দেশে প্রথমবারের মতো টাইফয়েড টিকাদানের ক্যাম্পেইন শুরু
প্রকাশ : ১২-১০-২০২৫ ১১:৪৭

ছবি : সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশে প্রথমবারের মতো একযোগে টাইফয়েড টিকাদানের ক্যাম্পেইন শুরু হলো। নয় মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী প্রায় পাঁচ কোটি শিশুকে বিনামূল্যে ইনজেকটেবল টাইফয়েড টিকা দেওয়ার লক্ষ্যে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়।
রবিবার (১২ অক্টোবর) সকাল ৯টা ২০ মিনিটে রাজধানীর আজিমপুরে স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানা কেন্দ্রে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম আনুষ্ঠানিকভাবে সারাদেশে টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, টাইফয়েডে এখনো দেশের শিশুদের মৃত্যু হয়— এটা আমাদের লজ্জার। ডায়রিয়া, রাতকানা রোগসহ অনেক কিছু আমরা প্রতিরোধ করেছি, এবার টাইফয়েড প্রতিরোধেও সফল হব ইনশাআল্লাহ।
নূরজাহান বেগম বলেন, আমাদের এখন সবচেয়ে বড় লক্ষ্য— রোগ প্রতিরোধ। যত বেশি মানুষ, বিশেষ করে শিশুদের প্রতিরোধমূলক টিকার আওতায় আনা যাবে, ততই হাসপাতালে ভিড় ও চাপ কমবে।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা আরো বলেন, টাইফয়েড এমন একটি রোগ, যা সচেতনতা ও টিকাদানের মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে আমরা যদি প্রতিটি শিশুর কাছে টিকা পৌঁছে দিতে পারি, তাহলে দেশে টাইফয়েডে মৃত্যুর ঘটনা কার্যত বন্ধ করা সম্ভব হবে। এ উদ্যোগ আমাদের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।
এসময় তিনি বলেন, টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন শুধু একটি স্বাস্থ্য প্রকল্প নয়, এটি বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই কর্মসূচি আমাদের শিশুস্বাস্থ্য সুরক্ষায় নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। দীর্ঘদিন ধরে টাইফয়েড একটি নীরব বিপদ হিসেবে থেকে গেছে, বিশেষ করে নিম্নআয়ের পরিবারের শিশুদের জন্য। এবার সরকারের এ উদ্যোগ সেই দুর্বল জায়গায় বড় পরিবর্তন আনবে। আমি আশা করি, সবাই সচেতনভাবে অংশ নেবে এবং তাদের সন্তানদের টিকা নিশ্চিত করবে।
এদিকে রবিবার সকাল সাড়ে ৯টায় ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সায়েদুর রহমান বলেন, টাইফয়েডের টিকাদান পৃথিবীর সবচেয়ে বড় টিকাদান কর্মসূচিগুলোর একটি। এসব বিষয় নিশ্চয়ই আপনারা শুনেছেন। বাংলাদেশ এই সাফল্যের অংশ হতে পেরেছে, যা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়।
তিনি বলেন, আপনারা (শিক্ষার্থীরা) নিজেরা টিকা নেওয়ার পাশাপাশি অন্যদেরও উৎসাহিত করতে পারেন। আমাদের বলা হয়েছে, আগামী বছর থেকে এই টিকাটি সরকারিভাবে বিনামূল্যে দেওয়া নাও হতে পারে। তবে এর অর্থ এই নয়, টিকাটি পাওয়া যাবে না শুধু তখন ব্যক্তিগতভাবে নিতে হতে পারে।
তিনি আরো বলেন, এই টাইফয়েডের ভ্যাকসিনটি প্রায় ১০০ বছরের গবেষণার ফল। এত দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করার পর আজ আমরা কার্যকর টিকা পেয়েছি, যা মানবতার জন্য এক বিশাল অর্জন। আমি আশা করি, আপনারা সবাই দায়িত্বশীলভাবে টিকা গ্রহণ করবেন, অন্যদেরও সচেতন করবেন।
মাসব্যাপী এ ক্যাম্পেইনে শিশুদের বিনামূল্যে এক ডোজ ইনজেকটেবল টাইফয়েড টিকা দেওয়া হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, জন্মসনদ না থাকা শিশুরাও এই টিকার আওতায় আসবে, যাতে কেউ বাদ না পড়ে। এটি দেশের প্রথম জাতীয় টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচি। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট তৈরি করেছে টিকাটি, যা সরকার পেয়েছে আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন সহায়তা সংস্থা গ্যাভির সহায়তায়।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com