কপ সম্মেলনে আগুন, বন্ধ গুরুত্বপূর্ণ সেশন
প্রকাশ : ২১-১১-২০২৫ ১২:৫৫
ছবি : সংগৃহীত
সিনিয়র রিপোর্টার
কপ-৩০ সম্মেলন চলাকালে ব্রাজিলের বেলেমে কপের ভেন্যুকনফারেন্স সেন্টারে আগুন লেগেছে। এ সময় সেন্টারের ভেতরে থাকা হাজার হাজার মানুষকে ভয়ে দিগবিদিক ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। তবে কোনো প্রকার হতাহত ছাড়াই সবাই বাইরে বের হতে পেরেছেন।
বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) স্থানীয় সময় দুপুর সোয়া ২ টার দিকে কপ সেন্টারের ভেতরে একটি প্যাভিলিয়নে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। কপ সেন্টারে উপস্থিত বাংলাদেশি সাংবাদিক, লবিস্ট ও পরিবেশবিদরা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বেলেমের পুলিশ, সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নেভাতে ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করে।
নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট ভিডিওতে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুরের খাবারের কিছু সময় পর এক প্রদর্শনী প্যাভিলিয়নে আগুন লাগে, পরে দ্রুতই তা ভবনের ভেতরের দেয়াল ও ছাদকে ঢেকে রাখা কাপড়ের আস্তরণে ছড়িয়ে পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই অবশ্য আগুন নিভিয়ে ফেলা হয়।
নাকে-মুখে ধোঁয়া ঢোকা ১৩ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে, বলেছে আয়োজকরা। মাইক্রোওয়েভের মতো কোনো বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে ধারণা করছে স্থানীয় দমকল বিভাগ।
ছয় মিনিটের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। তার মধ্যেই নিরাপত্তাকর্মীরা হলওয়ের চারপাশে মানবঢাল তৈরি করে হাজার হাজার প্রতিনিধিদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডয়চে ভেলের বাংলাদেশি সাংবাদিক ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ বলেন, ‘কপ সেন্টারে এর আগে কখনো আগুনের ঘটনা ঘটেছে কিনা জানা নেই। তবে এবারে সাক্ষী হতে হলো বেলেম কপ কনফারেন্সে। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দ্রুত সবাইকে বাইরে বের করেছে। প্রথমে অনেকে বুঝতে পারেননি। পরে ভয়ে ছোটাছুটি করেছে লোকজন।’
এ বিষয়ে পরিবেশবিদ শরীফ জামিল বলেন, ‘শুরু থেকেই এবারের কপের অব্যবস্থাপনা নিয়ে অনেকে বিরূপ মন্তব্য করে আসছিলেন। এর মধ্যে এই আগুন সেই মন্তব্যে ঘি ঢেলে দিল। এত মানুষের আয়োজন হঠাৎ করে থেমে গেলে অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত হবে বিশ্ব। বিশেষ করে অনুন্নত দেশগুলো। কারণ একটা শ্রেণি চায়-ই যে, সব সিদ্ধান্ত আটকে থাক। আগুন লাগার কারণে সবাই বাইরে অবস্থান করছে। কতগুলো সেশন চলছিল। গুরুত্বপুর্ণ সিদ্ধান্তগুলোই হচ্ছিল। সবকিছু রেখে সবাই বের হয়ে গেছে।’
আরেক সাংবাদিক শাফি উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ভেতরে সব দাহ্য পদার্থ থাকায় আতঙ্কটা বেশি ছিল। ওপরে-নিচে, টেবিলে, মাটিতে সবই দাহ্য পদার্থ। ফায়ার সার্ভিস চেষ্টা করে আগুন নিভিয়ে ফেলে। তবে আতঙ্ক এখনো কাটেনি।’
জাতিসংঘের যতগুলো সংস্থা রয়েছে তার মধ্য দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মানের কনফারেন্স এটি। এই আয়োজন ঘিরে সারা বিশ্বের অন্তত ৫০ হাজার লোকের সমাগম ঘটে থাকে।
বৃহস্পতিবার আগুনের ঘটনার আগে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সম্মেলনে উপস্থিতদের বিশ্বকে জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভরতা থেকে ধীরে ধীরে সরিয়ে আনা নিয়ে যে বিতর্ক তার অবসান ঘটিয়ে দ্রুত একটি চুক্তিতে উপনীত হওয়ার তাগাদা দিয়েছিলেন।
আমাজন সংশ্লিষ্ট শহর বেলেমে হওয়া সম্মেলন শেষ করার নির্ধারিত সময় শুক্রবার (২১ নভেম্বর); কিন্তু এর মধ্যে প্রায় ২০০ দেশের প্রতিনিধিদের সমঝোতায় পৌঁছার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ, বলছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
আয়োজক দেশ ব্রাজিল চুক্তিতে আন্তর্জাতিক জলবায়ু উদ্যোগ ত্বরান্বিতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ রাখতে চাইছে, যাতে কপ সম্মেলনগুলোতে দশকের পর দশক ধরে দেওয়া প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন দেখা যায়।
এদিকে সম্মেলনে উপস্থিত দেশগুলোর মধ্যে জলবায়ু অর্থায়ন বৃদ্ধি ও জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসাসহ নানা বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছাতে প্রতিনিধিরা নিজেরাই বুধবার পর্যন্ত সময় নিয়েছিলেন, কিন্তু সেই লক্ষ্য পূরণ হয়নি।
বৃহস্পতিবার ব্রাজিল কয়েক দেশের সরকারের কাছে কপ-৩০ চুক্তির কিছু অংশের একটি খসড়া প্রস্তাব দিয়েছে, তবে তাতে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসার রোডম্যাপ ছিল না।
রয়টার্সের দেখা ওই খসড়া প্রস্তাবে ২০৩০ সালের মধ্যে জলবায়ু অভিযোজনে অর্থায়ন ২০২৫-এর চেয়ে তিনগুণ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে এই অর্থ কি ধনী দেশগুলো সরাসরি সরবরাহ করবে নাকি ব্যাংক ও বেসরকারি খাতকেও এখানে যুক্ত করা হবে তা স্পষ্ট নয়।
খসড়া নিয়ে মন্তব্যের জন্য রয়টার্স ব্রাজিলের কপ-৩০ প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তাৎক্ষণিকভাবে জবাব পায়নি। আলোচকদের অনেকে জানিয়েছেন, আগুনের কারণে সম্মেলনস্থল খালি করে ফেলার আগ পর্যন্ত তারা খসড়াটি নিয়ে কাজ করছিলেন। তবে কেউ কেউ বলছেন, খসড়া প্রস্তাবটি তারা এখনো পাননি।
কপ সম্মেলনে প্রায়ই প্রেসিডেন্টের কার্যালয় প্রথমে অল্প কিছু দেশের সঙ্গে খসড়া নিয়ে আলোচনা করে, এরপর চূড়ান্ত চুক্তির জন্য আলোচনায় সবাইকে ডেকে আনা হয়।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com