weather ২৮.৯৯ o সে. আদ্রতা ৭৯% , রবিবার, ২৫ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আজ নজরুল জন্মজয়ন্তী

প্রকাশ : ২৫-০৫-২০২৫ ১১:২৪

ছবি : সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক
‘আমি চিরতরে দূরে চলে যাবো/তবু আমারে দেবো না ভুলিতে...’; বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী আজ রবিবার (১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২)। দিবসটি পালিত হচ্ছে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়। এ বছর কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপনের প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে ‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান: কাজী নজরুলের উত্তরাধিকার’। জাতীয় পর্যায়ে কুমিল্লায় আজ শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠান।

কবি ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ (২৪ মে ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দ) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব-কৈশোর-তারুণ্যের জীবনের পরতে পরতে সংগ্রাম করতে হয়েছে তাকে। জড়িয়েছিলেন নানা পেশায়। ১৯১৭ সালে যোগ দেন সেনাবাহিনীতে। অংশ নেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধেও।

জাতীয় কবির জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাণী দিয়েছেন। বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দ্রোহ ও মানবতার কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। কবি নজরুল এমন এক সময়ে জন্মগ্রহণ করেন, যখন গোটা উপমহাদেশ ছিল পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ। কবির বিদ্রোহী সত্তা অন্যায় আর অবিচারের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে; ক্ষুরধার লেখনীতে ভাঙতে চায় অত্যাচারীর শৃঙ্খল। যথাযোগ্য মর্যাদায় আজ দিবসটি পালিত হবে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, বাংলা একাডেমি, নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয়, শিল্পকলা একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন কবির জন্মবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করবে। কবির স্মৃতিধন্য ত্রিশালের দরিরামপুরে নজরুল জন্মজয়ন্তী ও মেলার ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। 

কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন একাধারে কবি, গীতিকার, সুরকার, নাট্যকার, সাংবাদিক, দার্শনিক ও সমাজচিন্তক। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে যার স্থান চিরভাস্বর। তার সাহিত্যকর্ম ও সংগীত সাধনা প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে, সমাজ পরিবর্তনের পথ দেখায়। কাজী নজরুল ইসলাম একটি প্রতিষ্ঠান ও আন্দোলনের নাম, যুগে যুগে এক জীবন্ত আদর্শ। কবিতা, উপন্যাস, নাটক, সঙ্গীত আর দর্শনেও নজরুলের অনবদ্য উপস্থিতি বর্ণাঢ্য করেছে বাংলা সাহিত্যকে। কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবনের সূচনা হয়েছিল দারিদ্র্য আর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। ছোটবেলায় পিতৃহারা নজরুল মসজিদের মুয়াজ্জিন হিসেবে কাজ করেছেন, লেটো গানে অংশ নিয়েছেন। কঠিন জীবনসংগ্রাম তাকে দমাতে পারেনি। তিনি সাহিত্য ও সংগীতের মাধ্যমে সমাজের বৈষম্য, শোষণ, কুসংস্কার ও ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন।

কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্য জীবনের সূচনা ঘটে বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকে। তৎকালীন প্রভাবশালী কবি-সাহিত্যিকদের সংস্পর্শে আসেন তিনি। ১৯২২ সালে প্রকাশিত হয় তার বিখ্যাত কবিতা ‘বিদ্রোহী’; যা বাংলা সাহিত্যে সৃষ্টি করে নতুন এক ধারা। এই কবিতায় কবি নিজের আত্মাকে রূপ দিয়েছেন এক বিরাট শক্তিতে, যিনি অন্যায়, শোষণ ও ভণ্ডামির বিরুদ্ধে উচ্চারণ করেন সাহসের ঘোষণা। এই কবিতা কবি কাজী নজরুল ইসলামকে শুধু সাহিত্যের জগতে নয়, রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনেও পরিচিত করে তোলে। তার লেখা প্রবন্ধ, কবিতা ও গল্প ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে গণচেতনাকে উজ্জীবিত করে।

কাজী নজরুল ইসলামের অমর সৃষ্টি প্রায় চার হাজার গান লিখে ও সুর দিয়ে বাংলা সংগীতকে সমৃদ্ধ করেছেন। তার গানে আছে প্রেম, প্রতিবাদ, ধর্মীয় ভাব, আধ্যাত্মিকতা এবং সাম্যবাদের স্পষ্ট প্রকাশ। কাজী নজরুল ইসলাম তার গদ্য সাহিত্যে তুলে ধরেছেন সমাজে বিদ্যমান কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ। তার উপন্যাস ‘মৃত্যুক্ষুধা’ ও ‘কুহেলিকা’ প্রগতিশীল চিন্তার ধারক। যুগবাণী, দুর্দিনের যাত্রী, রাজবন্দির জবানবন্দি প্রভৃতি প্রবন্ধগ্রন্থে তিনি সমসাময়িক সমাজ ও রাজনীতির নির্ভীক সমালোচনা করেছেন।
আজকের পৃথিবীতে যখন বিদ্বেষ, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও বৈষম্য বাড়ছে, তখন তার অমর সৃষ্টি আমাদের জন্য ‘আলোর দিশারি’। কাজী নজরুল বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর দ্যুতি। তার জন্মবার্ষিকী স্মরণ করিয়ে দেয় যে কবির আদর্শ ও ভাবনা আজও প্রাসঙ্গিক। বৈষম্য, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও সামাজিক অবিচার যখন বিশ্বজুড়ে উদ্বেগের বিষয়, তখন তার জীবনদর্শন আলো জ্বালাতে পারে। 

