মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে দুঃখপ্রকাশ করলো বিবিসি
প্রকাশ : ১৪-১১-২০২৫ ১১:০৪
ছবি : সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে প্রচারিত ‘প্যানোরামা’ অনুষ্ঠানে তার ৬ জানুয়ারির বক্তব্য ভুলভাবে সম্পাদনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি। অবশ্য ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টি প্রতিষ্ঠানটি নাকচ করেছে। বিবিসি জানায়, সম্পাদিত অংশটি এমন একটি ‘ভুল ধারণা’ তৈরি করেছিল, যেন ট্রাম্প সরাসরি সহিংসতার আহ্বান জানিয়েছেন। এ কারণে ২০২৪ সালের ওই পর্বটি আর দেখানো হবে না।
ট্রাম্পের আইনজীবীরা অভিযোগ করেছেন, বক্তব্য কাটাছেঁড়া করে উপস্থাপনের মাধ্যমে বিবিসি তাকে মানহানির মুখে ফেলেছে। এজন্য এক বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি করে তারা বিবিসির বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দিয়েছেন। বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ার পর বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি এবং নিউজ প্রধান ডেবোরা টার্নেস পদত্যাগ করেন। এ নিয়ে বিবিসি হোয়াইট হাউসের মন্তব্যও চেয়েছে।
দুঃখ প্রকাশের কয়েক ঘণ্টা আগে আরেকটি একই ধরনের সম্পাদনার ঘটনা সামনে আসে। ডেইলি টেলিগ্রাফ জানায়, ২০২২ সালে ‘নিউজনাইট’-এ প্রচারিত আরেকটি প্রতিবেদনেও ট্রাম্পের বক্তব্য একইভাবে জোড়া লাগানো হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় প্রকাশিত বিবিসির ‘করেকশনস অ্যান্ড ক্ল্যারিফিকেশনস’ অংশে বলা হয়, সমালোচনার পর প্যানোরামা পর্বটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে সম্পাদনা এমনভাবে করা হয়েছিল যাতে বক্তৃতার বিভিন্ন অংশ একই ধারাবাহিক বক্তব্য হিসেবে উপস্থাপিত মনে হয়। এতে ট্রাম্প সহিংসতার আহ্বান জানিয়েছেন— এমন ভুল ধারণা সৃষ্টি হয়।
বিবিসির আইনজীবীরা জানান, তারা ট্রাম্পের আইনজীবীদের পাঠানো চিঠির জবাব দিয়েছেন। পাশাপাশি বিবিসি চেয়ারম্যান সামির শাহ আলাদাভাবে হোয়াইট হাউসে চিঠি পাঠিয়ে এই সম্পাদনার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
বিবিসি বলেছে, তারা ভিডিও সম্পাদনার ধরন নিয়ে দুঃখিত হলেও মানহানির অভিযোগের কোনো ভিত্তি আছে বলে মনে করে না। ট্রাম্প কীভাবে মামলা করতে চান এবং যুক্তরাষ্ট্রের আইনে এর যুক্তি কতটা শক্ত— এ নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
ট্রাম্প তার বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘আমরা ক্যাপিটলের দিকে হাঁটব এবং আমাদের সেনেটর ও কংগ্রেস সদস্যদের উৎসাহ দেব।’ প্রায় ৫০ মিনিট পর তিনি বলেন, ‘আর আমরা লড়াই করি। আমরা নরকের মতো লড়াই করি।’ কিন্তু প্যানোরামা প্রতিবেদনে এটি দেখানো হয়— ‘আমরা ক্যাপিটলে হাঁটতে যাচ্ছি… আর আমি তোমাদের সঙ্গে থাকব। আর আমরা লড়াই করি। আমরা নরকের মতো লড়াই করি।’
