চামড়া নিয়ে হতাশ ব্যবসায়ীরা, দরপতনের কী কারণ
প্রকাশ : ০৯-০৬-২০২৫ ১৪:৩৮

ছবি : সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশে কোরবানির পশুর চামড়া একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হলেও প্রতি বছরই ঈদুল আজহার পর এ নিয়ে তৈরি হয় চরম বিশৃঙ্খলা ও হতাশা। সরকারের নানা উদ্যোগ ও দাম নির্ধারণ সত্ত্বেও চামড়ার ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
এবার ঈদুল আজহার চিত্রও হতাশার। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে বিভাগীয় শহর, এমনকি বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পশুর চামড়া পড়ে থাকলেও তা কিনতে দেখা যায়নি কোনো পাইকার বা ট্যানারির প্রতিনিধিকে। ফলে অনেক কোরবানিদাতা বাধ্য হয়ে মসজিদ-মাদ্রাসায় চামড়া দান করেছেন। এসব প্রতিষ্ঠানও পরে পানির দামে সেই চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে।
চামড়া কেনাবেচায় এমন ধসের কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বেশ কয়েকটি যুক্তি উপস্থাপন করেছেন। তাদের মতে, দেশের ট্যানারি মালিকদের মধ্যে সীমিত কয়েকজন রপ্তানির সুবিধা ভোগ করছেন। অন্যদিকে সাধারণ মৌসুমি ব্যবসায়ীরা, যারা মাঠপর্যায়ে চামড়া সংগ্রহ করেন, তারা প্রতি বছরই লোকসানে পড়ছেন। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, চীন একক রপ্তানি গন্তব্য হওয়ায় তাদের মনোপলির সুযোগ নিচ্ছে। পাঁচ ডলারের চামড়া তারা দেড় ডলারে নিতে চায়। ট্যানারি মালিকরাও দাম কম দিয়ে ক্রয় করেন এবং নির্ধারিত মূল্যে কিনতে রাজি হন না। এতে বাজারে ভারসাম্য নষ্ট হয়।
এ ছাড়া চামড়া সংরক্ষণে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় এবং মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ঈদের দিন বা রাতের দিকে চামড়া সংগ্রহ করে আড়তে নিয়ে এলে অনেক সময় তা নষ্ট হয়ে যায়। সেই চামড়া তখন কম দামে বিক্রি করতে হয়। আড়তদাররা তখন দায়সারা মূল্যে কিনে নেন, কারণ চামড়ার টেম্পার বা মান ঠিক থাকে না। দিনের বেলা ভালো মানের চামড়ার দাম কিছুটা বেশি থাকলেও রাতের বেলায় তা হঠাৎ করেই পড়ে যায়। অতিরিক্ত গরম, বৃষ্টি, শ্রমিক সংকট, লবণের সংকট, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, ব্যাংক ঋণের জটিলতা ও ট্যানারিগুলোর অর্থসংকট সব মিলিয়ে বাজারে ধস নেমেছে।
খুলনা, দিনাজপুর, চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ বিভিন্ন অঞ্চলের চিত্রও ভিন্ন ছিল না। কোথাও কোথাও চামড়া বিক্রি হয়েছে মাত্র ১০০ থেকে ৩০০ টাকায়। কেউ কেউ চামড়া বিক্রি না করে ফেলে দিয়েছেন রাস্তার পাশে। অনেক এলাকায় পশুর চামড়া স্তুপ করে রাখা থাকলেও ক্রেতার দেখা মেলেনি। খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, তারা দাম দিয়ে চামড়া কিনলেও ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে সময়মতো টাকা পান না। বছরের পর বছর পাওনা থেকে যাচ্ছে। ফলে পুঁজির ঘাটতির কারণে অনেকেই এবার চামড়া কেনেননি।
চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের অন্যতম কেন্দ্র লালবাগের পোস্তার চিত্রও ছিল একই রকম। আড়তদার ও ট্যানারি প্রতিনিধিরা চামড়া কিনেছেন ৬০০ থেকে ৯০০ টাকায়। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা অনেক সময় বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। অনেক মাদ্রাসা-এতিমখানার ছাত্ররাও বাড়ি বাড়ি গিয়ে চামড়া সংগ্রহ করে তা এনে কমদামে বিক্রি করেছেন। এখানে চামড়ার প্রতি দরদ বা মূল্যায়নের অভাবও লক্ষ্য করা গেছে। লবণ, শ্রমিক ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে অনেক সময় বিক্রি থেকে লাভ তো দূরের কথা, লোকসান গুনতে হয়েছে।
অন্যদিকে হেমায়েতপুরের চামড়াশিল্প নগরী, যেখানে সরকারের পরিবেশবান্ধব প্রকল্প চালু আছে, তাও পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি) সম্পূর্ণভাবে কাজ না করায় আশপাশের নদী দূষিত হচ্ছে এবং ইউরোপ-আমেরিকার বড় বড় ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশি চামড়া নিতে আগ্রহ হারিয়েছে। এ কারণেই বাংলাদেশ এখন চীনের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, যারা দাম কমিয়ে বাংলাদেশি বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে।
চামড়া ব্যবসায়ীরা মনে করেন, সরকার যদি বহুমুখী বাজার তৈরি করতে পারে— বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকা, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশে— তাহলে দেশের বাজারে চামড়ার দাম বাড়বে এবং মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও ন্যায্যমূল্য পাবেন। কাঁচা চামড়া রপ্তানির সুযোগ সম্প্রসারণও জরুরি। যদিও সরকার চলতি বছর তিন মাসের জন্য কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে, কিন্তু রপ্তানির জন্য যেসব প্রস্তুতি ও অবকাঠামো দরকার, তা অধিকাংশ ব্যবসায়ীর নেই। ফলে সেই সুযোগও কাজে লাগাতে পারেননি অনেকে।
এ বছর কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ছিল এক কোটি ২৪ লাখের বেশি। এর মধ্যে ৫৬ লাখ গরু-মহিষ এবং ৬৮ লাখের বেশি ছাগল-ভেড়া ছিল। ট্যানারি মালিকরা এবার ৮০ থেকে ৮৫ লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন। যদিও ব্যবসায়ীদের মতে, বাস্তবে অনেক চামড়া সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। একদিকে নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করতে না পারা, অন্যদিকে সংরক্ষণে সমস্যা ও বাজারে চীনের একক আধিপত্যের কারণে চামড়ার ন্যায্য দাম নিশ্চিত করা যায়নি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, এবার চামড়ার দাম যৌক্তিকভাবেই নির্ধারণ করা হয়েছে। বিনামূল্যে ৩০ হাজার টন লবণ সরবরাহ, প্রশিক্ষণ, নজরদারি বৃদ্ধি ও সিন্ডিকেট ভাঙার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে বাস্তবচিত্র বলছে, এইসব উদ্যোগ কার্যকর হয়নি বা ঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা যায়নি। ফলে প্রত্যাশিত সুফল মেলেনি।
