সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছুরিকাঘাতে ঢাবি শিক্ষার্থী সাম্য নিহত
প্রকাশ : ১৪-০৫-২০২৫ ১০:৩২

ছবি : সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্ত মঞ্চের পাশে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। তার নাম শাহরিয়ার আলম সাম্য (২৫)। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিলেন।
শাহরিয়ার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক। তিনি এই হলের ২২২ নম্বর কক্ষে থাকতেন। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলায়।
স্যার এ এফ রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ ও সহযোগী অধ্যাপক মাহফুজুল হক মঙ্গলবার (১৩ মে) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ছুরিকাঘাতে শাহরিয়ারের মৃত্যু হয়েছে। আমরা এখন মেডিক্যালে আছি।’
এর আগে রাত ১২টার দিকে রক্তাক্ত অবস্থায় শাহরিয়ারকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ঢাকা মেডিক্যাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. ফারুক জানান, কয়েকজন সহপাঠী রক্তাক্ত অবস্থায় ওই শিক্ষার্থীকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন। এরপর চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার ডান পায়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে।
হাসপাতালে নিহতের সহপাঠী আশরাফুল ইসলাম রাফি ও বন্ধু আবাবিল আহমেদ বিশাল বলেন, শাহরিয়ার রাত ১২টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্ত মঞ্চের পাশের মূল সড়কে মোটরসাইকেলে করে যাচ্ছিলেন। এ সময় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির মোটরসাইকেলের সঙ্গে তার মোটরসাইকেলের ধাক্কা লাগে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি শাহরিয়ারকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যান।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ খালিদ মনসুর বলেন, ঘটনাটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছি।
বিক্ষোভ মিছিল: সাম্য খুন হওয়ার প্রতিবাদে হাসপাতালে জড়ো হওয়া তার বন্ধু, সহপাঠী ও সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসে আসেন।
রাত পৌনে ২টার দিকে স্যার এফ রহমান হলের সামনে থেকেও বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। পরে সব মিছিল ভিসি চত্বরে এসে জড়ো হয়। এসময় শিক্ষার্থীরা ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘আমার ভাই মরলো কেন, প্রশাসন জবাব দে’, ‘বিচার বিচার বিচার চাই, সাম্য হত্যার বিচার চাই’ সহ নানা স্লোগান দিতে থাকেন। পরে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন।
পরে উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান শিক্ষার্থীদের সামনে আসেন। তখন অনেকে ভিসির বিরুদ্ধেও 'শেইম-শেইম’ বলে স্লোগান দিতে থাকে। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিছিলে যোগ দেন উপাচার্য।
পরে মিছিলটি রাজু ভাস্কর্য হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল গিয়ে শেষ হয়। মাঝপথে মিছিলে যোগ দেন প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমদ। মিছিল শেষে, উপাচার্য ও প্রক্টর নিহত শিক্ষার্থীকে দেখতে ভেতরে ঢুকতে চাইলে শিক্ষার্থীদের বাধায় ঢুকতে পারেননি। এসময় শিক্ষার্থীরা ‘অথর্ব প্রক্টর, মানি না মানব না’, ‘অথর্ব ভিসি-মানি না , মানব না’ সহ নানা স্লোগান দেন।
পরে পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে হাসপাতাল থেকে অ্যম্বুল্যান্সে করে স্থান ত্যাগ করেন উপাচার্য ও প্রক্টর। এরপর শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যে একটা মিছিল নিয়ে যান। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল পাড়ায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন আবাসিক শিক্ষার্থীরা।
আটক দুই: এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত সন্দেহভাজন দুইজনকে আটক করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা জোনের ডিসি মাসুদ আলম বলেন, তিন যুবক সাম্যর ওপর হামলা করেন। হামলাকারীরা আহত হয়ে একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন এমন খবর পেয়ে সেখান থেকে দুজনকে আটক করা হয়। এ সময় পালিয়ে যান আরেক যুবক। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আটক দুইজনের পরিচয় ও বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com