হলিউড কিংবদন্তি রবার্ট রেডফোর্ড আর নেই
প্রকাশ : ১৭-০৯-২০২৫ ১৫:৪৮

ছবি : সংগৃহীত
বিনোদন ডেস্ক
হলিউড অভিনেতা, পরিচালক, চলচ্চিত্র আন্দোলনের সংগঠক ও পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী রবার্ট রেডফোর্ডের জীবনাবসান হয়েছে। তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউটাহ অঙ্গরাজ্যের সানড্যান্সে নিজের বাড়িতে মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার পাবলিসিস্ট সিন্ডি বার্জার সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, রাবার্ট তার ‘প্রিয় জায়গা থেকেই বিদায় নিয়েছেন, তার প্রিয় মানুষদের সান্নিধ্যে।’
সত্তরের দশকের শুরুতে এক-দুটি অভিনয়ের কাজ করেছেন। ব্রডওয়েতেও চেষ্টা করেছিলেন। এরপর দুম করে যেন রূপালি পর্দা ধরা দিল তার সামনে। ১৯৬৭ সালে জেন ফন্ডার সঙ্গে তার প্রথম সিনেমা ‘বেয়ারফুট ইন দ্য পার্ক’।
ওই সিনেমায় তাকে লোকে খানিকটা চিনল বটে, ধাক্কাটা এল বছর দুই পরে। ফেরারী আসামিকেও আইডল মনে করতে পারে মানুষ! জবাব মিলল জর্জ রয় হিলের– ‘বুচ ক্যাসিডি অ্যান্ড দ্য সানড্যান্স কিড’ সিনেমায়।
এই সিনেমা প্রভাব রেখেছে তার পরবর্তী জীবনে। উইটাহ অঙ্গরাজ্যের সানড্যান্সেই থাকতে চেয়েছেন তিনি, সেখান খামার করেছেন।
হলিউডে রবার্ট নামধারী দুই কিংবদন্তী অভিনেতা তাদের জীবনের শেষভাগে এসে চলচ্চিত্র আন্দোলনে সাংগঠনিকভাবে কিছু দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। একজন রবার্ট ডি নিরো তার ট্রাইবেকা ফেস্টিভালের মাধ্যমে। অপরজন এই রেডফোর্ড। তিনি গড়ে তুলেছিলেন সানড্যান্স ফিল্ম ফেস্টিভাল।
১৯৭৮ সালের প্রথম আয়োজনে এই সানড্যান্সেই দর্শক প্রথম দেখেছেন ডেলিভারেন্স, এ স্ট্রিটকার নেইমড ডিজায়ার, মিডনাইট কাউবয় আর মিন স্ট্রিটসের মতো সিনেমা। সানড্যান্স পরে মনোযোগের তালিকায় যোগ করে নেয় ইনডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম বা মুক্ত চলচ্চিত্র আর প্রমাণ্যচিত্রকে। বিশেষ করে যেসব চলচ্চিত্রে প্রজনন স্বাস্থ্য আর অধিকার, এলজিবিটিকিউ আর জলবায়ুর মতো বিষয় উঠে এসেছে।
এই সানড্যান্স কোন কোন নির্মাতার ক্যারিয়ারের শুরুর আশ্রয় ছিল? তালিকায় উঠে আসবে কোয়েন্টিন টারান্টিনো, ডেভিড ও রাসেল, রায়ান কুগলার আর রবার্ট রড্রিগেজের নাম।
বছর দুই পরেই তিনি নজর দিলেন ক্যামেরার পেছনে। পরিচালক হিসাবে প্রথম সিনেমা– অর্ডিনারি পিপল। একটু স্বচ্ছল মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান মারা যাওয়ার পরের পরিস্থিতি নিয়ে তৈরি এই সিনেমা রেডফোর্ডকে এনে দিল এক সোনালি মূর্তি-সেরা পরিচালকের অস্কার। পাশাপাশি আরো তিনটি অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড। সেরা সিনেমা, পার্শ্ব চরিত্রে সেরা অভিনেতা আর সেরা চিত্রনাট্য।
প্রায় ছয় দশকের ক্যারিয়ারে অর্ধশতক সিনেমায় অভিনয়, গোটা দশেক পরিচালনা, ১৫-১৬টি সিনেমার নির্বাহী প্রযোজক আর পরিবেশবিষয়ক অনেকগুলো প্রামাণ্যচিত্রে কণ্ঠ দিয়েছেন। এর বিপরীতে দুটি অস্কার, যার মধ্যে একটি সম্মানসূচক, পাঁচটি গোল্ডেন গ্লোব, একটি সিসিল বি ডেমিল, স্ক্রিন অ্যাক্টর্স গিল্ড লাইফটাইম অ্যাওয়ার্ড, কেনেডি সেন্টার অনার আর প্রেসিডেন্সিয়াল মেডাল অব ফ্রিডম।
মোটাদাগে এইভাবে তার জীবন খাতার হিসাব বর্ণনা করা যায় বটে, তবে তাকে ঠিকঠাক তুলে ধরা হয় না।
হলিউডের খ্যাতির চূড়ায় থেকে একের পর এক অভিনয় করে অর্থ বানানোর দিকে যেতে চাননি তিনি। সিনেমার সহজ সমীকরণ, ‘দর্শক খাবে’ তাই তাতেই সওয়ার হওয়া রেডফোর্ডের স্বভাববিরুদ্ধ ছিল।
গোঁ ধরা স্বভাবই তাকে নিয়ে এসেছে পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনে, যখন মার্কিন সরকার উইটাহর এক ক্যানিয়নের মধ্য দিয়ে ছয় লেনের মহাসড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।
এর পর থেকেই রেডফোর্ড অংশ নিয়েছেন পরিবেশ বিষয়ে নানা উদ্যোগে, ছিলেন ন্যাশনাল রিসোর্সেস ডিফেন্স কাউন্সিলের ট্রাস্টি। এক দুই বছর নয়, টানা পাঁচ দশক।
৭৬ সালে অর্থলোভী ব্যবসায়ীরা যখন চাকরির বাজার তৈরির অজুহাতে কয়লানির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির উদ্যোগ নেয়, তিনিই দাঁড়িয়েছিলেন এর রিরুদ্ধে। তাতে এক পর্যায়ে তাকে স্থানীয় জনসাধারণের ‘শত্রু’ আখ্যাও শুনতে হয়েছে।
সবকিছু ছাপিয়ে শেষ পর্যন্ত রেডফোর্ড সম্ভবত টিকে থাকবেন একজন বেপরোয়া সানড্যান্স কিড, একজন রিপোর্টার বব উডওয়ার্ড বা অবসরে যাওয়া সিআইএ’র একজন কেস অফিসার নেথান ম্যিউর হিসাবেই, যিনি নিজের মতো চলেও বলতে পারতেন, ‘আমি তোমাদেরই লোক’।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com