weather ৩০.৯৯ o সে. আদ্রতা ৭০% , সোমবার, ১১ আগস্ট ২০২৫, ২৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

১৫ লাখ আফগানকে ফেরত পাঠিয়েছে ইরান

প্রকাশ : ০১-০৮-২০২৫ ২২:২৯

ছবি : সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১৫ লাখ আফগানকে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে ইরান। এর মধ্যে কিছু আফগান নাগরিকের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ করা হয়েছে।

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, নির্যাতিতদের মধ্যে একজন হলেন আলি আহমেদ। পরনের শার্ট তুলে পিঠের আঘাতের চিহ্ন দেখানোর সময় অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন তিনি। বলেন, ইরানের কর্মকর্তারা আমার বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ করেন। তারা আমাকে মারার জন্য পানির পাইপ ও কাঠের বোর্ড ব্যবহার করেন। তারা আমাদের ওপর পশুর মতো আচরণ করেছেন। আমার মোবাইল ফোন ও অর্থ নিয়ে নেন।

এ মাসের শুরুতে তিনি বিবিসির সঙ্গে দুই দেশের সীমান্ত নিয়ে কথা বলেন। তার পরিচয় গোপন রাখার জন্য ওই সময় নাম প্রকাশ করা হয়নি। চল্লিশ লাখ অনথিভুক্ত আফগানের বসবাস ইরানে। মার্চে যাদের কাছে নথি নেই, তাদের স্বেচ্ছায় ইরান ছাড়তে নোটিশ দেওয়া হয়। তবে ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের সংঘাতের পর থেকে নিরাপত্তার স্বার্থে হাজার হাজার আফগানকে জোরপূর্বক দেশে ফেরত পাঠিয়েছে ইরান।

জুলাইয়ের শুরুতে প্রতিদিন ৫০ হাজার আফগানকে ফেরত পাঠায় ইরান। ইরানের তরফ থেকে আফগানদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ আনা হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্য মতে, জুলাইয়ের শুরুতে দৈনিক প্রত্যাবাসনের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজারে পৌঁছায়।

একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আফগান বলেন, ‘আমরা যেখানেই যাই, সবার চোখে গুপ্তচর। আমাদের বলা হয়, তোমরা ইসরায়েলের হয়ে কাজ করো। ঘরে বসেই ড্রোন বানাও। আমরা আতঙ্কে থাকি।’

আফগানিস্তান বিষয়ক বিশ্লেষক বারনেট রুবিন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরে উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি মনে করেন, ‘তেহরান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ব্যর্থতায় বলির পাঁঠা খুঁজছে।’ তিনি বলেন, ‘ইরানের নিরাপত্তাব্যবস্থা দুর্বল। ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা দ্বারা এরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা নিয়ে সরকার খুব বিব্রত। তাই কাউকে দায়ী করতেই হবে।’

অনেকে বলছেন, এই গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ এলে ইরান সরকারের আফগানদের বহিষ্কারের পরিকল্পনাকে বৈধতা দেওয়ার কৌশল। বিবিসি ইরান সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো জবাব পায়নি। তবে ১৮ জুলাই রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আইআরএনএ জানায়, ‘মানবাধিকারের প্রতি সম্মান রেখে এবং শান্তিপূর্ণভাবে আফগান শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনই সরকারের লক্ষ্য।

আবদুল্লাহ রেজাই (নাম পরিবর্তিত) একই রকম অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন বিবিসির সঙ্গে ইসলাম কালা সীমান্তে। তিনি জানান, আটক অবস্থায় প্রায় ১৫ জন ইরানি পুলিশ তাকে এবং আরো অনেক আফগানকে নির্যাতন করে। তিনি বলেন, তারা আমার ভিসা ও পাসপোর্ট ছিঁড়ে ফেলে এবং অনেক মারধর করে। তারা বলে, ‘তুমি গুপ্তচর।’ আমি তখন মাত্র দুই মাস হলো ইরানে এসেছি, বৈধ ভিসা নিয়েই।

তিনি আরো বলেন, তারা আমাদের প্লাস্টিকের লাঠি দিয়ে মারছিল আর বলছিল, তোমরা গুপ্তচর, আমাদের দেশ নষ্ট করছ। ওই চার দিনের অভিজ্ঞতা যেন চার বছরের সমান ছিল। আমাদের ঠিকমতো খাবার পর্যন্ত দেওয়া হয়নি।

১৩ জুন যেদিন ইসরায়েল ইরানের পরমাণু ও সামরিক স্থাপনায় হামলা চালায়, সেদিনই ইরান সরকার জনগণকে ‘অসাধারণ’ কার্যকলাপ যেমন ভ্যানে অস্ত্র পরিবহনের মতো বিষয় পর্যবেক্ষণের নির্দেশ দেয়।

এরপর জনপ্রিয় টেলিগ্রাম চ্যানেলগুলোতে ‘বহিরাগত নাগরিকদের’ (অর্থাৎ আফগানদের) সন্দেহভাজন কার্যকলাপ নিয়ে পোস্ট ছড়ায়। এসব বার্তায় বলা হয়, বড় শহরে ভ্যান চালানো আফগানদের নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। ১৪ জুন কয়েকজন আফগানসহ বেশ কিছু লোককে গ্রেপ্তার করা হয় বলে সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়।