সাহিত্যের পাশাপাশি সংগীত ও চলচ্চিত্র পরিচালনাও করেছেন নজরুল। নিজের পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘ধ্রুব’তে অভিনয়ও করেছিলেন। তাই শুধু কবি পরিচয়েই আবদ্ধ নন কাজী নজরুল।

১৯৭২ সালে কবি নজরুলকে সপরিবারে নিয়ে আসা হয় স্বাধীন বাংলাদেশে। এরপর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশেই ছিলেন। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট তৎকালীন পিজি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন এই মহাবিদ্রোহী ও প্রেমিক পুরুষ। কবির ইচ্ছানুসারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।

নানা আয়োজন: জাতীয় পর্যায়ে আজ থেকে শুরু হতে চলেছে তিন দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় এবং কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে ২৫, ২৬ ও ২৭ মে। অনুষ্ঠান সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। 

আজ কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে বেলা ৩টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমান। 

বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখবেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক লতিফুল ইসলাম শিবলী এবং কবিপৌত্রী ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইনস্টিটিউট ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান খিলখিল কাজী। 

এতে স্মারক বক্তব্য দিবেন অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান এবং কুমিল্লার জেলা প্রশাসক আমিরুল কায়ছার। অনুষ্ঠানে ‘নজরুল পুরস্কার ২০২৩ ও ২০২৪’-এর জন্য মনোনীত গুণীজনদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে। আলোচনা পর্ব শেষে শুরু হবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির বিশেষ নিবেদন ‘চেতনা ও জাগরণে নজরুল’ শীর্ষক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। 

আগামীকাল সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের আয়োজনে জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হবে। জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে ‘চেতনা ও জাগরণে নজরুল’ শীর্ষক অনুষ্ঠান। 

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সচিব ও দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেন। এতে স্বাগত বক্তব্য দেবেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের পরিচালক মেহজাবীন রহমান। 

সাংস্কৃতিক পর্বের শুরুতে সমবেত সংগীত পরিবেশন করবেন- একাডেমির শিল্পীরা। এরপর সমবেত নৃত্য পরিবেশন করবেন একাডেমির নৃত্যশিল্পীরা। এ ছাড়া একাডেমির নবীন কণ্ঠশিল্পী ও নৃত্যশিল্পীরা পরিবেশন করবেন সমবেত সংগীত এবং সমবেত নৃত্য। সবশেষে পরিবেশিত হবে নাটক ‘সেতুবন্ধ’, পরিবেশনায় থাকবে বাঁশরি রেপাট্ররি থিয়েটার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হবে। এ উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীবৃন্দ রবিবার সকাল সোয়া ছয়টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সমবেত হবেন। সেখান থেকে তারা সকাল সাড়ে ৬টায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের নেতৃত্বে শোভাযাত্রা সহকারে কবির সমাধিতে গমন, পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করবেন। পরে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের সভাপতিত্বে কবি’র সমাধি প্রাঙ্গণে এক স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হবে। 

নজরুলের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা একাডেমি এ বছরও নানা আয়োজনে মুখর থাকবে। রবিবার সকালে কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। বিকাল ৪টায় একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে নজরুল বিষয়ক সেমিনার। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম।

সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সরকারি সা’দত কলেজ, টাঙ্গাইলের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জগলুল আসাদ। আলোচনায় অংশ নেবেন ‘বাঙ্গালা গবেষণার’ পরিচালক ও ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির খণ্ডকালীন শিক্ষক আফজালুল বাসার। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক।

এদিকে বিদ্রোহী কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সংবাদপত্রগুলো বিশেষ সংখ্যা ও নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। রেডিও ও টেলিভিশনগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে।

পিপলসনিউজ/আরইউ

-- বিজ্ঞাপন --


CONTACT

ads@peoplenewsbd.com

ড. মইনুলের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারসহ অস্ট্রেলিয়ায় তিন বাড়ির সত্যতা পেয়েছে দুদক ড. মইনুলের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারসহ অস্ট্রেলিয়ায় তিন বাড়ির সত্যতা পেয়েছে দুদক শেখ হাসিনাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে দুটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ শেখ হাসিনাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে দুটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ পাকিস্তানে ভারী বৃষ্টি ও ঝড়ে ১৯ প্রাণহানি পাকিস্তানে ভারী বৃষ্টি ও ঝড়ে ১৯ প্রাণহানি সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আজও বিক্ষোভ সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আজও বিক্ষোভ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে ২ যুবক আহত ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে ২ যুবক আহত