weather ২১.৯৯ o সে. আদ্রতা ৬৮% , বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঢাকার ভূমিকম্প ঝুঁকি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা

প্রকাশ : ২১-১১-২০২৫ ২৩:২০

ছবি : সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক
শুক্রবারের (২১ নভেম্বর) পাঁচ দশমিক সাত মাত্রার ভূমিকম্প দেশের মানুষকে নতুন করে কাঁপিয়ে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের চোখে এটি ভবিষ্যতের বড় বিপর্যয়ের একটি স্পষ্ট সতর্কসংকেত। ঢাকার জনবহুল ও ঘনবসতিপূর্ণ নগর কাঠামো, অপরিকল্পিত নির্মাণপদ্ধতি এবং দুর্বল ভূতাত্ত্বিক গঠনের কারণে রাজধানী যে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ- তা আবারো সামনে এনে দিয়েছেন প্রকৌশলী, ভূতত্ত্ববিদ ও গবেষকরা।

তাদের মতে, এখনই কঠোরভাবে ভবন পরিদর্শন, ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা চিহ্নিতকরণ, প্রয়োজনীয় মেরামত এবং নাগরিকদের নিয়মিত মহড়া- এসব ছাড়া ভয়াবহ প্রাণহানি ও অবকাঠামোগত ধস ঠেকানো সম্ভব হবে না। ওই ভূকম্পন শুধু ফাটল ধরানো নয়, আমাদের প্রস্তুতির দুর্বলতাকেও উন্মোচন করে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা তাই জোর দিয়ে বলছেন- ঢাকার ২১ লাখেরও বেশি ভবন পরীক্ষা, কোড অনুযায়ী মূল্যায়ন ও সার্টিফিকেশন এখন আর বিলম্বের অবকাশ রাখে না।

ঢাকার ২১ লাখ ভবন পরীক্ষা করা দরকার, এখনই-অধ্যাপক আনসারী: পুরো দেশকে নাড়িয়ে দেওয়া পাঁচ দশমিক সাত মাত্রার ভূমিকম্পকে ‘ভবিষ্যতের বড় ভূমিকম্পের সতর্কবার্তা’ হিসেবে দেখে এখনই প্রস্তুতি নেওয়ার তাগিদ দিচ্ছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদি আহমেদ আনসারী।

শক্তিশালী ভূমিকম্প হলে ঢাকায় যে বিপর্যয় ঘটে যাবে, সেই বাস্তবতার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলছেন, বিল্ডিংগুলো এখনই চেক করা দরকার। বিশেষ করে ঢাকার এ ভবনগুলোর চেকিং ইমিডিয়েটলি দরকার।

এই প্রকৌশলী বলছেন, এখানে সরকারের কোনো অর্থ ব্যয় হবে না, রাজউককে দিয়ে সাধারণ মানুষকে জানান দেবে, সব ভবন চেক করে সার্টিফিকেট দিয়ে দেবে যে বিল্ডিংগুলো বিল্ডিং কোড অনুযায়ী হয়েছে।

অধ্যাপক মেহেদি আহমেদ আনসারী বলেন, ভূমিকম্পটা বলতে পারি একটা ফোরশক। অর্থাৎ বড় ভূমিকম্প আসার আগে যে ছোট ছোট ভূমিকম্প হয়, তার অন্যতম। 

১৮৯৭ সালে এই ভূখণ্ডে আট দশমিক এক মাত্রার ভূমিকম্পের ইতিহাস মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, এমন ভূমিকম্প ২৫০ থেকে ৩০০ বছর পর পর আসে। ১৯৩০ সালের পর এখানে বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়নি। কিন্তু গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, বড় ভূমিকম্পের শঙ্কা রয়েছে।

