পার্বত্য চুক্তির ২৮ বছর : এখনো ফেরেনি শান্তি
প্রকাশ : ০২-১২-২০২৫ ১২:০৫
ছবি : সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৮ বছর পূর্ণ হলো মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর)। দুই যুগের অধিক সময় ধরে চলা রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংঘাত নিরসন এবং স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) মধ্যে চুক্তিটি সই হয়।
তবে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি সমস্যা সমাধানসহ চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো আজও বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে সংঘাত, পারস্পরিক সন্দেহ ও অবিশ্বাসের পাল্লা দিনের পর দিন ভারি হয়েছে। পাহাড়ে ফেরেনি শান্তি। এ অবস্থায় সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অবিলম্বে বাতিল বা সংবিধানসম্মত উপায়ে পুনর্মূল্যায়নের দাবি উঠেছে।
চুক্তির বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জেএসএসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চুক্তি স্বাক্ষরের পর পাঁচটি রাজনৈতিক সরকার এবং দুটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা পেলেও চুক্তি বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছা নিয়ে এগিয়ে আসেনি কেউ।
এমনকি চুক্তি স্বাক্ষরকারী আওয়ামী লীগ সরকার বড় সময় হাতে পেলেও চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়নে এগিয়ে আসেনি। একের পর এক প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে স্তব্ধ করে রাখে। ফলে ২৮ বছর পরও চুক্তির মৌলিক বিষয়সহ দুই-তৃতীয়াংশ ধারা অবাস্তবায়িত।
চুক্তির অবাস্তবায়িত মৌলিক বিষয়গুলো হচ্ছে– পার্বত্য চট্টগ্রামকে উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণের জন্য আইনি ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ; পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশেষ শাসন ব্যবস্থার অধীনে প্রতিষ্ঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের কাছে প্রশাসনিক ক্ষমতা ন্যস্ত করা; ভোটার তালিকা তৈরি করে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদ নির্বাচন; পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়ে পার্বত্য পুলিশ বাহিনী গঠন; ভূমি কমিশনের মাধ্যমে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি করে জুম্মদের বেহাত হওয়া জায়গাজমি ফেরত দেওয়া এবং এ লক্ষ্যে ভূমি কমিশনের বিধিমালা প্রণয়ন করা।
বিবৃতিতে বলা হয়, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার চুক্তি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনকে। তাছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মুহাম্মদ আব্দুল হাফিজকে নিয়োগ দেওয়া হয়। পাঁচ মাসে পরিবীক্ষণ কমিটির একটি সভা হলেও সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অগ্রগতি নেই।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের পার্বত্যাঞ্চল শাখার সাধারণ সম্পাদক ইন্টুমনি তালুকদার বলেন, পাহাড়ের মূল সমস্যা ভূমি। এক লাখের অধিক অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু ও ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী জমি ফেরত পায়নি। তারা ভিটাতেই ফিরতে পারেনি।
জেএসএস কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদার বলেন, আগামীর নির্বাচিত সরকারকে চুক্তি বাস্তবায়নে উদার মনে এগিয়ে আসতে হবে। চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ (পিসিএনপি) সোমবার সংবাদ সম্মেলনে কয়েকটি দাবি তুলে ধরেছে। দাবিগুলো হলো- সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অবিলম্বে বাতিল বা সংবিধানসম্মত উপায়ে পুনর্মূল্যায়ন করে সংশোধন করতে হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী সব নাগরিকের জন্য সমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ভূমি অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। পাহাড়ে সক্রিয় সব সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অবৈধ অস্ত্র জব্দ করে তাদের নির্মূল করতে হবে। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে পার্বত্য অঞ্চলে প্রত্যাহার করা নিরাপত্তা বাহিনীর সব ক্যাম্প পুনঃস্থাপন করতে হবে।
সংসদ নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলো ইশতেহারে অগ্রাধিকার হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করাসহ তিন দফা দাবি জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন। সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান সংগঠনটির নেতারা।
এ সময় তারা চুক্তি বাস্তবায়নে সম্মিলিত বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তাদের অন্য দাবি হলো- চুক্তি বাস্তবায়নে জাতীয় সংলাপ আয়োজন এবং কার্যকর রোডম্যাপ ঘোষণা ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com