ইরানে নয় মাসে এক হাজার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর
প্রকাশ : ২৪-০৯-২০২৫ ১০:৩৯

ছবি : সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
চলতি বছর ইরানে এখন পর্যন্ত অন্তত এক হাজার মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) নরওয়েভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ইরান হিউম্যান রাইটস গ্রুপ (আইএইচআর) এ তথ্য জানিয়েছে।
সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে দেশটিতে অন্তত ৬৪ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। অর্থাৎ গত সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে নয়জনের বেশি মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আইএইচআর ২০০৮ সাল থেকে ইরানে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের হিসাব রাখছে। গত বছর দেশটিতে রেকর্ড ৯৭৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। চলতি বছরের আরো তিন মাস বাকি রয়েছে। কিন্তু ইতোমধ্যে মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা গত বছরকে ছাড়িয়ে গেছে।
১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লব ও ইরান-ইরাক যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ১৯৮০-এর দশক এবং ১৯৯০-এর দশকের শুরুর দিকে ইরানে ব্যাপকভাবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল।
মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, গত তিন দশকের যেকোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে ইরানে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার ঘটনা ব্যাপকভাবে বাড়ছে। বিশেষ করে গত জুন মাসে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ১২ দিনের যুদ্ধে আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির নেতৃত্বাধীন শাসনব্যবস্থা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
আইএইচআরের পরিচালক মাহমুদ আমিরি-মোগাদ্দাম এক বিবৃতিতে বলেন, গত কয়েক মাসে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের কারাগারগুলোতে এক ধরনের গণহত্যা অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলের কার্যকর প্রতিক্রিয়া না থাকায় এই অভিযানের মাত্রা প্রতিদিনই বাড়ছে।
নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ফাঁকে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে পশ্চিমা বিভিন্ন দেশের নেতাদের সাক্ষাতের সম্ভাবনা রয়েছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ইরানের ওপর পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের পক্ষে ভোট দেওয়ার পর দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচি সেখানে আলোচনার মূল বিষয় হয়ে উঠবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে আমিরি-মোগাদ্দাম বলেন, ইরানে চলমান মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল এবং এটিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আলোচ্যসূচির সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে রাখতে হবে।
তিনি বলেন, যেসব দেশ মানবাধিকারের মূলনীতির প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ তাদের সঙ্গে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের যেকোনো সংলাপে যদি ইরানের মৃত্যুদণ্ড সংকটকে অন্তর্ভুক্ত না করা হয়, তাহলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
আইএইচআর বলেছে, মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের এই সংখ্যা কেবল ‘ন্যূনতম হিসাব’। প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে। কারণ দেশটিতে তথ্যের স্বচ্ছতার ঘাটতি এবং সংবাদ প্রচারে বিভিন্ন ধরনের বিধিনিষেধ রয়েছে।
বর্তমানে ইরানে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় কেবল ফাঁসির মাধ্যমে। যদিও অতীতে অন্য পদ্ধতিও ব্যবহার করা হয়েছে। অধিকাংশ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় কারাগারের ভেতরে। তবে মাঝে মাঝে প্রকাশ্যেও ফাঁসি দেওয়া হয়।
ইরানে হত্যা, মাদকপাচার, ধর্ষণ এবং যৌন নির্যাতনসহ বড় ধরনের অন্য অপরাধের ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডের সাজার বিধান রয়েছে। যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতে, বিশ্বে প্রত্যেক বছর চীনের পর সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে ইরান। যদিও দেশটিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নির্ভরযোগ্য কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com