প্রতিবাদ জানাতে ডিম ছুঁড়ে মারা হয় কেন?
প্রকাশ : ২৩-০৯-২০২৫ ১২:৪২

ছবি : সংগৃহীত
পিপলসনিউজ ডেস্ক
ডিম একটি সাধারণ খাবার। কিন্তু রাজনীতি ও প্রতিবাদের মঞ্চে বহুবার এটি পরিণত হয়েছে প্রতীকী অস্ত্রে। ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, নানা সময় ভিন্ন ভিন্ন কারণে রাজনীতিবিদদের দিকে ক্ষোভ প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে মানুষ ডিম ছুড়ে মেরেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও দেখা গেছে ডিম ছোড়ার প্রবণতা।
বিপক্ষ নেতাকর্মীদের ওপর কিংবা আদালত প্রাঙ্গনে আসামিদের ওপর ডিম নিক্ষেপের একের পর এক ঘটনা ঘটছে। তবে এই ডিম ছুড়ে প্রতিবাদ জানানো নতুন কোনো ঘটনা নয়। এর পেছনে রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস।
কথিত আছে, মধ্যযুগে বন্দীদের জড়ো করে শাস্তি হিসেবে তাদের ওপর ডিম নিক্ষেপ করা হত।
তবে লিখিতভাবে ডিম নিক্ষেপের কাহিনী পাওয়া যায় ১৮০০ সালের দিকে। সেই সময় ইংল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডের মাঝে অবস্থিত যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত স্বায়ত্বশাসিত দ্বীপাঞ্চল ‘আয়েল অফ ম্যান’য়ে মেথোডিস্ট’দের ওপর ডিম নিক্ষেপ করা হয়েছি। আর ১৮৩৪ সালে নিউ হ্যাম্পশায়ার’য়ের কনকোর্ড’য়ে মার্কিন কবি জর্জ হোয়াইটার দাসত্ব বিরোধী বক্তৃতা দেওয়ার সময়, তাকে লক্ষ্য করে ডিম ছোড়া হয়।
অস্ট্রেলিয়ায় ১৯১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী বিলি হিউজকে এক জনসভায় ডিম ছুঁড়ে আঘাত করা হয়েছিল।
দেশজুড়ে কনস্যক্রিপশন বিরোধী আন্দোলনের উত্তাপেই সেই ঘটনা ঘটে, যা পরে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিতর্ককে ঘনীভূত করেছিল। ব্রিটেনে ২০০১ সালে উপ-প্রধানমন্ত্রী জন প্রেসকটকে একজন তরুণ কৃষক ডিম নিক্ষেপ করলে প্রেসকট নিজেই ঘুষি মেরে প্রতিক্রিয়া দেখান। মুহূর্তটির ছবি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং ডিম ছোড়ার রাজনীতি নিয়ে আলোচনার জন্ম দেয়।
বর্তমান সময়েও ডিমে আক্রান্ত হয়েছেন অনেকে। এদের মধ্যে হলিউডের অভিনেতা আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার রয়েছেন।
২০০৩ সালে ক্যালিফোর্নিয়া’তে নিজের গভর্নর ভোটের প্রচারণা চালানো সময় তার দিকে ডিম নিক্ষেপ করা হয়। অবশ্য তিনি সিনেমার নায়কের মতোই নির্বিকার-ভাবে হাত দিয়ে ঝেরে ফেলে দেন ডিমটা। ২০০৪ সালে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ফেডোরোভিচ ইয়ানুকোভিচ, বিরোধীদের ছোড়া ডিমে আঘাত পেয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। ২০১১ সালে আফগানি বিক্ষোভকারীরা জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে ইরানি কন্স্যুলেটদের দিকে ডিম নিক্ষেপ করে। ২০১৩ সালে লন্ডনে একদল বিক্ষোভকারী, প্রয়াত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের কফিন ডিম দিয়ে পরিপূর্ণ করার হুমকি দেয়। যদিও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াতে চরম নিরাপত্তার কারণে সেটা তারা করতে পারেনি। একই বছর আগস্টে ডিমের দাম কমের যাওয়ার প্রতিবাদের অংশ হিসেবে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন’য়ের বিরূদ্ধে ফরাসি কৃষকরা রাস্তায় সপ্তাহ জুড়ে প্রতিদিন ১ লাখ ডিম ভাঙার শপথ নিয়েছিল।
এই বিষয়ে কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি’র রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক অ্যান্ড্রু গেলম্যান বলেন, প্রতিবাদ করতে গিয়ে খাবার ছুড়ে মারার কারণ হতে পারে- এটি সস্তা, সহজলভ্য এবং দৃশ্যমান। খাদ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট বোনাপিটিট ডটকম-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি ব্যাখ্যা করেন, টমেটো হালকা, নিক্ষেপ করা সহজ, দামও কম। ছুড়ে মারার পর ফেটে গেলে এক ধরনের আত্মতৃপ্তি জাগায়। ডিমের ক্ষেত্রেও বিষয়টা একই; ফেটে গিয়ে বিচ্ছিরি পরিস্থিতি তৈরি করে। খাবার ছুড়ে মারাকে সাধারণত অহিংস প্রতিবাদ হিসেবে দেখা হয়। যেমন- পুলিশের দিকে ঢিল ছুড়লে, তারা গুলি করতেও পারে। তবে ডিম বা টমেটো মারলে গুলি করাটা পুলিশদেরকে ‘ফুলিশ’ হিসেবেই চিহ্নিত করা হবে। তাই আমার মনে হয় এই খাবার ছুড়ে মারার একটা প্রতীকী মূল্য রয়েছে।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com