আজ হোয়াইট হাউজে বসছেন ট্রাম্প-জেলেনস্কি, থাকছেন ইইউ’র নেতারা
ট্রাম্প-পুতিন-জেলেনস্কি ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে বসবেন ২২ আগস্ট?
প্রকাশ : ১৮-০৮-২০২৫ ১১:৪১

ছবি : সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের সম্ভাব্য পথ খুঁজতে বিশ্বজুড়ে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে নিয়ে একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে; যা আগামী ২২ আগস্ট, শুক্রবার অনুষ্ঠিত হতে পারে।
গত শুক্রবার আলাস্কায় পুতিন ও ট্রাম্পের মধ্যে সরাসরি বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের উপায় নিয়ে আলোচনা এগিয়ে যায়। ওই বৈঠকে যুদ্ধ বন্ধে কোনো চূড়ান্ত চুক্তি না হলেও, উভয় নেতা একটি প্রাথমিক সমঝোতায় পৌঁছানোর আভাস দেন। এরপর হোয়াইট হাউসে আজ সোমবার (১৮ আগস্ট) ট্রাম্প-জেলেনস্কি বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যেখানে যোগ দিচ্ছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কয়েকজন শীর্ষ নেতা- যাদের মধ্যে রয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো, জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস এবং ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন।
এই কূটনৈতিক উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো ইউক্রেন সংঘাতের স্থায়ী সমাধানে সম্মত হওয়া। তবে রাশিয়ার পক্ষ থেকে পূর্ব ইউক্রেনের কিছু ভূখণ্ড দাবি করা এবং ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের সম্ভাবনা নিয়ে জটিলতা এখনো আলোচনার বড় বাধা হিসেবে রয়েছে। ট্রাম্প একাধিকবার বলেছেন, ইউক্রেনের উচিত রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তিতে যাওয়া, কারণ রাশিয়া একটি বড় শক্তি। অন্যদিকে জেলেনস্কি জানিয়েছেন, রাশিয়ার সদিচ্ছা না থাকলে কোনো স্থায়ী শান্তি সম্ভব নয়।
বিশ্লেষকদের মতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সবচেয়ে ভয়াবহ এই সংঘাত থামাতে বিশ্বশক্তিগুলো কার্যকর মধ্যস্থতার দিকে এগোচ্ছে। আজকের হোয়াইট হাউস বৈঠক এবং আসন্ন ২২ আগস্টের সম্ভাব্য ত্রিপক্ষীয় সম্মেলন সেই চেষ্টারই নতুন ধাপ; যা ইউক্রেন যুদ্ধের গতিপথ বদলে দিতে পারে।
আগামী ২২ আগস্ট, শুক্রবার ট্রাম্প, পুতিন ও জেলেনস্কি সঙ্গে একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করতে চান বলে জানিয়েছে মার্কিন অ্যাক্সিওস পোর্টাল সূত্র।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ডোনাল্ড ট্রাম্প ২২ আগস্টের মধ্যে রাশিয়ান এবং ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টদের সঙ্গে একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করার লক্ষ্যে কাজ করছেন।
এর আগে গত শুক্রবার আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে আলোচনার পর ট্রাম্প ইউরোপীয় নেতাদের ফোনে একই কথা জানান যে, শিগগিরই একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের ব্যবস্থা করতে চান। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে গত শুক্রবার হওয়া বৈঠক ট্রাম্প-পুতিন- দুই নেতার মধ্যে প্রথম মুখোমুখি বৈঠক। ২০০৭ সালের পর এটি ছিল মার্কিন মাটিতে পুতিনের প্রথমবারের মতো কোনো প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা।
আজ সোমবার হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের দেখা করার কথা রয়েছে। সেখানে তিনি ইউরোপীয় নেতাদেরও যোগদানের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
এদিকে, আলাস্কা শীর্ষ সম্মেলনের পর এক সংবাদ সম্মেলনে পুতিন বলেন, তিনি এবং ট্রাম্প একটি ‘বোঝাবুঝিতে’ পৌঁছেছেন।
ট্রাম্প তার পক্ষ থেকে বলেছেন, তারা ‘কিছুটা অগ্রগতি’ হয়েছে, কিন্তু চলমান ইউক্রেন সংঘাতের অবসান ঘটাতে কোনো চুক্তিতে পৌঁছাননি।
এদিকে, ২২ আগস্ট প্রস্তাবিত বৈঠকে অংশগ্রহণের বিষয়টি পুতিন এখনো প্রকাশ্যে নিশ্চিত করেননি।