চামড়ার বাজার ঘিরে এই বিশৃঙ্খলা ও লোকসানের ধারা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে সাধারণ মানুষ, মৌসুমি ব্যবসায়ী ও মাদ্রাসাগুলো আরো নিরুৎসাহিত হয়ে পড়বে। জাতীয় এই সম্পদের যথাযথ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হলে প্রয়োজন বাস্তবভিত্তিক নীতিমালা, বাজারের বহুমুখীকরণ, পরিবেশবান্ধব শিল্পায়ন, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ— ট্যানারি মালিক ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের মধ্যে আর্থিক ভারসাম্য ও আস্থা তৈরির উদ্যোগ। অন্যথায় প্রতিবছরই কোরবানির পশুর চামড়া হবে নষ্ট, আর কোটি কোটি টাকার সম্ভাবনা পরিণত হবে লোকসানে।
উত্তরার চামড়া ব্যবসায়ী হেফাজ উল্লাহ বলেন, কোরবানিদাতাদের থেকে ৭৫০ টাকায় চামড়া সংগ্রহ করে রীতিমতো বিপদে পড়তে হয়েছে। এই এলাকায় ভালো মানের চামড়ার দাম উঠেছে সর্বোচ্চ ৮০০ থেকে ৮২০ টাকা। এর উপরে কোনোভাবেই চামড়া বিক্রি করা যায়নি।
বাড্ডার চামড়া ব্যবসায়ী সিরজ উদ্দীন বলেন, কাঁচা চামড়ার চাহিদা এবারো তলানিতে। ভালো দামে চামড়া বিক্রি করতে পারিনি। একটি ভ্যান আর দুইজন লেবার নিয়ে যে খরচ হয়েছে তার তুলনায় মুনাফা হয়নি বললেই চলে। সারাদিনের কষ্ট বৃথা।
খিলক্ষেতের চামড়া ব্যবসায়ী মিজানুর বলেন, আগে জানলে এত দাম দিয়ে চামড়া কিনতাম না। প্রতিবারই ট্যানারি মালিকরা চামড়ার দাম দিতে অনাগ্রহ দেখায়। এতে আমাদের মধ্যেও দাম দিয়ে চামড়া কেনার প্রবণতা দিন দিন কমে যাচ্ছে।
পোস্তায় ৫০ বছর ধরে ব্যবসা করেন হাজি মো. সুজাউদ্দিন তালুকদার। তিনি বলেন, দিনের বেলায় চামড়া দাম ঠিক থাকে। রাত হলে চামড়ার দাম কমে যায়, কারণ তখন চামড়ার টেম্পার থাকে না। অনেক চামড়াতো নষ্ট হয়ে যায়। তখন ফড়িয়ারা আমাদের হাতে পায়ে ধরে। তখন আমরা একটা দাম ধরে চামড়া নেই। সেটিকে আপনি পানির দাম বলতে পারবেন না। সেটি যদি আমরা না করতাম তাহলে এই চামড়াটি ফেলে দিতে হবে। আমরা যে তাদের বেশি দাম দেবো, আমাদেরওতো বিক্রি করতে হবে। আমরা তো সেই চামড়াটা বিক্রি করতে পারিনি। তাহলে বেশি দাম দিয়ে কিনে কী লাভ। এ ছাড়া বাজারে আগের সিন্ডিকেট কাজ করছে। এবছর অনেক বড় ব্যবসায়ী টাকার অভাবে চামড়া কিনতে পারেননি।
আমাদের চামড়ার বাজারে চলে যাচ্ছে চীন ও ভারতে হাতে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা সবাই রপ্তানি করতে চাই। কিন্তু চাহিদা নেই। ট্যানারি মালিকরা ঠিকমতো টাকা দেয় না। বাংলাদেশের চামড়া কেউ নিতে চায় না। পাঁচ ডলারের চামড়া দেড় ডলার বিক্রি হচ্ছে। ফলে আমাদের দেশের বর্ডারের চামড়া সব ভারতে চলে যায়। আর চীন একক আমদানিকারক দেশ হিসেবে। যখন যে দাম মনে করে সেটি দিয়ে থাকে। তারা আমাদের দেশ থেকে চামড়া নিয়ে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করে। ফলে সরকারের রেট দিয়ে আমরা কী করবো। আমাদের চামড়ার বাজার বহুমুখী করণ করতে হবে। ইউরোপ আমেরিকার মতো দেশে যেতে হবে। তাহলে দেশের বাজারে চামড়ার দাম বাড়বে।
পোস্তার ফারুক অ্যান্ড সেলিম কোম্পানির মালিক মো. সেলিম মিয়া বলেন, আমরা চীনের বাজারের ওপর নির্ভরশীল। ইউরোপের ক্রেতারা আসে না। ফলে চীন চামড়া কিনে দ্বিগুণ দামে চামড়া বিক্রি করে। চীন এখন আমাদের দেশে নিজেরা কাঁচা চামড়া কিনছে। ট্যানারি ভাড়া করছে। মন গড়া দাম দিয়ে চামড়া কিনছে। আর আমাদের কেমিক্যালের দাম অনেক বেশি হওয়ায় চামড়াটা যে প্রসেস করবো সেখানে খরচ বেশি হয়। অথচ রপ্তানি করতে গেলে দাম পাওয়া যায় না। চীন ছাড়া আমাদের কোনো পাটি নেই। সরকারকে এ বিষয়ে ভাবতে হবে।
