আয়াতুল্লাহ খামেনির ভাষণে বিজয়ের ঘোষণা
যুক্তরাষ্ট্রকে সজোরে চপেটাঘাত করেছে ইরান
প্রকাশ : ২৬-০৬-২০২৫ ২০:২৩

ছবি : সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘাতকে কেন্দ্র করে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ইরানিদের একাধিকবার অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ইরান বিজয়ী হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের মুখে সজোরে চপেটাঘাত করেছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক টেলিভিশন ভাষণ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স (প্রাক্তন টুইটার) ও টেলিগ্রামে দেওয়া পৃথক বার্তায় তিনি এসব কথা বলেন। এই ভাষণে তিনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মহান বিজয়, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থতা এবং ইরানি জাতির ঐক্য ও দৃঢ়তা তুলে ধরেন।
খামেনি তার ভাষণে বলেন, আমাদের প্রিয় ইরান যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জয় লাভ করেছে। এই যুদ্ধে আমেরিকা কোনো সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। ইরান বিজয়ী হয়েছে এবং আমেরিকার মুখে সজোরে চপেটাঘাত করেছে।
তিনি অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি এই যুদ্ধে জড়িয়েছে, কারণ তারা বুঝতে পেরেছিল- যদি তারা না জড়ায়, তাহলে ইহুদিবাদী শাসনের সম্পূর্ণ পতন অনিবার্য হবে।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিজয় সম্পর্কেও তিনি বলেন, ইরানের আঘাতে ইহুদিবাদী শাসনব্যবস্থা তাদের সব অহংকার ও দাবির সঙ্গে সঙ্গে প্রায় চুরমার হয়ে গেছে।
খামেনির ভাষ্যমতে, ইরানের সশস্ত্র বাহিনী শত্রুদের বহু স্তরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে তাদের প্রাণকেন্দ্রগুলোতে আঘাত হেনেছে। তিনি ইঙ্গিত দেন, এই হামলাগুলো ছিল কৌশলগত ও ব্যাপক ধ্বংসাত্মক।
ইরানি জাতির ঐক্যের প্রশংসা: খামেনি জাতির ঐক্যের কথা অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এই নয় কোটির ইরানি জাতি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সশস্ত্র বাহিনীর পাশে দাঁড়িয়েছে। এক কণ্ঠে কথা বলেছে। জাতি তার ব্যতিক্রমী চরিত্র প্রদর্শন করেছে এবং প্রমাণ করেছে, প্রয়োজন হলে তারা একটি মাত্র কণ্ঠস্বরেই কথা বলবে।
তিনি আরো বলেন, আমি ইরানি জনগণের অসাধারণ ঐক্যকে স্বাগত জানাই। ইরানিরা দেখিয়ে দিয়েছে- তারা যখন প্রয়োজন অনুভব করে, তখন এক হয় এবং দেশ রক্ষায় নিজেদের সর্বস্ব উজাড় করে দেয়।
পরমাণু স্থাপনায় হামলা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দাবির প্রত্যাখ্যান: আয়াতুল্লাহ খামেনি তার বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবির তীব্র সমালোচনা করেন। ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক অভিযানে ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।
এর জবাবে খামেনি বলেন, ট্রাম্পের এই দাবি সত্য নয়। আমাদের পারমাণবিক অবকাঠামোর বিরুদ্ধে তারা আগ্রাসন চালালেও তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তারা মূলত এসব অপপ্রচার করছে তাদের ব্যর্থতা ঢাকতে। তিনি বলেন, কাতারের আল উদেইদ মার্কিন ঘাঁটিতে ইরান যে হামলা চালিয়েছে, তা যুক্তরাষ্ট্র ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তবে সময়ই শত্রুদের প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি প্রকাশ করে দেবে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি: খামেনি কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে যদি কেউ আবারো আগ্রাসন চালানোর চেষ্টা করে তাহলে সেজন্য তাদের চড়া মূল্য দিতে হবে। শত্রুপক্ষ এবং আগ্রাসনকারীরা যদি আঘাত হানে, তাহলে তাদের পরিণতিও ভয়াবহ হবে।
তিনি বলেন, ইহুদিবাদীরা কখনো ভাবেনি তারা ইরানের কাছ থেকে এমন ধাক্কা খাবে। আমাদের সশস্ত্র বাহিনী প্রমাণ করেছে- ইরান শুধু আত্মরক্ষাই করে না, বরং প্রয়োজনে শত্রুর মূলোৎপাটন করতেও সক্ষম।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ: ভাষণে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে খামেনি বলেন, ট্রাম্প বলেছেন, ইরানকে আত্মসমর্পণ করতে হবে। তিনি সত্য প্রকাশ করেছেনÑ মার্কিনিরা কেবল তখনই সন্তুষ্ট হবে যখন ইরান আত্মসমর্পণ করবে। কিন্তু আত্মসমর্পণ কখনো হবে না। আমরা শক্তিশালী জাতি, আমাদের ইতিহাস ও সভ্যতা তা প্রমাণ করে। ইরান কখনো মাথা নত করবে না।
তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য ছিল ইরানকে বশীভূত করা। ইরানিদের আত্মসমর্পণের কথা বলে মার্কিনিরা আমাদের অপমান করতে চেয়েছিল। কিন্তু আমাদের জনগণ সেই অপমান মেনে নেয়নি, বরং সম্মান ও বিজয়ের পতাকা উড্ডীন রেখেছে।
গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের রাজধানী তেহরান ও অন্যান্য এলাকায় বিমান অভিযান চালায়, অভিযোগ তোলে- ইরান পরমাণু বোমা তৈরির দোরগোড়ায়। জবাবে ইরান একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইসরায়েলের সামরিক ও কৌশলগত স্থাপনাগুলোর উপর।
সংঘাতের ১০ দিন পর, ২২ জুন মধ্যরাতে মার্কিন বিমান বাহিনী ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’ নামে একটি বড়সড় আক্রমণ চালায় ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনায়। এরপরই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন। কয়েক ঘণ্টা পর ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান এক বিবৃতিতে জানানÑ ইরান যুদ্ধবিরতি মানবে, যদি ইসরায়েল পুনরায় হামলা না চালায়।
আয়াতুল্লাহ খামেনি তার ভাষণে বলেন, যদি এই সংঘাত আরো কিছুদিন চলত, তাহলে ইসরায়েল সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যেতো। ইরানের প্রতিরক্ষা বাহিনী ইতোমধ্যে ইসরায়েলকে খাদের কিনারায় নিয়ে গিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশ না করলে ইহুদিবাদীদের পরিণতি আরো ভয়াবহ হতো। তিনি বলেন, সব হৈচৈ-হট্টগোলের মধ্যে জায়নবাদী শাসকগোষ্ঠী ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের আঘাতে একই সঙ্গে উৎখাত ও চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেছে।
খামেনি ভাষণের শেষে বলেন, আমাদের জনগণ বিজয়ী ও সম্মানিত। তারা এমনই থাকবে। আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। ইরান কখনো আত্মসমর্পণ করবে না এবং প্রতিটি আগ্রাসনের জবাব আরো কঠিনভাবে দেবে।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com