সম্মেলনে ইউক্রেন নিয়ে কোনো চুক্তি না হলেও পুতিন শীর্ষ সম্মেলনের পর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন যে, তিনি এবং ট্রাম্প একটি সমঝোতায় পৌঁছেছেন।
অন্যদিকে, ট্রাম্প তার পক্ষ থেকে বলেছেন, তারা কিছুটা অগ্রগতি করেছেন তবে স্বীকার করেছেন যে চলমান সংঘাতের অবসান ঘটাতে তারা কোনো চুক্তিতে পৌঁছাননি।
তবে চুক্তির বিষয়টি এখন ইউক্রেনের ওপর নির্ভর করছে বলেও জানিয়েছেন ট্রাম্প।
আজ হোয়াইট হাউজে জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন ট্রাম্প: ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আজ সোমবার হোয়াইট হাউজে ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন ইউরোপীয় নেতারা।
বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশের নেতারা বলেছেন, তারা হোয়াইট হাউজের বৈঠকে যোগ দেবেন। এর মধ্যে আছেন- ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো, জার্মানির ফ্রিডরিশ মের্ৎস এবং ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লিয়েনও।
গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা রাজ্যের সামরিক ঘাঁটিতে পুতিনের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠক করেন ট্রাম্প। পরদিন ট্রাম্প জেলেনস্কিকে সোমবার হোয়াইট হাউজে বৈঠক করার আমন্ত্রণ জানান।
বৈঠক করতে হোয়াইট হাউজে যাচ্ছেন জেলেনস্কি। ওদিকে, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডন্টে উরসুলা ফন ডার লিয়েনও জানিয়েছেন, তিনি ও অন্যান্য ইউরোপীয় নেতারাও সোমবার হোয়াইট হাউজে যাচ্ছেন।
তবে কোন কোন নেতারা হোযাইট বৈঠকে যোগ দেবেন তা নির্দিষ্ট করে জানাননি তিনি। লিয়েন এক্সে বলেন, রবিবার বিকালে আমি ব্রাসেলসে জেলেনস্কিকে আমন্ত্রণ জানাব। আমরা একসঙ্গে ‘কোয়ালিশন অব উইলিং’ এ অংশ নেব।
এরপর জেলেনস্কির অনুরোধে আমি সোমবার হোয়াইট হাউজে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও অন্যান্য ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দেব।
বিবিসি’র এক সংবাদদাতা লিখেছেন, ইউরাপীয় নেতারা ট্রাম্পকে এটিই দেখানোর চেষ্টা করছেন যে তিনি যে শান্তিচুক্তি করতে চাইছেন সেটির জন্য ইউরোপ গুরুত্বপূর্ণ।
হোয়াইট হাউজের বৈঠকে বসার আগে রবিবার ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের নেতারা জেলেনস্কি এবং অন্যান্য মিত্রদের সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ফোনে কথা বলেন।
পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের শুক্রবারের আলাস্কার বৈঠক ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের চুক্তিতে পৌঁছতে ব্যর্থ হওয়ার পর এবার জেলেনস্কি এবং ইউরোপীয় নেতাদের নিয়ে এই বৈঠক হতে যাচ্ছে।
ট্রাম্প ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি নয় বরং একটি স্থায়ী শান্তি চুক্তিতে পৌঁছতে চাইছেন। ট্রাম্প সম্ভবত বৈঠকে জেলেনস্কির কাছে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তির একটি প্রস্তাব দেবেন।
জার্মান সরকার এক বিবৃবিতে বলেছে, চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস সোমবার হোয়াইট হাউজের বৈঠকে যোগ দিতে ওয়াশিংটন যাবেন।
চ্যান্সেলরের মুখপাত্র বলেন, আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠকের পর ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎসের এই বৈঠকে ট্রাম্পের সঙ্গে তথ্য আদান প্রদান হবে। বৈঠকে বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে ম্যার্ৎস শান্তি প্রচেষ্টার অবস্থা নিয়ে আলোচনা করবেন এবং ইউক্রেনে দ্রুত একটি শান্তিচুক্তি হওয়ার বিষয়ে জার্মানির আগ্রহের বিষয়টি তুলে ধরবেন। আলোচনায় অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে স্থান পাবে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা, ভুমি সংক্রান্ত বিষয় এবং রাশিয়ার আগ্রাসনের মুখে ইউক্রেনের সুরক্ষায় তাদেরকে অবিরাম সমর্থন দিয়ে যাওয়ার বিষয়টি। এর মধ্যে আছে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার চাপ বহাল রাখার বিষয়টিও।
