weather ২৫.৯৯ o সে. আদ্রতা ৯৪% , মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫, ২১ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মনিকা বেলুচ্চির জীবন যেন সিনেমার চিত্রনাট্যের মতো

প্রকাশ : ৩০-০৯-২০২৫ ১২:১৫

ছবি : সংগৃহীত

বিনোদন ডেস্ক
বিশ্ব চলচ্চিত্রে এমন কিছু নাম আছে, যাদের চারপাশে সৌন্দর্য, প্রতিভা, বিতর্ক এবং আলোচনার আবহ একসঙ্গে ভেসে বেড়ায়। তাদের জীবন অনেকটা সিনেমার চিত্রনাট্যের মতো— যেখানে আছে শুরুর সংগ্রাম, অপ্রত্যাশিত বাঁক, প্রেম ও বিচ্ছেদ, সাফল্যের জয়যাত্রা এবং সমাজকে নাড়া দেওয়া বিতর্ক। এমনই এক নাম মনিকা বেলুচ্চি। ইতালির ছোট্ট শহর থেকে শুরু করে হলিউডের আন্তর্জাতিক অঙ্গন পর্যন্ত তার যাত্রা একেবারেই অনন্য।

১৯৬৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ইতালির উমব্রিয়া অঞ্চলের চিত্তা দি কাসতেল্লো শহরে জন্ম নেন মনিকা। রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে হলেও শৈশবেই তার মনে ছিল বড় হওয়ার স্বপ্ন। প্রথমে আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন দেখলেও জীবন তাকে নিয়ে আসে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক মঞ্চে। সৌন্দর্যের আকর্ষণ তাকে টেনে আনে ফ্যাশন দুনিয়ায়। মাত্র ১৩ বছর বয়সে তিনি স্থানীয় ফ্যাশন হাউসের হয়ে মডেলিং শুরু করেন। একসময় রেস্তোরাঁয় ওয়েট্রেস হিসেবে কাজ করতেন, কিন্তু বন্ধুরা পরামর্শ দিয়েছিল মডেলিং করলে অর্থ উপার্জনের সুযোগ বেশি। তাই আইনের পাঠ মাঝপথে থেমে গিয়ে তিনি স্থায়ীভাবে পা রাখেন মডেলিংয়ে।

১৯৮৮ সালে, মাত্র ২৪ বছর বয়সে মনিকা চলে আসেন ইতালির ফ্যাশন রাজধানী মিলানে। সেখানে এলিট মডেল ম্যানেজমেন্ট এজেন্সির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। উচ্চতায় পাঁচ ফুট নয় ইঞ্চি, রূপে-গুণে অনন্য তিনি খুব দ্রুতই আন্তর্জাতিক ফ্যাশন দুনিয়ায় নিজের জায়গা করে নেন। ডলচে অ্যান্ড গ্যাবানার মতো বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডের মুখ হয়ে ওঠেন তিনি। তার সৌন্দর্য ছিল স্নিগ্ধ ও আকর্ষণীয়, যা তাকে কেবল মডেল হিসেবেই নয়, পরবর্তীতে অভিনেত্রী হিসেবেও খ্যাতি এনে দেয়।

মডেলিংয়ের ঝলমলে দুনিয়া থেকে সিনেমার পর্দায় মনিকার যাত্রা শুরু হয় নব্বইয়ের দশকে। ১৯৯০ সালে ইতালীয় টেলিভিশন সিরিজে অভিনয়ের মাধ্যমে তার অভিনয় জীবন শুরু হয়। দুই বছর পর ১৯৯২ সালে তিনি পা রাখেন হলিউডে, ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলার পরিচালনায় ‘ড্রাকুলা’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে। যদিও চরিত্রটি ছোট ছিল, তবে এটি তাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি এনে দেয় এবং তার অভিনয় জীবনের জন্য নতুন দরজা খুলে দেয়।