পোস্তার শাকিল এন্টারপ্রাইজের মালিক মো, শাকিল আহমেদ বলেন, চামড়ার দাম কম এবছর, শ্রমিক সংকট, লবণ কম, অতিরিক্ত গরম, বৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া অনেক বড় ব্যবসায়ী চামড়া কিনছেন না। সরকার যে দাম নির্ধারণ করে সেটি যুক্তিযুক্ত হয়নি। ওয়েটব্লু চামড়া রপ্তানি বন্ধ করায়, শুধু হাতে গণা কয়েকটি ট্যানানি রপ্তানি করতে পারে। ট্যানারিরা আমাদের টাকা দিচ্ছে না। কাঁচা চামড়া রপ্তানি করতে পারলে ভালো হতো দাম ভালো পেতাম। সরকার ঘোষণা দিয়ে শেষ। রপ্তানি করতে হলে সক্ষমতা থাকতে হয়। সেটিতো আমাদের নেই। ফলে হাতে গোনা কয়েকটি ট্যানারি মালিক সে সুবিধাটা নেবেন।
গাজীপুরের চামড়া ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিন বলেন, আমরা বিভিন্ন স্থান থেকে চামড়া সংগ্রহ করে বড় পাইকারদের কাছে বিক্রি করি। তারাও দাম দিয়ে চামড়া নিতে চায় না। তারা আমাদের দাম কম দেয় এতে আমাদেরও কম দামে চামড়া কিনতে হয়। চামড়া কেনার পরেও পরিবহনসহ বিভিন্ন খরচ হয়ে থাকে। সরকার চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিলেও সেই দামে বেচাকেনা হয় না।
জানা গেছে, রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে চামড়াশিল্পকে দূষণমুক্ত পরিকল্পিত শিল্পনগরে স্থানান্তরের জন্য ২০০৩ সালে একটি প্রকল্প নেয় সরকার। ২১ বছরেও এই চামড়াশিল্প নগরকে পরিবেশবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা যায়নি। সাভারের হেমায়েতপুরের ২০০ একর জমিতে গড়ে ওঠা এই চামড়াশিল্প নগরের সিইটিপি (কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার) পুরোপুরি কার্যকর না হওয়ায় পাশের ধলেশ্বরী নদী দূষণের শিকার হচ্ছে।
চামড়াখাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, হেমায়েতপুরের চামড়াশিল্প নগরের দূষণ বন্ধ না হওয়ায় ইউরোপ-আমেরিকার বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি বাংলাদেশি চামড়া কিনছে না। ফলে বাংলাদেশি চামড়ার বড় ক্রেতা বর্তমানে চীন। তারা মূল্য কম দেয়।
এবারের ঈদে সব মিলিয়ে ৮০ থেকে ৮৫ লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ট্যানারি মালিকরা। এর সিংহভাগ সংগ্রহ হয়েছে ঈদের প্রথম দিনেই। ঈদের দিন কাঁচা চামড়া আসার এই হারও ছিল সন্তোষজনক। যদিও গতবারের চেয়ে প্রতি পিস চামড়া কিছুটা বেশি দরে কিনছেন বলে দাবি করেন ব্যবসায়ীরা। তাদের অভিযোগ, চামড়া বিক্রি করে ন্যায্যমূল্য মেলেনি। গতবারের চেয়েও দাম কম।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) প্রেসিডেন্ট শাহীন আহমেদ বলেন, এবার চামড়ার মূল্য বরং স্থিতিশীলই ছিল। লবণ ছাড়া ভালো মানের গরুর কাঁচা চামড়া ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়ও বিক্রি হয়েছে। তিনি বলেন, এবছর পশু কোরবানি কম হয়েছে। আমরা এবছর ৮০ থেকে ৮৫ লাখ পিস চামড়া সংরক্ষণ করবো। চামড়ার দাম নিয়ে যে সমস্যা হয় সেটি মূলত সরকারের ব্যবস্থাপনা ঘাটতির কারণে হয়েছে। সরকারকে আগে চামড়ার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। চীনের একচেটিয়া আগ্রাসন থেকে বেরিয়ে ইউরোপ-আমেরিকার বাজার ধরতে হবে।
বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব টিপু সুলতান বলেন, সরকার কাঁচা চামড়া রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা তিন মাসের জন্য তুলে নিয়েছে সেটি ভালো উদ্যোগ। কিন্তু আমাদেরতো সেই সক্ষমতা নেই চামড়া রপ্তানির জন্য। আমাদের আগে সক্ষম করে তুলতে হবে। চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে।
সর্বশেষ ২০১৩ সালে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম বেশি ছিল। সেবার দাম ছিল প্রতি বর্গফুট ৮৫-৯০ টাকা। তারপর থেকে বিভিন্ন কারণে চামড়ার দাম ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে। ২০১৯ সালে কোরবানির পশুর চামড়ার দামে বড় ধরনের ধস নামে। ন্যূনতম দাম না পেয়ে দেশের অনেক অঞ্চলে চামড়া সড়কে ফেলে ও মাটিতে পুঁতে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। তাতে প্রায় ২৪২ কোটি টাকার চামড়ার নষ্ট হয়।
গত ২৬ মে কোরবানি পশুর চামড়ার দর নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে ঢাকায় গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ৬০-৬৫ টাকা; যা গত বছর ছিল ৫৫-৬০ টাকা। ঢাকার বাইরের গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫-৬০ টাকা; যা গত বছর ছিল ৫০-৫৫ টাকা। এ ছাড়া ঢাকায় কাঁচা চামড়ার সর্বনিম্ন দাম এক হাজার ৩৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর ঢাকার বাইরে সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ১৫০ টাকা। এ ছাড়া খাসির লবণযুক্ত চামড়া প্রতি বর্গফুট ২২-২৭ টাকা এবং বকরির চামড়া ২০-২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, আমরা যেহেতু বিনামূল্যে লবণ দিচ্ছি, প্রশিক্ষণ দিয়েছি এবং চামড়ায় লবণ লাগাতে যে শ্রম ব্যয় হয়, সেসব বিবেচনায় নিয়েই এবার চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করেছি। ফলে এবার যে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটি যৌক্তিক। পাশাপাশি চীনের ও ভিয়েতনামে কাঁচা চামড়া রপ্তানির ব্যাপারেও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, এবার ঈদুল আজহায় কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা এক কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৭টি। এরমধ্যে কোরবানিযোগ্য ৫৬ লাখ দুই হাজার ৯০৫টি গরু-মহিষ, ৬৮ লাখ ৩৮ হাজার ৯২০টি ছাগল-ভেড়া ও পাঁচ হাজার ৫১২টি অন্যান্য প্রজাতির প্রাণীর প্রাপ্যতা রয়েছে। এ বছরও ২০ লাখ ৬৮ হাজারের বেশি গবাদিপশু উদ্বৃত্ত থাকতে পারে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) এক প্রতিবেদন বলা হয়েছে, বছরে দেশে প্রায় ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। এই চামড়ার ৬০ শতাংশের বেশি সরবরাহ মেলে কোরবানির মৌসুমে। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ গরুর চামড়া, ৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ ছাগলের, দুই দশমিক ২৫ শতাংশ মহিষের এবং এক দশমিক দুই শতাংশ ভেড়ার চামড়া।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com