১৬ জুন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়, যেখানে দেখা যায়, কিছু আফগানকে ড্রোনসহ আটক করা হচ্ছে। পরে জানা যায়, ভিডিওটি পুরনো এবং আসলে অবৈধভাবে বসবাসকারী অভিবাসীদের আটক দেখানো হয়েছিল। ১৮ জুন আইআরজিসি-সংশ্লিষ্ট একটি টেলিগ্রাম চ্যানেল জানায়, মাশহাদ শহরে ১৮ জন আফগানকে ইসরায়েলের জন্য ড্রোন তৈরির অভিযোগে আটক করা হয়েছে। কিন্তু পরদিনই স্থানীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, তাদের গ্রেপ্তার ড্রোন বা ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই, শুধু অবৈধভাবে থাকার জন্যই তাদের ধরা হয়েছে।

তবু এই মিথ্যা তথ্য দ্রুত সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ‘আফগানদের বহিষ্কার জাতীয় চাহিদা’—এই হ্যাশট্যাগ এক মাসে দুই লাখেরও বেশি বার এক্সে ব্যবহার হয়েছে, যার মধ্যে শুধু ২ জুলাইতেই ২০ হাজারবার উল্লেখ করা হয়। স্বাধীন গবেষণা প্রতিষ্ঠান আফগান উইটনেস বলছে, এবার শুধু সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা নয়, রাষ্ট্রঘনিষ্ঠ মিডিয়াও এই ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে।

জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার তথ্য মতে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ১৫ লাখের বেশি আফগান ইরান ছেড়ে গেছে। তালেবান সরকারের শরণার্থী ও প্রত্যাবাসন মন্ত্রণালয় জানায়, ২২ জুন থেকে ২২ জুলাইয়ের মধ্যে নয় লাখ ১৮ হাজারের বেশি আফগান আফগানিস্তানে ফিরেছে। তাদের অনেকেই ইরানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ছিল।

সোভিয়েত আগ্রাসনের সময় ১৯৭৯ সালে এবং ২০২১ সালে তালেবানের পুনরুত্থানের সময় আফগানরা ব্যাপকভাবে ইরান ও পাকিস্তানে পালিয়ে যায়। তবে এখন আফগান সরকার এই বিশালসংখ্যক ফেরতপ্রাপ্ত নাগরিককে পুনর্বাসনের জন্য পর্যাপ্ত সক্ষমতা রাখে না। এরই মধ্যে পাকিস্তান থেকেও লাখো আফগান ফেরত পাঠানো হচ্ছে।

ড. খাদিজা আব্বাসি লন্ডনের এসওএএস-এ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি বলেন, প্রথমে ইরান আফগানদের স্বাগত জানিয়েছিল, কিন্তু ধীরে ধীরে রাষ্ট্রীয় মিডিয়ায় তাদের ‘অর্থনৈতিক বোঝা’ হিসেবে তুলে ধরা হয়। তিনি জানান, ১৯৯০-এর দশকে তেহরানে কিছু ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় কোনো প্রমাণ ছাড়াই আফগানদের দায়ী করা হয়, যদিও পরে জানা যায়, খুনি ছিলেন একজন ইরানিই।

২০২১ সালের পর ২০ লাখের বেশি আফগান ইরানে আসার পর অনেক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট দাবি করে—ইরানে এক কোটির বেশি আফগান আছে, যদিও এটি অতিরঞ্জিত। ওই সময় ইরানই একমাত্র দেশ ছিল, যা বৃহৎ পরিসরে অভিবাসীদের প্রবেশ করতে দিয়েছিল।

ড. আব্বাসি বলেন, আফগানদের বহিষ্কারের বিষয়টি এমন একটি বিরল ইস্যু যেখানে বেশির ভাগ ইরানি সরকারের সঙ্গে একমত। তবে জুলাই মাসে এক হাজার ৩০০-এর বেশি ইরানি ও আফগান অধিকারকর্মী এক খোলা চিঠিতে ‘অমানবিক’ ব্যবহারের অবসান চেয়ে আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, আজ আফগানবিরোধী মনোভাব এতটাই ছড়িয়ে পড়েছে যে মানুষ এখন ঘর থেকে বের হতেই ভয় পায়। কিন্তু লাখ লাখ মানুষের জন্য সেটিও আর সম্ভব নয়। সীমান্তে ভিড় বাড়ছে প্রতিদিন।

পিপলসনিউজ/আরইউ

-- বিজ্ঞাপন --


CONTACT

ads@peoplenewsbd.com

পতেঙ্গায় ভেসে এলো দুই জেলের মরদেহ, এখনো নিখোঁজ ৬ জন পতেঙ্গায় ভেসে এলো দুই জেলের মরদেহ, এখনো নিখোঁজ ৬ জন দেশে নতুন ভোটার ৪৫ লাখ, বাদ যাচ্ছে ২১ লাখ দেশে নতুন ভোটার ৪৫ লাখ, বাদ যাচ্ছে ২১ লাখ চট্টগ্রাম বন্দরে ব্রাজিল থেকে আসা কনটেইনারে তেজস্ক্রিয়তা চট্টগ্রাম বন্দরে ব্রাজিল থেকে আসা কনটেইনারে তেজস্ক্রিয়তা পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না সেই আনিসা পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না সেই আনিসা ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশের জন্য কেনা হবে ৪০ হাজার বডি ক্যামেরা ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশের জন্য কেনা হবে ৪০ হাজার বডি ক্যামেরা