গাজা যুদ্ধ অবসানের প্রচেষ্টায় সম্পৃক্ত সবাইকে দ্রুত এগোতে বললেন ডোনাল্ড ট্রাম্প
প্রকাশ : ০৬-১০-২০২৫ ১২:৩৪

ছবি : সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মিশরে হামাস ও ইসরায়েল যে পরোক্ষ আলোচনায় বসতে যাচ্ছে, তার আগ মুহূর্তে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা যুদ্ধ অবসানের প্রচেষ্টায় সম্পৃক্ত সবাইকে ‘দ্রুত এগোতে’ বলেছেন।
বিবিসি লিখেছে, হামাস যুক্তরাষ্ট্রের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার কিছু অংশে সম্মত হওয়ার পর আজ সোমবার (৬ অক্টোবর) এই আলোচনা হতে যাচ্ছে। তারা জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া এবং গাজার প্রশাসনিক দায়িত্ব ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাটদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে, তবে অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা চাইছে।
হামাস যা বলেছে, তাতে ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের নিরস্ত্রীকরণ এবং ভবিষ্যতে গাজা শাসনে অংশ না নেওয়ার মতো মূল দাবিগুলোর বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া এখনো পাওয়া যায়নি।
আলোচনা খুব সফল হয়েছে দাবি করে ট্রাম্প সোশাল মিডিয়ায় লিখেছেন, আমাকে বলা হয়েছে, বৈঠকের প্রথম ধাপ এই সপ্তাহে শেষ হবে এবং আমি সবাইকে দ্রুত এগোতে বলছি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট এও বলেন, সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, না হলে ভয়াবহ রক্তপাত ঘটবে।
এর আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প বলেন, গাজায় হামাসের হাতে জিম্মি ইসরায়েলিদের শিগগির মুক্তি দেওয়া হবে বলেই তিনি আশা করছেন।
শান্তি পরিকল্পনার নমনীয়তার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে ট্রাম্প বলেন, আমাদের নমনীয় হওয়ার দরকার নেই, কারণ প্রায় সবাই তাতে একমত হয়েছে, তবে কিছু পরিবর্তনের সম্ভাবনা সবসময়ই থাকে। তিনি বলেন, এটি ইসরায়েলের জন্য দারুণ এক চুক্তি; পুরো আরব বিশ্ব, মুসলিম বিশ্ব এবং বিশ্ববাসীর জন্যও দারুণ চুক্তি— আমরা এতে খুব খুশি।
প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় হামাস সাড়া দেওয়ার পর ট্রাম্প শুক্রবার ইসরায়েলকে অবিলম্বে বোমাবর্ষণ বন্ধ করার’ করতে বললেও গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে।
ইসরায়েলি সরকারের মুখপাত্র শোশ বেড্রোসিয়ান রবিবার সাংবাদিকদের বলেন, গাজার কিছু অংশে হামলা বন্ধ হলেও এখন পর্যন্ত কোনো যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়নি।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আত্মরক্ষামূলক হামলার নির্দেশ দিয়েছেন…যদি গাজার যুদ্ধক্ষেত্রে সেনাদের জীবন হুমকির মুখে পড়ে।
গাজা থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী, শনিবার রাত থেকে রবিবার পর্যন্ত ইসরায়েল বিমান থেকে বোমা মেরে এবং ট্যাংক থেকে গোলা ছুড়ে গাজা সিটির বেশ কয়েকটি আবাসিক ভবন ধ্বংস করেছে।
বিবিসির এক সাংবাদিক রবিবার সকালে ইসরায়েল সীমান্তবর্তী কিবুতজ বেইরি থেকে গাজার ভেতরে বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন এবং ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখতে পেয়েছেন।
হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় আরো ৬৫ জন নিহত হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সিবিএস নিউজকে বলেন, জিম্মি মুক্তির স্বার্থে বোমা হামলা বন্ধ করতে হবে। বোমা হামলা বন্ধ না হলে জিম্মিদের মুক্তি সম্ভব নয়। আগে সেটা বন্ধ করতে হবে, তারপর অন্য দিকগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা চাই, জিম্মিরা যত দ্রুত সম্ভব মুক্তি পাক।
২০ দফা শান্তি পরিকল্পনায় তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি এবং ৪৮ জন জিম্মি মুক্তির (যাদের মধ্যে মাত্র ২০ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে) বিনিময়ে বন্দি শত শত গাজাবাসীকে মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে।
নেতানিয়াহু শনিবার টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে বলেন, তিনি আশা করছেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই জিম্মিদের মুক্তির ঘোষণা দিতে পারবেন।
