weather ২৮.৯৯ o সে. আদ্রতা ৮৪% , বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি এখন কোথায়

প্রকাশ : ২৬-০৬-২০২৫ ১৬:৪০

ছবি : সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইরানে ভয়াবহ সংকটময় সময় পার হচ্ছে— যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে লিপ্ত হয়েছিল দেশটি। আপাত যুদ্ধবিরতি চলছে। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি প্রায় সপ্তাহ ধরে জনসমক্ষে অনুপস্থিত। এতে করে উদ্বেগ ও সন্দেহ ছড়িয়েছে দেশজুড়ে। রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে সাধারণ মানুষ— সবাই জানতে চাইছে, তিনি কোথায়, কেমন আছেন, আদৌ সক্রিয় রয়েছেন কিনা।

প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের একজন উপস্থাপক সরাসরি খামেনির দপ্তরের এক কর্মকর্তাকে প্রশ্ন করেন, মানুষ সর্বোচ্চ নেতাকে নিয়ে খুব চিন্তিত। তার কী অবস্থা, আপনি কি বলতে পারেন?

জবাবে উপস্থাপক জানান, দর্শকদের অসংখ্য বার্তা এই প্রশ্নেই ভরে গেছে। তবে খামেনির আর্কাইভ দপ্তরের কর্মকর্তা মেহদি ফাজায়েলি কোনো সরাসরি উত্তর না দিয়ে বলেন, আমরাও শুনছি এই উদ্বেগের কথা। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক হামলার প্রেক্ষাপটে খামেনির নিরাপত্তা নিয়ে মানুষ চিন্তিত। আমাদের সবাইকে তার জন্য দোয়া করতে হবে।

সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী, আয়াতুল্লাহ খামেনি একটি সুরক্ষিত বাংকারে অবস্থান করছেন। নিরাপত্তা সতর্কতায় তিনি সব ধরনের ইলেকট্রনিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলছেন। তবে তার স্বাস্থ্য, সিদ্ধান্তগ্রহণে অংশগ্রহণ বা মৃত্যুর গুজব নিয়ে সরকার সরাসরি কোনো কিছু জানায়নি। ফলে এই নীরবতাই জন্ম দিয়েছে আরো গুঞ্জনের।

দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমেও উদ্বেগের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। ‘খানমান’ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মোহসেন খালিফেহ বলেন, সর্বোচ্চ নেতার কয়েক দিনের অনুপস্থিতি আমাদের, যারা তাকে ভালোবাসি, গভীর দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। যদি তিনি মারা যান, তার জানাজার মিছিল হবে ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবময়।

এই সময়ে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সামরিক উত্তেজনা চূড়ান্তে পৌঁছেছিল। যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়, যার জবাবে ইরান কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ঘাঁটিতে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে। এরপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উদ্যোগ ও কাতারের মধ্যস্থতায় ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হয়। এই সংকটকালীন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে খামেনির সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল কিনা— তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে, কারণ তাকে এ সময়ে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি, এমনকি কোনো বার্তাও শোনা যায়নি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক হামজা সাফাভি, যিনি খামেনির শীর্ষ সামরিক উপদেষ্টার পুত্র, জানিয়েছেন— ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী বিশ্বাস করে, ইসরায়েল এখনো খামেনিকে হত্যার ষড়যন্ত্র করতে পারে। তাই তার নিরাপত্তায় কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। তবু ধারণা করা হচ্ছে, তিনি দূর থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে সম্মতি দিচ্ছেন।

এই অনুপস্থিতির সুযোগে ইরানে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এক ধরনের সক্রিয়তা ও নতুন সমীকরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের নেতৃত্বে একটি কূটনৈতিক ও সংযত ঘরানার জোট প্রভাবশালী হয়ে উঠছে। পেজেশকিয়ানের পাশে আছেন বিচার বিভাগের প্রধান গোলাম হোসেইন মোহসেনি-এজেই এবং সশস্ত্র বাহিনীর নতুন প্রধান মেজর জেনারেল আবদুর রহিম মুসাভি। এই গোষ্ঠী যুদ্ধবিরতির পর আলোচনায় ফেরার পক্ষে কথা বলছে।

এ প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে বলেন, এই যুদ্ধ এবং জনগণের ঐক্য আমাদের শাসনব্যবস্থায় নতুন চিন্তার সুযোগ এনে দিয়েছে। এটা পরিবর্তনের এক সোনালি সুযোগ। পেজেশকিয়ান গত বছর নির্বাচিত হন ‘বিতর্ক এড়িয়ে দেশকে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত করার’ অঙ্গীকার নিয়ে।

