weather ৩০.৯৯ o সে. আদ্রতা ৭০% , সোমবার, ১১ আগস্ট ২০২৫, ২৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা বন্ধ, রোগী ও স্বজনদের দুর্ভোগ

প্রকাশ : ৩১-০৫-২০২৫ ১২:৫২

ছবি : সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে টানা চতুর্থ দিনের মতো চিকিৎসাসেবা বন্ধ রয়েছে। চিকিৎসক ও কর্মচারীদের সঙ্গে সম্প্রতি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের মধ্যে সংঘর্ষ ও সহিংস ঘটনার জেরে গত বুধবার (২৮ মে) সকাল থেকেই এই অচলাবস্থা শুরু হয়। এ অচলাবস্থা শনিবার (৩১ মে) পর্যন্ত বহাল রয়েছে। চিকিৎসাসেবা বন্ধ থাকায় প্রতিদিন শত শত রোগী চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন রোগীসহ স্বজনরা।

শনিবার সকালেও হাসপাতালের আউটডোরে দেখা গেছে শত শত রোগীর দীর্ঘ লাইন। কিন্তু চিকিৎসাসেবা বন্ধ থাকায় তারা হতাশ হয়ে ফিরছেন বাড়ি। অনেকেই সকাল থেকে অপেক্ষা করেও চিকিৎসকের দেখা পাননি। আজিমপুর থেকে আসা চোখের রোগে ভোগা বৃদ্ধ আজিজ মিয়া বলেন, সরকারি হাসপাতালে চারদিন ধরে চিকিৎসা বন্ধ। সরকার কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। আমাদের মতো সাধারণ মানুষ কোথায় যাব? বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার মতো সামর্থ্য নেই। এখন আমরা কী করবো?

চলমান সংকট নিরসনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা, ছাত্র ও কর্মচারী প্রতিনিধি এবং জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিনিধিদের নিয়ে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও এখনো কোনো কার্যকর সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি। শুক্রবার (৩০ মে) দুপুরে এমন একটি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের চিকিৎসাধীন জুলাই যোদ্ধা রোহান আহমেদ। তিনি বলেন, আমি এখনো হাসপাতালে আছি। সব ধরনের চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ। ওষুধ ও খাবার বাইরে থেকে এনে চলতে হচ্ছে। শুক্রবার আবার বৈঠক হয়েছিল, কিন্তু তাতেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

গত বুধবার (২৮ মে) অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকেও কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত হয়নি। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সরকারের একাধিক উপদেষ্টা, এনসিপি নেতা নাহিদ ইসলাম, হাসনাত আবদুল্লাহ ও আবু বকর। বৈঠকে আহত আট থেকে ১০ জন জুলাই যোদ্ধাকে ইনস্টিটিউট থেকে অন্যত্র স্থানান্তরের বিষয়ে আলোচনা হয় এবং মৌখিকভাবে একমত হন সকলে। তবে এ পর্যন্ত কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালের ভেতরে জুলাই যোদ্ধাদের একটি অংশের সহিংস আচরণ, কর্মচারীদের ওপর বারবার হামলা এবং বিভিন্ন ইউনিটে ভাঙচুরের ঘটনায় চিকিৎসক ও কর্মীরা আতঙ্কিত। এ পরিস্থিতিতে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তারা কাজে ফিরতে নারাজ।

সাভার থেকে মাকে নিয়ে আসা শান্তা আক্তার বলেন, ‘চোখের জন্য অন্য কোথাও ভালো চিকিৎসাসেবা না থাকায় চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতালই ভরসা। কিন্তু অস্ত্রোপচারের তারিখ চলে গেছে। মায়ের চোখের অবস্থা দিন দিন আরো খারাপ হচ্ছে। দ্রুত অস্ত্রোপচার না হলে বড় সমস্যায় পড়তে হবে।’

সিরাজগঞ্জ থেকে মেয়ে জেসমিন আক্তারকে চোখের চিকিৎসক দেখাতে এনেছেন বাবুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘আগে কখনো এমন বিড়ম্বনায় পড়তে হয়নি। যদি অস্ত্রোপচার না করতে পারি, তাহলে সিরাজগঞ্জে ফেরত যেতে হবে। মেয়ের চোখ থেকে অনবরত পানি পড়ছে। দ্রুত চিকিৎসা করা না হলে চোখ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।’

হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. জানে আলম বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছি। তবে চিকিৎসক ও কর্মীরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত না হয়, তারা কাজে ফিরতে চাইছেন না। চেষ্টা চলছে দ্রুত চিকিৎসাসেবা চালু করার। তবে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যাতে আবার না ঘটে, সেদিকে আমাদের নজর রাখতে হচ্ছে।

হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে এখানে প্রায় ৫০ জন জুলাই যোদ্ধা ভর্তি রয়েছেন। এর বাইরে আত্মহত্যার চেষ্টা করা চারজন বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এবং একজন সিএমএইচে চিকিৎসাধীন। পাশাপাশি, প্রায় ১৫০ জন সাধারণ রোগী ছিলেন, যারা নিরাপত্তার অভাবে হাসপাতালে অবস্থান ত্যাগ করেছেন।

এই অচলাবস্থার শুরু ২৫ মে। সেদিন জুলাই গণআন্দোলনে আহত চারজন রোগী চিকিৎসা অবহেলার অভিযোগ তুলে বিষপান করেন। এরপর পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ২৭ মে ইনস্টিটিউট পরিচালকের কক্ষে গিয়ে আরেক আহত ব্যক্তি নিজের শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এই ঘটনার পর হাসপাতালজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

চূড়ান্ত সহিংসতা ঘটে বুধবার সকাল ১১টার দিকে। সেদিন হাসপাতালে ভর্তি জুলাই যোদ্ধারা, হাসপাতালের কর্মচারী এবং রোগীদের সঙ্গে আসা স্বজনদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ বেধে যায়। এ ঘটনায় পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে ওঠে এবং হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে থমকে যায়।

জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট দেশের অন্যতম বৃহৎ চক্ষু বিশেষায়িত হাসপাতাল। এখানে প্রতিদিন গড়ে এক হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার জন রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। চিকিৎসাসেবা বন্ধ থাকায় এই বিপুলসংখ্যক রোগীকে এখন অন্য হাসপাতালে ছুটতে হচ্ছে, যেখানে হয়তো প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ বা সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে দেশের সাধারণ চক্ষু রোগীদের জন্য এটি একটি ভয়াবহ সংকটে পরিণত হয়েছে।

পিপলসনিউজ/আরইউ

-- বিজ্ঞাপন --


CONTACT

ads@peoplenewsbd.com

পতেঙ্গায় ভেসে এলো দুই জেলের মরদেহ, এখনো নিখোঁজ ৬ জন পতেঙ্গায় ভেসে এলো দুই জেলের মরদেহ, এখনো নিখোঁজ ৬ জন দেশে নতুন ভোটার ৪৫ লাখ, বাদ যাচ্ছে ২১ লাখ দেশে নতুন ভোটার ৪৫ লাখ, বাদ যাচ্ছে ২১ লাখ চট্টগ্রাম বন্দরে ব্রাজিল থেকে আসা কনটেইনারে তেজস্ক্রিয়তা চট্টগ্রাম বন্দরে ব্রাজিল থেকে আসা কনটেইনারে তেজস্ক্রিয়তা পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না সেই আনিসা পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না সেই আনিসা ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশের জন্য কেনা হবে ৪০ হাজার বডি ক্যামেরা ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশের জন্য কেনা হবে ৪০ হাজার বডি ক্যামেরা