সরকারি মুখপাত্র বেড্রোসিয়ান বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে একটি চুক্তির আওতায় আলোচনা কয়েক দিনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে— এ কথা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। নেতানিয়াহু আলোচনার জন্য ইসরায়েলি প্রতিনিধিদলকে সোমবার মিশর যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
আর হামাসের প্রধান আলোচক খালিল আল-হাইয়া নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলের রবিবার রাতেই কায়রো পৌঁছানোর কথা। গত মাসে কাতারের দোহায় তাকে হত্যার চেষ্টায় বিমান হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।
মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ, ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার এবং কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুলরহমান আল থানি এই আলোচনায় অংশ নেবেন।
বিবিসি লিখেছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এই আলোচনা সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে এবং এর মধ্য দিয়েই যুদ্ধ অবসানের পথ খুলে যেতে পারে।
অনেক ফিলিস্তিনি বলছেন, শান্তি পরিকল্পনা প্রশ্নে হামাসের প্রতিক্রিয়া ছিল অপ্রত্যাশিত। কারণ ট্রাম্পের প্রস্তাব সংগঠনটি প্রত্যাখ্যান করবে, না হলে কঠিন শর্ত আরোপ করবে বলে কয়েকদিন ধরে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল।
হামাস তাদের কট্টর অবস্থানের বিষয়গুলো দাপ্তরিক বিবৃতিতে অন্তর্ভুক্ত করেনি, যা বাহ্যিক চাপের ফল হিসেবে দেখছেন অনেকে।
জ্যেষ্ঠ এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, কাতার, মিশর ও তুরস্কের মধ্যস্থতাকারীরা হামাসের আপত্তি কমাতে এবং তাদের অস্ত্রের ভবিষ্যত, যুদ্ধ-পরবর্তী গাজার শাসনব্যবস্থাসহ অন্যান্য উদ্বেগের বিষয়ে আলোচনার টেবিলে বসার প্রশ্নে রাজি করাতে বড় ভূমিকা রেখেছেন।
তবে গাজার অনেক বাসিন্দা মনে করছেন, এই কৌশলগত নমনীয়তা যথেষ্ট ঝুঁকি বহন করে। প্রতিটি অতিরিক্ত দিন বিলম্বের মানে হচ্ছে লাখ লাখ গাজাবাসীর জন্য মৃত্যু, ধ্বংস ও বাস্তুচ্যুতি।
তবে বিবিসি লিখেছে, স্পষ্ট কোনো শর্তারোপ না করেই আলোচনায় অংশ নেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে হামাস, তাকে দুই বছর যুদ্ধের পর তাদের দুর্বল হয়ে পড়ার স্বীকারোক্তি হিসেবেও দেখা যেতে পারে।
সিএনএনের সাংবাদিক জ্যাক ট্যাপার প্রশ্ন করেছিলেন, হামাস যদি গাজার ক্ষমতা ছাড়তে অস্বীকার করে, তাহলে কী হবে? ট্রাম্প ক্ষুদে বার্তায় উত্তর দেন, তাদের সম্পূর্ণ ধ্বংস করা হবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট সোশাল মিডিয়ায় বলেন, প্রাথমিকভাবে গাজা থেকে কিছু সেনা প্রত্যাহারের সম্মত হয়েছে ইসরায়েল; তা হবে ধাপে ধাপে সেনা প্রত্যাহারের সূচনা।
তবে ট্রাম্প প্রকাশিত গাজার জনমিতি নির্ভর মানচিত্র অনুযায়ী, প্রায় নয় লাখ ফিলিস্তিনি তাদের ঘরে ফিরতে পারবেন না।
এ প্রস্তাবে গাজার দক্ষিণ প্রান্তের রাফা, উত্তরের বেইত হানুন ও বেইত লাহিয়া, গাজা সিটির এক চতুর্থাংশ, এবং খান ইউনিস ও দেইর আল-বালাহের প্রায় অর্ধেক অংশকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
হামাস এমন একটি মানচিত্র মার্চ ও মে মাসে আলোচনার সময় প্রত্যাখ্যান করেছিল।
দক্ষিণ ইসরায়েলে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস নেতৃত্বাধীন হামলায় প্রায় এক হাজার ২০০ জন নিহত হন এবং জিম্মি হন ২৫১ জন। এর জবাবে গাজায় যুদ্ধ শুরু করে ইসরায়েল। এরপর থেকে ইহুদি দেশটির হামলায় গাজায় ৬৭ হাজার ১৩৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
বিবিসি লিখেছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে গাজায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, ফলে উভয় পক্ষের দাবি যাচাই করা কঠিন। এই মুহূর্তে পুরো অঞ্চল এক ধরনের অপেক্ষার প্রহর গুনছে। মধ্যস্থতাকারীরা মিশরে এই আশায় জড়ো হচ্ছে যে, এবারই হয়তো যুদ্ধবিরতি প্রশ্নে একটি বাস্তবসম্মত পথ খুলতে পারে।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com