weather ২৫.৯৯ o সে. আদ্রতা ৯৪% , মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫, ২১ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হাঙ্গেরির নাগিরেভ গ্রামে শত শত পুরুষকে হত্যা করেছেন তাদের স্ত্রীরা

প্রকাশ : ২৫-০৯-২০২৫ ১৬:১৪

ছবি : সংগৃহীত

পিপলসনিউজ ডেস্ক
সময়, ১৯২৯ সালের ডিসেম্বর। হাঙ্গেরির ছোট্ট শহর সলনোকের স্থানীয় আদালতে একটি মামলার বিচার হয়। মামলাটি কাছের নাগিরেভ গ্রামকে ঘিরে। ওই গ্রামের অনেক নারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা নিজ নিজ স্বামীকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিষ খাইয়ে হত্যা করেছেন।

ঘটনাটি নিয়ে ওই সময় নিউইয়র্ক টাইমস একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, পুরুষদের বিষপ্রয়োগের অভিযোগে প্রায় ৫০ নারী বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন।

সংবাদমাধ্যমটি জানায়, ১৯১১ থেকে ১৯২৯ সালের মধ্যে নাগিরেভে ৫০ জনের বেশি পুরুষকে আর্সেনিক প্রয়োগে হত্যা করা হয়। কৃষক-অধ্যুষিত গ্রামটি রাজধানী বুদাপেস্ট থেকে ১৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত।

অভিযুক্ত নারীরা ‘অ্যাঞ্জেল মেকার’ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। শব্দটি এমন ধারণাকে বোঝায়, যেখানে নারীরা কাউকে (বিশেষ করে স্বামী বা অবাঞ্ছিত শিশুকে) হত্যা করেন।

বিচারের সময় একটি নাম বারবার উঠে আসে। ঝুঝানা ফাজেকাশ— তিনি ছিলেন ওই গ্রামের ধাত্রী।
নাগিরেভ ছিল হাঙ্গেরিতে ওয়াইন তৈরির সবচেয়ে বড় অঞ্চল কুনসাগের তিজা নদীর তীরে অবস্থিত একটি ছোট্ট বসতি। যেখানে মূলত কৃষক সম্প্রদায়ের বসবাস ছিল।

এ অঞ্চলে বিয়ে পারিবারিকভাবেই নির্ধারিত হতো। খুব অল্প বয়সী নারীরা অপেক্ষাকৃত অধিক বয়স্ক পুরুষদের সঙ্গে জুটি বাঁধতেন। এসব বিয়ের সঙ্গে সাধারণত জমি, উত্তরাধিকার ও আইনি বাধ্যবাধকতার চুক্তি জড়িত ছিল। বিবাহবিচ্ছেদ কার্যত সম্ভব ছিল না।

ওই সময় নাগিরেভ গ্রামটি অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের অধীন ছিল। নাগিরেভে কোনো স্থানীয় চিকিৎসক বা পুরোহিত ছিলেন না। বিভিন্ন রোগে ঔষধি প্রতিকার ও রাসায়নিক সম্পর্কে জ্ঞান থাকার কারণে ফাজেকাশ কেবল ধাত্রী হিসেবে নন, একজন চিকিৎসক হিসেবেও কাজ করতেন।

‘তার (ফাজেকাশ) জ্ঞান মানুষকে তার কাছে আসতে এবং তার ওপর বিশ্বাস রাখতে বাধ্য করেছিল— বলেন মারিয়া গুনিয়া। তিনি এ বিষয়ে ২০০৪ সালে বিবিসির সঙ্গে কথা বলেছিলেন।

মারিয়ার বাবা ছিলেন সেখানকার একজন স্থানীয় কর্মকর্তা। তাকে পুলিশ অনুরোধ করেছিল গ্রামে ঘটে যাওয়া একের পর এক রহস্যজনক মৃত্যুর তদন্তে সহায়তা করার জন্য। ওই সময় গুনিয়া বেশ ছোট ছিলেন।

ঝুঝানা ফাজেকাশ নামের ওই ধাত্রী গ্রামের সড়কের পাশে একটি সাধারণ একতলা বাড়িতে থাকতেন। মারিয়া জানান, গ্রামের নারীরা প্রায়ই তাদের সমস্যা নিয়ে ফাজেকাশের কাছে যেতেন।

স্মৃতি হাতরে মারিয়া বলেন, ঘরের ভেতরে ঘটে যাওয়া অনেক কিছু শুনেছেন তিনি। পুরুষেরা নারীদের মারধর করছেন, ধর্ষণ করছেন, তাদের অনেকেই অবিশ্বস্ত, অনেক নির্যাতন— এমন নানা কিছু।

মারিয়া বলেন, যখন নারীরা তাদের মাতাল বা হিংস্র স্বামীদের সম্পর্কে অভিযোগ করতেন, তখন ফাজেকাশ তাদের বলতেন, যদি তাদের সঙ্গে থাকতে সমস্যা হয়, তাহলে আমার কাছে একটি সহজ সমাধান আছে।

আর সেই সমাধান ছিল— আর্সেনিক, যা ওই ধাত্রী ঘরোয়াভাবে তৈরি করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে যুক্তরাজ্যের সংবাদপত্র দ্য টাইমসের একটি প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, ফাজেকাশের বাড়ির বাগানে পুঁতে রাখা বিষের শিশি পাওয়া গিয়েছিল।

