নয় সন্তানের পর স্বামীকেও হারালেন গাজার সেই নারী চিকিৎসক
প্রকাশ : ০২-০৬-২০২৫ ১৬:১৮

ছবি : সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
গাজার খান ইউনিসে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নয় সন্তান হারানো ফিলিস্তিনি নারী চিকিৎসক আলা আল-নাজ্জার এবার হারালেন তার স্বামীকেও। গত ২৪ মে রাতে আল-নাজ্জারের বাসভবনে চালানো ওই হামলায় তার স্বামী হামদি আল-নাজ্জার মারাত্মক আহত হন। তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার (১ জুন) মারা যান। হামদি আল-নাজ্জারও পেশায় একজন চিকিৎসক ছিলেন।
তুরস্কভিত্তিক বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি জানিয়েছে, গাজার সিভিল ডিফেন্সের ভাষ্যমতে, হামলায় আলা আল-নাজ্জারের নয় সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। হামলার পর সাত সন্তানের মরদেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয় বাকি দুই সন্তানের মরদেহ। তার একমাত্র জীবিত সন্তান আদমও গুরুতর আহত হয়ে বর্তমানে চিকিৎসাধীন।
হামলার সময় আলা আল-নাজ্জার নিজে নাসের মেডিক্যাল কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে দায়িত্ব পালন করছিলেন। বাড়িতে রেখে এসেছিলেন নিজের নয় সন্তান ও স্বামীকে। তখনও তার জানা ছিল না, ইসরায়েলি ড্রোন হামলা তার পুরো পরিবারকে এক সঙ্গে ধ্বংস করে দিতে যাচ্ছে। এই হামলা নিয়ে তদন্তের ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। তবে এর আগের বহু ঘটনার মতো এবারো এই তদন্তের ফলাফল নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে সন্দেহ রয়েছে।
নাসের হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আহমদ আল-ফারা জানান, সন্তানদের হত্যার খবরে ভেঙে পড়ার বদলে আলা আল-নাজ্জার নিজেকে সামলে নিয়েছেন, দায়িত্ব পালন করে গেছেন নিরলসভাবে। হাসপাতালের প্রতিটি কক্ষে, ওয়ার্ডে, আহত শিশুর শয্যার পাশে তাকে দেখা গেছে পরম মমতায়। মাঝেমধ্যে ছুটে গেছেন আহত স্বামী ও সন্তানের খোঁজ নিতে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ইউসুফ আবু আল-রিশ বলেন, আলা যখন হাসপাতাল পৌঁছান, তখন তার চোখেমুখে ছিল ভয়াবহ বেদনার ছাপ। কিন্তু কোনো হাহাকার ছিল না, কান্না ছিল না। ছিলেন নিঃশব্দ, শান্ত। আল-রিশ বলেন, তিনি শুধু বলছিলেন, আল্লাহ, আমাকে মাফ করো। আমি নিজের সন্তানদের বাড়িতে রেখে এসেছি, কিন্তু এসেছি অসুস্থ শিশুদের ডাক পেয়ে।
৩৮ বছর বয়সী আলা আল-নাজ্জার পেশাগতভাবে একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ। কিন্তু গাজায় যুদ্ধ পরিস্থিতিতে তিনি শিশুবিভাগ ছেড়ে জরুরি বিভাগে যুক্ত হয়েছেন। তাকে প্রতিদিনই অসংখ্য আহত শিশুদের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। নিজের সন্তানদের হারিয়ে ফেলার পরও মানবিক দায়িত্ব থেকে তিনি পিছু হটেননি।
এই নারীর গল্প এখন শুধু গাজার নয়, গোটা বিশ্বের মানবতার সামনে এক নিদর্শন হয়ে উঠেছে। যুদ্ধে নিহত পরিবারের সদস্যদের শোক বুকে চেপে, জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে মৃত্যুর ছায়া উপেক্ষা করে কীভাবে একজন চিকিৎসক মানুষের পাশে দাঁড়ান, সেই প্রশ্নের উত্তর যেন হয়ে উঠেছেন আলা আল-নাজ্জার।
তিনি যেন এক জীবন্ত উদাহরণ— গাজার ধ্বংসস্তূপের মধ্যেও কীভাবে আশার আলো জ্বলে থাকে, কীভাবে একজন মা, একজন চিকিৎসক হার না মেনে লড়াই করে যান মানুষ বাঁচানোর জন্য।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com