেটিজেনরা।
এদিকে, বুধবারের ব্রাহ্মণবাড়িয়া সফর ও নানা বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) সকালে দেওয়া ওই স্ট্যাটাসের শিরোনাম ছিলো- ‘উপদেষ্টার রোজনামচা, চালকের হেলমেট নাই ও সেফ এক্সিট।’
স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-
গতকাল আমি সকাল ৭:৪৫ মিনিটে ট্রেনযোগে ভৈরব যাই। আমার সঙ্গে ছিলেন যাতায়ত খাত বিশেষজ্ঞ ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড: মইনুদ্দিন, রেল ও সড়ক বিভাগের ঊর্ধ্বতন নির্বাহী, জেলা ও উপজেলা পরিষদ ও পুলিশের কর্মকর্তাবৃন্দ। ট্রেনে ওঠার আগে কমলাপুর রেলস্টেশন পরিদর্শন করি ও ট্রেনে যাত্রীদের সাথে কুশল বিনিময় করি। দশটা পনের মিনিটে ভৈরব পৌঁছাই ও সেখান থেকে গাড়িতে যেয়ে #আশুগঞ্জ# ট্রেন স্টেশন পরিদর্শন করি। সেখানে পৌঁছে বিএনপি, জামাতসহ স্থানীয় জনগণের সাথে কথা বলি। তাঁদের দাবী স্টেশনটিকে পূর্বের ন্যায় বি শ্রেণিভুক্ত করতে হবে। স্টেশনটির বেহাল অবস্থা। উঁচুতে অবস্থিত স্টেশনটিতে মহিলা ও বয়োবৃদ্ধদের ওঠার ব্যবস্থাটি কঠিন। সিগনালিং সহ স্টেশনটির অন্যান্য ত্রুটি নিরসন ও দীর্ঘমেয়াদে কি করা যায় সে বিষয়ে রেলের মহাপরিচালককে নির্দেশ দিই।
সেখান থেকে সরাইলের পথে রওনা হই। সাত/আট কিলোমিটার পথে এক ঘণ্টা অবস্থানের পরেও অগ্রগতি না হওযায় প্রথমে পায়ে হেঁটে ও পরে মোটর সাইকেল যোগে রওনা দিই। মোটর সাইকেল খুঁজতে গিয়ে দেখা যায় চালক কিংবা যাত্রী কারোই হেলমেট নাই। আট দশটা মটরবাইক খুঁজে একটিমাত্র হেলমেট পাওয়া যায়। অনেক খোজাখুজির ও অপেক্ষার পরও চালকের জন্য হেলমেট না পেয়ে সবার পরামর্শে একমাত্র হেলমেটটি নিজে পড়ে রওয়া দিই। হেলমেটবিহীন বাইকচালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পুলিশকে পরামর্শ ও বিআরটিএ, জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছি।
যানজটের মূল কারণ সরাইল চৌরাস্তার নির্মাণ কাজ হলেও, পথে দেখতে পাই যে মূলত: চালকদের শৃঙ্খলাবোধ ও হাইওয়ে ট্রাফিক পুলিশের ব্যবস্থাপনার অভাবে যাত্রায় বিলম্ব ঘটছে। উল্লেখ্য, ভারতীয় ঋণে বাস্তবায়িত এ প্রকল্পের ঠিকাদার চলে যাওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তাদের ফিরিয়ে এনে এখন পুনরায় কাজ শুরু করা হয়েছে। দুই লেনের মূল রাস্তার ডানপাশে দুই লেন ও বামপাশে একটি সার্ভিস লেন আছে। যেগুলির যথাযথ ব্যবহার করা হলে এত যানজট হবার কথা নয়। মূল রাস্তার দুই পাশে ডিভাইডার স্থানে স্থানে ভেঙ্গে ফেলেছে। পাশ থেকে গাড়ি উঠে দুই লেন কোথাও তিন চার লেনে পরিণত হয়েছে। ফলে সবাই আগে যেতে চাচ্ছে কেউই আগাতে পারছেনা। হাইওয়ে পুলিশ তৎপর থাকলে এটা হতোনা। এ বিষয়ে পুলিশের আইজিপির সাথে কথা হয়েছে, আজ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সাথে কথা বলব।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর সাথে পরামর্শক্রমে অবিলম্বে রাস্তা সংস্কার বিষয়ে ছয়টি পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতিপূর্বেই নির্মাণকাজ তদারকির জন্য অতিরিক্ত প্রদান রকৌশলী সহ ১২ জন কর্মকর্তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পদস্থ করা হয়েছে। আমরা আশা করছি দ্রুত এ রাস্তায় চলাচল প্রায় স্বাভাবিক হবে।
ফেরার পথে সমকালের সাংবাদিক উপদেষ্টাদের সেফ এক্সিট বিষয়ে আমার মন্তব্য জানতে চেয়েছেন। এ বিষয়টি উত্থাপনকারী, প্রাক্তন উপদেষ্টা ও বর্তমান এনসিপি নেতা নাহিদ ইসলাম আমার অত্যন্ত স্নেহভাজন ও জুলাই আন্দোলনের অগ্রসেনা হিসাবে শ্রদ্ধার পাত্র। তাই তার বক্তব্যের ওপর আমার মন্তব্য করা শোভন নয়। তাছাড়া আমি রাজনৈতিক বিষয়ে কোন মন্তব্য করিনা।
উপদেষ্টা হিসেবে যোগদানের পর থেকে আমার রোজনামচা এমনই। গতকালও রাত আটটায় বাসায় ফিরেছি। নিজে পদে থেকে অন্যায় সুবিধা গ্রহণ করিনি। আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব কাউকে ব্যবসা বা চাকরি দিই নাই। নিজের সীমিত সামর্থের সবটুকু ব্যবহার করে জনগণের প্রতি দায়িত্ব পালন করেছি।শিক্ষকতার সূত্রে, ইতিপূর্বে যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার নিশ্চিত সুযোগ গ্রহণ করিনি।
তাই, আজ ৭২+ বছর বয়সে আমাকে যদি সেফ এক্সিটের কথা ভাবতে হয় তা হবে গভীর দু:খের বিষয়!!!
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com