তার ক্যারিয়ারের মোড় ঘোরানো কাজ ছিল ১৯৯৬ সালের ফরাসি চলচ্চিত্র দ্য অ্যাপার্টমেন্ট। এই সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে মনিকার শিল্পীসত্তা নতুনভাবে উন্মোচিত হয়। এখানেই তার সঙ্গে পরিচয় হয় ফরাসি অভিনেতা ভিনসেন্ট ক্যাসেলের, যিনি পরবর্তীতে হয়ে ওঠেন তার জীবনসঙ্গী। কিন্তু অভিনয়ে প্রকৃত উচ্চতায় পৌঁছান তিনি ২০০০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ম্যালেনা চলচ্চিত্রে।

ম্যালেনা ছিল ইতালীয় পরিচালক জিউসেপ টোরনাটোর এক অনবদ্য সৃষ্টি, যেখানে মনিকা অভিনয় করেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সিসিলির এক তরুণ বিধবার চরিত্রে। এই চরিত্রটি তাকে শুধু জনপ্রিয়ই করেনি, বরং বিশ্বব্যাপী একজন সিরিয়াস অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে। ছবিতে ম্যালেনার সৌন্দর্য তাকে যেমন মুগ্ধতার প্রতীক করেছে, তেমনি ঈর্ষা ও ঘৃণার কারণেও পরিণত করেছে। শহরের মানুষদের কটূক্তি, মিথ্যা অভিযোগ, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা— সবকিছুই তাকে ধীরে ধীরে নিঃসঙ্গ করে তোলে। সংলাপের চেয়ে তার নীরব অভিব্যক্তি দর্শকদের মনে গভীরভাবে দাগ কেটে যায়। বিশেষ করে চুল কেটে ফেলার দৃশ্যটি ছিল প্রতীকী, যেখানে দেখা যায়— এক নারী কীভাবে সমাজের চাপের কাছে ভেঙে পড়তে বাধ্য হয়। এই চরিত্রের মাধ্যমে মনিকা প্রমাণ করেছিলেন, তিনি শুধু সৌন্দর্যের প্রতীক নন, বরং গভীর মানবিক অনুভূতিকে পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম একজন শিল্পী।

তবে সাফল্যের সঙ্গে সঙ্গে বিতর্কও জড়িয়ে যায় তার ক্যারিয়ারে। ২০০২ সালে মুক্তি পাওয়া গ্যাসপার নোয় পরিচালিত ইররিভার্সিবল চলচ্চিত্র তাকে তীব্র আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসে। ছবির এক দীর্ঘ ও নির্মম ধর্ষণদৃশ্য দর্শকদের মধ্যে প্রবল প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। অনেক সমালোচক এই দৃশ্যকে অপ্রয়োজনীয় বলে আখ্যা দেন, তবে মনিকা বলেছিলেন, সিনেমাটির একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বার্তা আছে। তার জন্য এটি মানসিকভাবে অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ ছিল, কিন্তু তিনি সাহসের সঙ্গে তা সম্পন্ন করেন।

২০০৪ সালে তিনি হলিউডের ব্লকবাস্টার দ্য প্যাশন অব দ্য ক্রাইস্ট-এ মেরি ম্যাগদালিন চরিত্রে অভিনয় করেন। গাম্ভীর্য ও অনুভূতির সঙ্গে চরিত্রটি তিনি এমনভাবে ফুটিয়ে তোলেন যে দর্শকরা মুগ্ধ হন। এ ছাড়া ব্রাদারহুড অব দ্য উলফ, দ্য মেট্রিক্স সিরিজসহ একাধিক চলচ্চিত্রে তার উপস্থিতি সাড়া জাগায়।

মনিকার ব্যক্তিগত জীবনও পেশাগত জীবনের মতোই আলোচিত। তার প্রথম বিয়ে হয়েছিল ১৯৯০ সালে ইতালীয় ফটোগ্রাফার ক্লডিও কার্লোস বাসোর সঙ্গে, তবে চার বছর পর সেই সম্পর্কের ইতি ঘটে। এরপর ১৯৯৯ সালে তিনি ভিনসেন্ট ক্যাসেলকে বিয়ে করেন। তাদের সম্পর্ক চলচ্চিত্র জগতের অন্যতম আলোচিত দাম্পত্য জীবন ছিল। এই দম্পতির ঘরে জন্ম নেয় দুই কন্যা—দেভা ক্যাসেল ও লিওনি ক্যাসেল। কিন্তু ২০১৩ সালে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে, যা ভক্তদের কাছে ছিল এক দুঃখজনক অধ্যায়।