ফক্স নিউজে ট্রাম্প বলেন, তার বক্তৃতাকে ‘কেটে-ছেঁটে নষ্ট’ করা হয়েছে এবং এভাবে দেখানো দর্শকদের ‘প্রতারণা’ করার সমান। তার আইনজীবীদের পাঠানো চিঠিতে পুরো প্রতিবেদন প্রত্যাহার, প্রকাশ্যে ক্ষমা এবং ক্ষতিপূরণের দাবি জানানো হয়। শুক্রবার রাত ১০টার মধ্যে মধ্যে বিবিসিকে জবাব দিতে বলা হয়।
বিবিসি তাদের জবাবে পাঁচটি যুক্তি তুলে ধরে কেন তারা এটিকে মানহানির মামলা হিসেবে দেখছে না। প্রথমত, প্যানোরামা পর্বটি যুক্তরাষ্ট্রে প্রচারিত হয়নি এবং বিবিসি আইপ্লেয়ারে শুধু যুক্তরাজ্যের দর্শকদের জন্য সীমিত ছিল। দ্বিতীয়ত, এই প্রচার ট্রাম্পকে কোনো ক্ষতি করেনি, কারণ এর পরপরই তিনি পুনর্নির্বাচিত হন।
তৃতীয়ত, সম্পাদনার উদ্দেশ্য বিভ্রান্ত করা নয়, বরং দীর্ঘ বক্তৃতার সংক্ষিপ্ত উপস্থাপন এবং এতে কোনো বিদ্বেষ ছিল না। চতুর্থত, ওই সম্পাদিত ১২ সেকেন্ড পুরো ঘণ্টাব্যাপী প্রতিবেদনের ক্ষুদ্র অংশ, যেখানে ট্রাম্পের সমর্থকদের বক্তব্যও ছিল। শেষত, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে রাজনৈতিক বিষয়ে মতপ্রকাশ ব্যাপকভাবে সুরক্ষিত এবং এটি মানহানির আওতায় পড়ে না।
বিবিসির ভেতরে একটি শক্ত ধারণা তৈরি হয়েছে যে, তারা যে প্রতিরক্ষা দাঁড় করিয়েছে তা যথেষ্ট শক্ত এবং টেকসই। একই দিন টেলিগ্রাফ আরো একটি দাবি তোলে— ২০২২ সালের ‘নিউজনাইট’-এর প্রতিবেদনে ট্রাম্পের সেই দিনের বক্তব্য আরও ভিন্নভাবে জোড়া লাগানো হয়েছিল।
সেখানে ট্রাম্পকে বলা দেখানো হয়— ‘আমরা ক্যাপিটলে হাঁটব। আর আমাদের সেনেটর ও কংগ্রেস সদস্যদের উৎসাহ দেব। আর আমরা লড়াই করি। আমরা নরকের মতো লড়াই করি। আর যদি তোমরা নরকের মতো লড়াই না করো, তবে এই দেশের অস্তিত্ব থাকবে না।’ এরপর ভয়েসওভারে বলা হয়, ‘আর তারা লড়াই করেছিল’ এবং দাঙ্গার দৃশ্য দেখানো হয়।
সেদিনের অনুষ্ঠানে ট্রাম্পের সাবেক চিফ অফ স্টাফ মিক মুলভেনি বলেন, ভিডিওটি বক্তৃতার অংশগুলোকে একত্র করে এমন একটি ধারাবাহিকতা তৈরি করেছে যা প্রকৃত বক্তব্যে ছিল না। টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনের পর বিবিসি জানায়, তারা সর্বোচ্চ সম্পাদনাগত মান বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ট্রাম্পের আইনজীবীরা টেলিগ্রাফকে বলেন, এখন স্পষ্ট যে বিবিসি ‘ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে মানহানিকর উপস্থাপনা’ করেছে। এই বিতর্ক সামনে আসে বিবিসির অভ্যন্তরীণ একটি ফাঁস হওয়া নথি প্রকাশের পর। ওই নথি একজন সাবেক বহিরাগত উপদেষ্টা সম্পাদনাগত মান যাচাই কমিটির জন্য প্রস্তুত করেছিলেন। সেখানে ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুতে রিপোর্টিং এবং বিবিসি অ্যারাবিকের ইসরায়েল– গাজা কভারেজ নিয়েও সমালোচনা ছিল।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com