বিশৃঙ্খলার মধ্যেই বেলেমের কপ-৩০ সম্মেলন সমাপ্ত
প্রকাশ : ২৩-১১-২০২৫ ১৩:৩০
ছবি : সংগৃহীত
সিনিয়র রিপোর্টার
অস্থিরতা, প্রতিবাদ আর তীব্র সমালোচনার মধ্য দিয়ে ব্রাজিলের বেলেমে শেষ হলো জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন কপ-৩০। কিন্তু বৈশ্বিক উষ্ণতার সবচেয়ে বড় উৎস জীবাশ্ম জ্বালানি নিয়ে সরাসরি কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত চুক্তিতে স্থান পায়নি। ফলে যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ৮০টির বেশি দেশ শেষ পর্যন্ত হতাশ হয়েই সম্মেলন ছাড়ল।
তেল-উৎপাদনকারী দেশগুলো তাদের পুরোনো অবস্থানেই অনড় ছিল— তাদের মতে, অর্থনৈতিক বিকাশ ধরে রাখতে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার চালিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। অথচ একই সময় জাতিসংঘ সতর্ক করে জানিয়েছে, প্রাক-শিল্পায়ন যুগের তুলনায় বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার লক্ষ্য এখন ভীষণভাবে ঝুঁকির মুখে।
শনিবারের (২২ নভেম্বর) চূড়ান্ত অধিবেশন ঘিরে উত্তেজনা আরো বাড়ে। কলম্বিয়ার প্রতিনিধি ড্যানিয়েলা দুরান গনজালেস অভিযোগ করেন, দেশগুলোকে আপত্তি জানানোর সুযোগই দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, বিশ্বের মোট গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের তিন-চতুর্থাংশের বেশি আসে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে— এ সত্য স্বীকার না করলে জলবায়ু সংকট মোকাবিলা অসম্ভব।
শেষ পর্যন্ত ঘোষণায় জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানোকে বাধ্যতামূলক নয়, বরং ‘স্বেচ্ছার ভিত্তিতে’ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এইবার সম্মেলনে অনুপস্থিত ছিল যুক্তরাষ্ট্র। ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নিয়ে আবারো প্যারিস চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন এবং জলবায়ু পরিবর্তনকে ‘প্রহসন’ বলে অভিহিত করেন। ফলে এবার কোনো মার্কিন প্রতিনিধিদল ছিল না। জার্মানির সাবেক জলবায়ুদূত জেনিফার মরগান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র না থাকায় আলোচনায় একটি স্পষ্ট শূন্যতা তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে যখন তেল–উৎপাদনকারী দেশগুলো কঠোর অবস্থানে থাকে।
তবু অনেকে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন যে কোনো দেশই আগের চুক্তি থেকে পিছিয়ে আসেনি। অ্যান্টিগা ও বারবুডার প্রতিনিধি রুলেটা থমাস বললেন, অন্তত প্রক্রিয়াটি চালু আছে— এটিও বড় বিষয়।
চূড়ান্ত সভায় সৌদি আরব জানায়, প্রত্যেক দেশের নিজস্ব অর্থনৈতিক বাস্তবতা অনুযায়ী পথ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা থাকা উচিত। অতীতে তেলের মজুদ ব্যবহার করেছে এমন দেশগুলোও একই যুক্তি তোলে।
সম্মেলন নিজেই নানা বিশৃঙ্খলার মধ্যে দিয়ে গেছে— কনফারেন্স সেন্টারে বন্যা, শৌচাগারে পানির সংকট, গরম ও আর্দ্রতায় ভোগা প্রতিনিধি, নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে বিক্ষোভকারীর প্রবেশ, এমনকি অগ্নিকাণ্ডে ছাদে ছিদ্র— সব মিলিয়ে পুরো আয়োজন ছিল অগোছালো।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা বেলেমকে আয়োজক শহর হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন আমাজন বনকে বিশ্বদৃষ্টিতে আনার জন্য। তবে ব্রাজিল নিজেরাই আমাজন অঞ্চলে তেল খননের পরিকল্পনা করছে— এ বিষয়েও দেশটি সমালোচনার মুখে পড়েছে। গ্লোবাল উইটনেসের তথ্য বলছে, ব্রাজিলে সামুদ্রিক তেল-গ্যাস উত্তোলন ২০৩০-এর প্রথম দিক পর্যন্ত বাড়বে।
যদিও সার্বিক সন্তুষ্টি নেই, তবু কিছু অগ্রগতির কথা বলছে কয়েকটি দেশ। ভারত একে ‘অর্থবহ চুক্তি’ বলছে। ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর জোট এটি ‘অসম্পূর্ণ হলেও এগিয়ে যাওয়া’ হিসেবে দেখছে। দরিদ্র ও জলবায়ু–ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো বরাবরের মতো আরও জলবায়ু অর্থায়ন চেয়েছে।
সিয়েরা লিওনের পরিবেশমন্ত্রী জিওহ আবদুলাই মন্তব্য করেছেন, যেসব ধনী দেশ অতীতে বেশি দূষণ করেছে, তাদের ওপর অতিরিক্ত দায়িত্ব স্বীকারের বিষয়টি এবার আরো স্পষ্ট হয়েছে।
ব্রাজিলের শুরু করা ‘উষ্ণমণ্ডলীয় বন সংরক্ষণ তহবিল’ উদ্যোগ অন্তত ৬.৫ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে। পাশাপাশি বন উজাড় বন্ধে নতুন বৈশ্বিক রোডম্যাপকে সমর্থন করেছে ৯০টির বেশি দেশ।
তবে সবশেষে সবচেয়ে বেশি প্রতিধ্বনি শোনা গেছে হতাশার সুর— বিশেষ করে সেই দেশগুলোর, যারা আশা করেছিল এই সম্মেলনেই জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানোর শক্তিশালী ঘোষণা আসবে।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com