বিচ্ছেদের পর মনিকা নতুন সম্পর্কে জড়ান ফরাসি শিল্পী ও স্থপতি নিকোলাস লেফেভের সঙ্গে, তবে সেই সম্পর্কও দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। পরে বিখ্যাত পরিচালক টিম বার্টনের সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে তুমুল আলোচনা হয়। ভক্তরা দুজনকে এক অনন্য জুটি হিসেবে দেখলেও শেষ পর্যন্ত তাদের পথ আলাদা হয়ে যায়।

আজ মনিকার বয়স ৬০ বছর পূর্ণ হলো। তবু তিনি এখনো সৌন্দর্য, গ্ল্যামার এবং ক্যারিশমায় ভরপুর। শুধু তাই নয়, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করার ক্ষমতাও ধরে রেখেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি নেটফ্লিক্সের জনপ্রিয় সিরিজ কল মাই এজেন্ট-এ অভিনয় করে প্রমাণ করেছেন, তিনি এখনো সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।

মনিকা বেলুচ্চি শুধু সিনেমা বা মডেলিংয়ের জন্যই বিখ্যাত নন, বরং তিনি নিজেকে এক স্বাধীন নারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। নিজের শর্তে বাঁচার সাহস, সমাজের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে কাজ করার দৃঢ়তা এবং বয়সকে কেবল সংখ্যা হিসেবে দেখার মানসিকতা তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলেছে। তিনি তার কন্যাদের শিখিয়েছেন নিজের মতো করে জীবনকে ভালোবাসা ও সম্মান করার শিক্ষা।

তার জীবনকাহিনী আমাদের জানায়, একজন নারী একইসঙ্গে সুন্দর, সংবেদনশীল, শক্তিশালী এবং প্রতিবাদী হতে পারেন। মনিকা বেলুচ্চির প্রতিটি অধ্যায় যেন প্রমাণ করে, সত্যিকারের সৌন্দর্য কেবল শরীরে নয়, বরং সাহসে, আত্মবিশ্বাসে ও সংগ্রামে লুকিয়ে থাকে। তাই বলা যায়, মনিকা বেলুচ্চির জীবন আসলেই এক সিনেমাটিক গাঁথা— যেখানে প্রতিটি দৃশ্য, প্রতিটি মুহূর্ত দর্শকদের মুগ্ধ করে যায় বারবার।

পিপলসনিউজ/আরইউ

-- বিজ্ঞাপন --


CONTACT

ads@peoplenewsbd.com

চিকিৎসায় নোবেল পেলেন ৩ বিজ্ঞানী চিকিৎসায় নোবেল পেলেন ৩ বিজ্ঞানী গ্রেটা  থুনবার্গসহ ১৬৫ জন অভিযাত্রীকে গ্রিসে পাঠাচ্ছে ইসরায়েল গ্রেটা থুনবার্গসহ ১৬৫ জন অভিযাত্রীকে গ্রিসে পাঠাচ্ছে ইসরায়েল দায়িত্বে থাকা সরকারি চাকরিজীবীদের ভোটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে: সিইসি দায়িত্বে থাকা সরকারি চাকরিজীবীদের ভোটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে: সিইসি গাজা যুদ্ধ অবসানের প্রচেষ্টায় সম্পৃক্ত সবাইকে দ্রুত এগোতে বললেন ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা যুদ্ধ অবসানের প্রচেষ্টায় সম্পৃক্ত সবাইকে দ্রুত এগোতে বললেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের জয়পুরে হাসপাতালে আগুন, ৮ রোগীর মৃত্যু ভারতের জয়পুরে হাসপাতালে আগুন, ৮ রোগীর মৃত্যু