শুক্রবারের ভূমিকম্পে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ভবনে ফাটল ধরার প্রসঙ্গ ধরে এ বিশেষজ্ঞ বলেন, এমন ক্ষয়ক্ষতি হবেই। ঢাকা শহরে প্রায় ২১ লাখের মতো বাসা রযেছে। তারমধ্যে ১৫ লাখ একতলা দোতলা বাসা। চার থেকে ছয় তলা ভবন প্রায় ছয় লাখের মত, দশতলা, ২০ তলাও রয়েছে।

একটি বড় ভবন ধসে পড়লে কতটা ক্ষতি হতে পারে, তা বোঝাতে গিয়ে ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের অভিজ্ঞতা মনে করিয়ে দেন অধ্যাপক আনসারী। সেজন্য সরকারকে এখনই বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার তাগাদা দিচ্ছেন তিনি।

তার ভাষ্য, ঢাকার ভবনগুলোর অবস্থা কেন পরীক্ষা করা দরকার, শুক্রবারের ভূমিকম্প তা মনে করিয়ে দিয়ে গেছে।

তিনি বলেন, ভূমিকম্পে ঢাকা শহরের যত বিল্ডিংয়ের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, স্থাপনা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, ভবন দেবে গেছে, ফাটল হয়েছে। রিখটার স্কেলে পাঁচ দশমিক সাত মাত্রায় যে ক্ষতি হয়েছে, সাত মাত্রার হলে ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেড়ে যাবে, ভেঙে যাবে ভবন, হতাহত হবে। ঢাকার ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে এমন ভূমিকম্প হলে দুই থেকে তিন লাখ মানুষ হতহাত হবে, ঢাকা শহরের ৩৫ শতাংশ ভেঙে পড়ার শঙ্কা আছে, অর্থাৎ এক তৃতীয়াংশ ভেঙে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।

সেরকম বিপর্যয় এড়াতে ঢাকার ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করার ওপর জোর দিয়ে এই প্রকৌশলী বলেন, কোনটি ঝুঁকিপূর্ণ দেখে রিপেয়ার করতে হবে, তারপর সার্টিফিকেট দিতে হবে। এখন থেকে গুরুত্ব সহকারের চেকিং করলে, বিল্ডিংগুলোকে সার্টিফিকেট দিলে, কালার ক্লাসিফিকেশন করে ব্যবস্থা নিতে হবে।

অধ্যাপক আনসারী বলেন, আমেরিকা, ভারত, জাপানে ভূমিকম্পের আগে এ ধরনের ক্যাটাগরি করা হয়েছে। আমরাও এভাবে কালার কোড করে বিল্ডিংগুলোকে ট্যাগ করে, ভবনের গায়ে রং বসিয়ে দিতে পারি প্লাকার্ড দিয়ে।

সাম্প্রতিক সময়ে এমন ভূমিকম্প দেখেনি দেশ-সৈয়দ হুমায়ূন আখতার: শুক্রবারের ভূমিকম্পকে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে উৎপত্তি হওয়া সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প বলছেন ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার।

তিনি বলছেন, দুটো প্লেটের সংযোগস্থলে এ ভূমিকম্পটি হয়েছে, ইন্দো-বার্মা টেকটোনিক প্লেটে। কম্পনের তীব্রতা ছিল বেশ। প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার বলেন, যে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি অনুভূত হয়েছে, দেশের পটভূমিতে সাম্প্রতিক সময়ে সর্বোচ্চ।

হুমায়ুন আখতার ভূমিকম্প নিয়ে কাজ করেছেন কয়েক দশক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত আর্থ অবজারভেটরির তত্ত্বাবধায়কও ছিলেন।

তিনি বলেন, শক্তি লকড অবস্থায় ছিল, আটকে ছিল। এটা আনলকিং শুরু হয়েছে। এখন পরবর্তীকালে গ্যাপ দিয়ে আবার ভূমিকম্প হতে পারে। সেক্ষেত্রে একমাত্র উপায় হচ্ছে মহড়া। ভূমিকম্পের সময় দুয়েক কদমের মধ্যে নিরপদ জায়গায় চলে যাওয়া, প্রশিক্ষণ নেওয়া। দেশের যে অবকাঠামোম তা তো পরিবর্তন করা যাবে না। একমাত্র উপায় মহড়া।

অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে ঢাকায় ঝুঁকির মাত্রা সবসময় বেশি জানিয়ে হুমায়ুন আখতার বলেন, ঢাকার এত কাছে গত কয়েক দশকে বড় ভূমিকম্প হয়নি। কয়েক জেনারেশন এরকম ভূমিকম্প দেখেনি।

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান রুবাইয়াত কবির জানান, বাংলাদেশ ইন্ডিয়ান ও ইউরোশিয়ান প্লেটের সংযোগস্থলে হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে এখানে বিভিন্ন সময় কমমাত্রার কম্পন হয়। তিনি বলেন, ডিজিটাল পদ্ধতিতে ২০০৭ সাল থেকে পর্যবেক্ষণ শুরু হওয়ার পর ঢাকার আশপাশে পাঁচ দশমিক সাত মাত্রার কম্পন এবারই প্রথম। বড় ভূমিকম্পের পর সাধারণত পরাঘাত বা ‘আফটারশক’ হওয়ার আশঙ্কা থাকে বলে তিনি জানান। যদিও এখন পর্যন্ত তেমন কিছু হয়নি।

দীর্ঘদিন ধরে ভূমিকম্প নিয়ে গবেষণা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসাইন ভূইয়া। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভূতাত্ত্বিক অবস্থান এমন যে, ভূমিকম্প হওয়া অবশ্যম্ভাবী। দেশের ভৌগোলিক অবস্থান তিনটি টেকটোনিক প্লেট- ইন্ডিয়ান প্লেট, বার্মিজ প্লেট এবং ইউরেশিয়ান প্লেটের সংযোগস্থলের কাছাকাছি হওয়ায় এখানে ভূমিকম্প হওয়ার ঝুঁকি সবসময় বিদ্যমান। বাংলাদেশের ভূগঠন মূলত নরম শিলা দিয়ে তৈরি। তাই নিম্ন ফ্রিকোয়েন্সি ও উচ্চ অ্যাম্পলিচিউডের ভূমিকম্প হলে ক্ষতি বেশি হয়। ভূমিকম্পের কম্পন মাটির নিজস্ব কম্পাঙ্ক ও ভবনের কম্পাঙ্ক একসাথে মিলে গেলে তা আরো বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।

তিনি বলেন, ছোট ছোট ভূমিকম্প প্রতিনিয়ত ঘটছে, যা একেবারেই স্বাভাবিক। পৃথিবীতে প্রতিদিন গড়ে অন্তত ৫০টি ছোট মাত্রার ভূমিকম্প ঘটে। এক থেকে তিন মাত্রার ভূমিকম্প সাধারণত টের পাওয়া যায় না। কিন্তু চার বা তার ওপরে হলে মানুষ তা অনুভব করতে পারে এবং ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কাও তৈরি হয়।

পিপলসনিউজ/আরইউ

-- বিজ্ঞাপন --


CONTACT

ads@peoplenewsbd.com

সাগরতলে সবচেয়ে দীর্ঘ ও গভীর সড়ক বানাচ্ছে নরওয়ে সাগরতলে সবচেয়ে দীর্ঘ ও গভীর সড়ক বানাচ্ছে নরওয়ে বায়ুদূষণে আজ শীর্ষে ঢাকা, বাতাস ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বায়ুদূষণে আজ শীর্ষে ঢাকা, বাতাস ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ রাজধানীতে ভূমিকম্প অনুভূত, উৎপত্তিস্থল নরসিংদী রাজধানীতে ভূমিকম্প অনুভূত, উৎপত্তিস্থল নরসিংদী নিউইয়র্কের ৮ অভিবাসন বিচারককে বরখাস্ত করলেন ট্রাম্প নিউইয়র্কের ৮ অভিবাসন বিচারককে বরখাস্ত করলেন ট্রাম্প খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ দল এভারকেয়ারে খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ দল এভারকেয়ারে