সংকট সমাধানে আমাদের আরো কাছে এনেছে-পুতিন: পুতিন সতর্ক আশাবাদ প্রকাশ করে বলেছেন, আলাস্কায় অনুষ্ঠিত শীর্ষ বৈঠক ইউক্রেন যুদ্ধের সমাধানের ক্ষেত্রে ‘আমাদের আরো কাছে নিয়ে এসেছে।’ তিনি আরো জানান, মস্কো ও ওয়াশিংটন যত দ্রুত সম্ভব শত্রুতার অবসান ঘটাতেও একমত হয়েছে।
গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঙ্গরাজ্যের অ্যাঙ্কোরেজ শহরে প্রায় তিন ঘণ্টা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে পুতিনের ওই বৈঠক হয়। প্রেসিডেন্ট পুতিন গত শনিবার বলেছেন, আলাস্কায় তার সফর ‘সময়োপযোগী ও যথেষ্ট ফলপ্রসূ’ হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘আলোচনা খুবই খোলামেলা ও বিষয়ভিত্তিক ছিল। আমার মতে, এটি আমাদের প্রয়োজনীয় সমাধানের দিকে আরো কাছে নিয়ে গেছে।’
রুশ প্রেসিডেন্ট জানান, আলোচনায় উভয় পক্ষের সম্পর্কের প্রায় সব দিকই উঠে এসেছে। তবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ‘ন্যায্য ভিত্তিতে ইউক্রেন সংকটের সম্ভাব্য সমাধান’ প্রসঙ্গে।
রুশ প্রতিনিধিদল আবারো শান্তভাবে ও বিস্তারিতভাবে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরার সুযোগ পেয়েছে বলেও জানান পুতিন। সেই সঙ্গে ইউক্রেন সংকটের ‘উৎপত্তি ও কারণ’ নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
পুতিন জোর দিয়ে বলেন, ‘সংকট সমাধানে অবশ্যই এর মূল কারণগুলো দূর করা জরুরি।’ মস্কো ট্রাম্প প্রশাসনের মতোই যত দ্রুত সম্ভব শত্রুতার অবসান চায় এবং সেটা ‘শান্তিপূর্ণ উপায়ে’ হওয়া উচিত, যোগ করেন তিনি।
আলাস্কা বৈঠকের পর মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড ট্রাম্পও একই সুরে বলেন, তার সঙ্গে রুশ নেতার আলোচনা ছিল ‘উষ্ণ’ এবং তাদের মধ্যে ‘অনেক বিষয়ে মতৈক্য’ হয়েছে।
ট্রাম্পের ভাষায়, ওয়াশিংটন ও মস্কো ইউক্রেন যুদ্ধ ‘সমাপ্তির খুব কাছাকাছি’ পৌঁছেছে। তবে যেকোনো শান্তিচুক্তিতে ইউক্রেনের সম্মতি অবশ্যই লাগবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট স্বীকার করেন, এখনো ‘দুই-একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের’ সমাধান করা বাকি রয়েছে। তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন, সেগুলোও শিগগির মিটে যাবে।
পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্পও মনে করেন, যুদ্ধের অবসান শুধু একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে নয়, বরং স্থায়ী এক চুক্তির মাধ্যমেই হতে হবে।
অন্যদিকে ইউক্রেন ও তাদের ইউরোপীয় মিত্ররা কয়েক মাস ধরে বলে আসছে, শান্তি আলোচনায় বসার আগে অন্তত সাময়িক যুদ্ধবিরতি জরুরি। রাশিয়া সরাসরি এ প্রস্তাব বাতিল না করলেও বলেছে, এতে গুরুতর বাধা রয়েছে। তার যুক্তি, এতে কিয়েভ আরো পশ্চিমা অস্ত্র সংগ্রহের সুযোগ পাবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত সেনাদলকে পুনর্গঠিত করতে পারবে।
ক্রেমলিনের অবস্থান, ইউক্রেনকে অবশ্যই ন্যাটোর বাইরে থাকার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে এবং কার্যক্ষেত্রে তৈরি হওয়া নতুন ভূখণ্ডগত বাস্তবতাও স্বীকার করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে ক্রিমিয়া, দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চল-এগুলো গণভোটের মধ্য দিয়ে রাশিয়ার অংশ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করে। বিশ্লেষকদের মতে, ইউরোপে গত ৮০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী যুদ্ধ এটা। উভয় পক্ষে ১০ লাখের বেশি মানুষ হতাহত হয়েছেন। এর মধ্যে ইউক্রেনের হাজারো বেসামরিক মানুষ রয়েছেন।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com