নাগিরেভের কবরস্থানে ১৯১১ থেকে ১৯২৯ সালের মধ্যে বিষক্রিয়ায় মৃত প্রায় ৫০ পুরুষকে সমাহিত করা হয়েছিল। অবশেষে কর্তৃপক্ষ সন্দেহ করতে শুরু করে এবং মৃতদেহ কবর থেকে উত্তোলনের উদ্যোগ নেয়।

পরে পরীক্ষা করা ৫০টি মৃতদেহের মধ্যে ৪৬টিতেই আর্সেনিক ছিল; যা বিষক্রিয়ার সন্দেহকে নিশ্চিত করে। সন্দেহের তির ফাজেকাশের দিকে নির্দেশ করছিল। এ পরিস্থিতিতে পুলিশ ফাজেকাশকে গ্রেপ্তার করতে তার বাড়িতে যায়।

পুলিশকে কাছে আসতে দেখে তিনি বুঝতে পারেন যে সবকিছু শেষ। যখন পুলিশ তার বাড়িতে পৌঁছায়, ততক্ষণে তিনি মারা গেছেন। নিজের কাছে রাখা কিছু বিষ তিনি ইতোমধ্যে পান করে ফেলেন— স্মৃতি হাতরে বলেন মারিয়া।

পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথম হত্যাকাণ্ড ১৯১১ সালে ঘটেছিল। ওই বছর ফাজেকাশ গ্রামটিতে বসবাস করতে শুরু করেন। অর্থাৎ প্রথম বছরই ওই গ্রামে বিষক্রিয়ার একটি ধরনের সূচনা হয়েছিল; যা পরের প্রায় দুই দশক ধরে অব্যাহত ছিল।

তবে এসব ঘটনার জন্য ওই ধাত্রীকে একমাত্র অপরাধী বলে বিবেচনা করা হয়নি। নিকটবর্তী শহর সলনোকে, ১৯২৯ সাল থেকে ২৬ নারীকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। তাদের মধ্যে আটজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। অন্যদের কারাগারে পাঠানো হয়।

তাদের মধ্যে সাতজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। যদিও তাদের মধ্যে খুব কম জনই দোষ স্বীকার করে নিয়েছিলেন। এর পেছনে তাদের উদ্দেশ্য কী ছিল, কখনোই সেটার বিস্তারিত ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।

তবে তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে নানা কথা শোনা যেত। দারিদ্র্য, লোভ আর একঘেয়েমি ছিল এসবের মধ্যে কয়েকটি কারণ।

কয়েকটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, গ্রামের পুরুষেরা যখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সম্মুখসমরে অংশ নিতে যান, তখন রুশ যুদ্ধবন্দীদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন ওই গ্রামের নারীরা। পুরুষদের অনুপস্থিতিতে রুশ যুদ্ধবন্দীদের গ্রামটির খামারগুলোয় কাজ করতে জোরপূর্বক পাঠানো হয়েছিল।

বিশ্বযুদ্ধ শেষে স্বামীরা ফিরে আসার পর গ্রামের নারীরা হঠাৎ তাদের স্বাধীনতা হারান এবং ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এ পরিস্থিতিতে নারীরা অনেকটা বাধ্য হয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নেন।

কেবল নাগিরেভ গ্রামে নয়, পাশের টিজাকুর্ট শহরেও কবর থেকে মরদেহ উত্তোলন করে তাতে পাওয়া যায় আর্সেনিকের উপস্থিতি। অবশ্য তাদের মৃত্যুর জন্য কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়নি। অনুমান করা হয়, এ অঞ্চলে বিষক্রিয়ায় মৃতের সংখ্যা তিন শতাধিক।

বছরের পর বছর অতিবাহিত হওয়ায় নাগিরেভের বেশির ভাগ বেদনাদায়ক স্মৃতি মুছে গেছে। এ অঞ্চলের নাম এখন আর আশপাশের অঞ্চলে পুরুষদের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি করে না।

তবু মারিয়া খানিকটা বিদ্রূপ করে বলেন, বিষক্রিয়ার ওই ঘটনা সামনে আসার পর স্ত্রীদের সঙ্গে পুরুষদের আচরণে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নতি হয়েছিল।

পিপলসনিউজ/আরইউ 

-- বিজ্ঞাপন --


CONTACT

ads@peoplenewsbd.com

চিকিৎসায় নোবেল পেলেন ৩ বিজ্ঞানী চিকিৎসায় নোবেল পেলেন ৩ বিজ্ঞানী গ্রেটা  থুনবার্গসহ ১৬৫ জন অভিযাত্রীকে গ্রিসে পাঠাচ্ছে ইসরায়েল গ্রেটা থুনবার্গসহ ১৬৫ জন অভিযাত্রীকে গ্রিসে পাঠাচ্ছে ইসরায়েল দায়িত্বে থাকা সরকারি চাকরিজীবীদের ভোটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে: সিইসি দায়িত্বে থাকা সরকারি চাকরিজীবীদের ভোটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে: সিইসি গাজা যুদ্ধ অবসানের প্রচেষ্টায় সম্পৃক্ত সবাইকে দ্রুত এগোতে বললেন ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা যুদ্ধ অবসানের প্রচেষ্টায় সম্পৃক্ত সবাইকে দ্রুত এগোতে বললেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের জয়পুরে হাসপাতালে আগুন, ৮ রোগীর মৃত্যু ভারতের জয়পুরে হাসপাতালে আগুন, ৮ রোগীর মৃত্যু