খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরসহ সড়কে নেতাকর্মীদের ঢল
প্রকাশ : ০৬-০৫-২০২৫ ১১:১৩

ছবি : সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক
দীর্ঘ চার মাস পর লন্ডন থেকে দুই পুত্রবধূকে সঙ্গে নিয়ে দেশে ফিরছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। মঙ্গলবার (৬ মে) সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে বহনকারী কাতারের আমিরের বিশেষ ফ্লাইটটির অবতরণ করার কথা।
এদিকে খালেদা জিয়া এবং তার দুই পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান ও সৈয়দা শর্মিলা রহমানকে ঢাকায় বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানাবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির নেতারা। দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সড়কের এক পাশে দাঁড়িয়ে সুশৃঙ্খলভাবে দলীয় ও জাতীয় পতাকা হাতে স্বাগত জানানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে নেতাকর্মী ও সমর্থকরা জনভোগান্তি সৃষ্টি করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবস্থা নিতে দলের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
পরে গুলশানের বাসভবন ফিরোজার উদ্দেশে রওনা হবেন বিএনপি চেয়ারপারসন। এদিকে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে সকাল থেকেই বিমানবন্দরে বিএনপি নেতাকর্মীদের ঢল নেমেছে। নির্ধারিত সময়ের অনেক আগে থেকেই নেতাকর্মীরা বাইরের সড়কে জড়ো হতে শুরু করেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা দলীয় পতাকা ও জাতীয় পতাকা হাতে রাস্তার দুই পাশের ফুটপাতে অবস্থান করছেন। সেখানে তারা বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন। একইসঙ্গে খালেদা জিয়ার আগমন উপলক্ষ্যে বিমানবন্দর এলাকায় অতিরিক্ত জনসমাগমের সম্ভাবনা থাকায় ট্রাফিক পুলিশেরও ব্যাপক তৎপরতা দেখা গেছে।
উত্তরা থেকে শিশু সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে এসেছেন ঢাকা উত্তর যুবদল কর্মী জহিরুল ইসলাম সুমন। তিনি বলেন, প্রিয়মুখ, প্রিয় নেত্রীর আগমন আমাদের আনন্দ দিচ্ছে। ভোরেই চলে এসেছি। নেত্রীকে একনজর দেখতে চাই। জানান দিতে চাই আপসহীন দেশনেত্রী, পাশে আছে পুরো দেশ।
কাপাসিয়া থেকে এসেছেন শাহরিয়ার কবির। তিনি বলেন, ফজরের নামাজ পড়েই রওয়ানা দিয়েছি। প্রায় তিন মাস নেত্রীর দেখা নেই, অসুস্থ ছিলেন। প্রতিদিন তার জন্য দোয়া-খায়ের করেছি। সৃষ্টিকর্তার মেহেরবানীতে তিনি সুস্থ হয়ে দেশে ফিরছেন, এর চেয়ে বড় কিছু হতে পারে না। আজ সেই আপসহীন নেত্রীকে ফুলেল শুভেচছা জানাতে চাই।
উত্তরা থেকে কয়েকজন মিলে এসেছেন যুবদল কর্মী মাহমুদ। তিনি বলেন, আজ আমাদের আনন্দের দিন। গণতন্ত্রের মা দেশে ফিরছেন, নেতা-কর্মীদের আগমনে ভরে গেছে ঢাকা শহর। সাবেক সফল প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার পাশাপাশি শুভেচ্ছা জানাতে এসেছি।
আগারগাঁও থেকে এসেছেন শ্রমিক দলের নেতা বেনু সূত্রধর। তিনি বলেন, প্রাণের তাগিদে এসেছি। প্রিয় নেত্রী সুস্থ হয়ে দেশে আসছেন এটি আনন্দের খবর। আনন্দ উদযাপন করতে েএসেছি। একইসঙ্গে প্রিয় নেত্রীকে এক নজর দেখতে এসেছি।
দলীয় সূত্র জানা গেছে, খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানাতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি অবস্থান করবে বিমানবন্দর থেকে লা মেরিডিয়েন হোটেল পর্যন্ত এলাকায়। ছাত্রদল অবস্থান করবে লা মেরিডিয়েন হোটেল থেকে খিলক্ষেত পর্যন্ত এলাকায়। যুবদল অবস্থান করবে খিলক্ষেত থেকে হোটেল র্যাডিসন পর্যন্ত এলাকায়। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি অবস্থান করবে হোটেল র্যাডিসন থেকে আর্মি স্টেডিয়াম পর্যন্ত এলাকায়। স্বেচ্ছাসেবক দল অবস্থান করবে আর্মি স্টেডিয়াম থেকে বনানী কবরস্থান পর্যন্ত এলাকায়। কৃষক দল অবস্থান করবে বনানী কবরস্থান থেকে কাকলী মোড় পর্যন্ত এলাকায়। শ্রমিক দল অবস্থান করবে কাকলী মোড় থেকে বনানীর শেরাটন হোটেল পর্যন্ত এলাকায়। ওলামা দল, তাঁতী দল, জাসাস, মৎস্যজীবী দল অবস্থান করবে শেরাটন হোটেল থেকে বনানী কাঁচাবাজার পর্যন্ত এলাকায়। পেশাজীবী সংগঠনগুলো অবস্থান করবে বনানী কাঁচাবাজার থেকে গুলশান-২ পর্যন্ত এলাকায়। মহিলা দল অবস্থান করবে গুলশান-২ নম্বর গোলচত্বর থেকে গুলশান অ্যাভিনিউ রোড পর্যন্ত এলাকায়।
এর আগে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সোমবার খালেদা জিয়া লন্ডন থেকে রওনা হন। লন্ডনের স্থানীয় সময় দুপুর দেড়টার দিকে বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মাকে পাশে বসিয়ে গাড়ি চালিয়ে হিথ্রো বিমানবন্দরে যান। একই গাড়িতে দাদির পেছনে বসা ছিলেন তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমান। সেখানে আগে থেকে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার নিয়ে হাজারো নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
জোবাইদা রহমান দেশের মাটিতে পা রাখার মধ্য দিয়ে প্রায় ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটতে যাচ্ছে। জীবনের ঝুঁকি থাকায় জোবাইদাকে বিশেষ নিরাপত্তা দেবে পুলিশ। তবে তাকে নিরাপত্তা দেওয়ার নামে প্রতিবেশীদের বিরক্ত না করতে দলীয় নেতাকর্মীসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন তারেক রহমান। ধানমন্ডিতে জোবাইদা রহমানের বাবার বাসা ‘মাহবুব ভবন’ প্রস্তুত করা হয়েছে। সেখানে জোরদার করা হয়েছে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
অন্যদিকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে আছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ড. মোহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী, বিএনপি নেতা তাবিথ আউয়াল ও গৃহকর্মী ফাতেমা বেগম।
গত ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের লন্ডনে যান খালেদা জিয়া। সেখানে লন্ডন ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার কথা জেনে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি তার যুক্তরাজ্য গমনের জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়েছিলেন। সেটিতেই তিনি লন্ডন যান এবং একই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে দেশে ফিরছেন।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com