সরকার যুদ্ধকালীন আবেগকে কাজে লাগাতে চাইছে। মঙ্গলবার তেহরানের আজাদি স্কয়ারে অনুষ্ঠিত হয় এক উন্মুক্ত কনসার্ট ও আলোক প্রক্ষেপণ অনুষ্ঠান। সেখানে জরুরি সেবাকর্মীদের ছবি তুলে ধরা হয়— যা জনমনে নতুন আশা ও জাতীয়তাবাদের বার্তা দেয়।

তবে এ সময় আরেকটি গোষ্ঠীও সক্রিয় হয়ে উঠেছে, যারা এই কূটনৈতিক পথ ও যুদ্ধবিরতিকে ‘দুর্বলতা’ হিসেবে দেখছে। কট্টরপন্থী রাজনীতিক সাঈদ জলিলির নেতৃত্বে একটি রক্ষণশীল গোষ্ঠী প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানের তীব্র সমালোচনা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় ফেরার ইঙ্গিতকেও বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে চিহ্নিত করেছে তারা। রেভল্যুশনারি গার্ডের কিছু প্রভাবশালী কর্মকর্তা এবং সংসদের বহু রক্ষণশীল এমপি এই দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে একমত।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই দ্বন্দ্ব আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। জলিলির ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফুয়াদ ইজাদি লিখেছেন, পেজেশকিয়ানের কথাবার্তা মনে করিয়ে দেয়, তিনি ইরানের নেতৃত্বের জন্য উপযুক্ত নন। এর জবাবে প্রেসিডেন্টের প্রধান যোগাযোগ কর্মকর্তা আলী আহমাদনিয়া বলেন, আমরা ১২ দিন ধরে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ করেছি। এখন কি আমাদের কলমের যোদ্ধাদের সঙ্গেও যুদ্ধ করতে হবে?

এই দ্বন্দ্ব শুধু রাজনৈতিক নয়, কূটনৈতিক ও সামরিক কৌশলের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নির্ধারণেও প্রভাব ফেলতে পারে। পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েও মতবিরোধ আছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি ও পারমাণবিক সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ এসলামি জানিয়েছেন, ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ও পারমাণবিক স্থাপনা পুনর্গঠন অব্যাহত রাখবে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক নীতিনির্ধারণী প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউসের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক পরিচালক সানাম ভাকিল বলেন, খামেনির অনুপস্থিতি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত— ইরান এখন এক গভীর নিরাপত্তা আতঙ্কে চলছে। আসন্ন আশুরা উপলক্ষে যদি খামেনি জনসমক্ষে না আসেন, তবে তা হবে এক অশনি সংকেত।

সর্বোচ্চ নেতার দীর্ঘ নীরবতা এবং অনুপস্থিতি এখন শুধু একটি ব্যক্তির স্বাস্থ্যসংক্রান্ত প্রশ্ন নয়; বরং তা গোটা রাষ্ট্রব্যবস্থার ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনার প্রশ্নে পরিণত হয়েছে। খামেনি না ফিরলে বা তার ভূমিকায় পরিবর্তন এলে, ইরানের রাজনৈতিক মানচিত্রে বড় রকমের পরিবর্তন অবধারিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

পিপলসনিউজ/আরইউ

-- বিজ্ঞাপন --


CONTACT

ads@peoplenewsbd.com

যুক্তরাষ্ট্রকে সজোরে চপেটাঘাত করেছে ইরান যুক্তরাষ্ট্রকে সজোরে চপেটাঘাত করেছে ইরান ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত: সিআইএ প্রধান ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত: সিআইএ প্রধান সুষ্ঠু পরিবেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এইচএসসি পরীক্ষা: শিক্ষা উপদেষ্টা সুষ্ঠু পরিবেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এইচএসসি পরীক্ষা: শিক্ষা উপদেষ্টা দেশে মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশ মাদকাসক্ত, সংখ্যায় ৮৩ লাখ দেশে মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশ মাদকাসক্ত, সংখ্যায় ৮৩ লাখ ‘মহান নায়ক’ নেতানিয়াহু, তাকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিত: ট্রাম্প ‘মহান নায়ক’ নেতানিয়াহু, তাকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিত: ট্রাম্প