weather ২৮.৯৯ o সে. আদ্রতা ৮৪% , বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দেশে মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশ মাদকাসক্ত, সংখ্যায় ৮৩ লাখ

প্রকাশ : ২৬-০৬-২০২৫ ১৬:৩১

ছবি : সংগৃহীত

পিপলসনিউজ ডেস্ক
লাদেশে মাদকাসক্ত মানুষের সংখ্যা ৮৩ লাখ; যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় পাঁচ শতাংশ। দেশের মাদক পরিস্থিতির ভয়াবহ এই চিত্র উঠে এসেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) পরিচালিত এক সাম্প্রতিক সমীক্ষায়। এই প্রথমবারের মতো ডিএনসি নিজস্ব উদ্যোগে মাদকাসক্তি নিয়ে একটি জাতীয় পর্যায়ের গবেষণা পরিচালনা করেছে।

এর আগে ২০১৮ সালে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের এক সমীক্ষায় দেশে মাদকাসক্ত মানুষের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩৬ লাখ। মাত্র ছয় বছরে সেই সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, দেশে মাদকদ্রব্যের বিস্তার ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।

সমীক্ষাটি পরিচালনায় দেশের আটটি বিভাগের ১৬টি জেলার পাঁচ হাজারের বেশি মানুষের ওপর তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। গবেষকেরা এই কাজে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত গবেষণা পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন। সমীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ৩০ হাজারের (২০২২ সালের জনশুমারি অনুযায়ী) মধ্যে প্রায় ৮৩ লাখ মানুষ কোনো না কোনোভাবে মাদকাসক্ত। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৭৭ লাখ ৬০ হাজার, নারীর সংখ্যা দুই লাখ ৮৫ হাজার এবং শিশু ও কিশোরদের সংখ্যা প্রায় দুই লাখ ৫৫ হাজার।

মাদকাসক্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ আসক্ত গাঁজায়— সংখ্যায় প্রায় ৬১ লাখ; যা মোট মাদকাসক্তের ৫২ শতাংশ। এরপর রয়েছে ইয়াবা— প্রায় ২৩ লাখ (২০ শতাংশ)। মদ্যপানে আসক্ত মানুষের সংখ্যা ২০ লাখ ২৪ হাজার (১৭ শতাংশ)। ফেনসিডিল ও সমজাতীয় তরল মাদক সেবন করেন প্রায় তিন লাখ ৪৬ হাজার মানুষ। হেরোইনে আসক্ত প্রায় তিন লাখ ২০ হাজার। এ ছাড়া প্রায় তিন লাখ মানুষ ঘুমের ওষুধকে মাদক হিসেবে ব্যবহার করেন। ড্যান্ডি বা আঠা দিয়ে আসক্তি সৃষ্টি করেন এক লাখ ৬০ হাজারের মতো মানুষ। শিরায় মাদক গ্রহণ করেন প্রায় ৩৯ হাজার।

সব মাদকসেবনকারীর মধ্যে অনেকে একাধিক ধরনের মাদক গ্রহণ করেন। এই ‘পলিড্রাগ ইউজ’ বিবেচনায় নিয়েই এক কোটি ১৭ লাখের মতো ব্যবহার বিশ্লেষণ করে প্রকৃত মাদকাসক্তের সংখ্যা ধরা হয়েছে ৮৩ লাখ।

এই উদ্বেগজনক তথ্য সামনে আসার প্রাক্কালে, ২৬ জুন পালিত হচ্ছে ‘মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস’। এ বছরের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে: The evidence is clear: invest in prevention. Break the cycle. Stop organized crime. যার বাংলা অর্থ: প্রমাণ স্পষ্ট: প্রতিরোধে বিনিয়োগ করুন। চক্র ভাঙুন। সংঘবদ্ধ অপরাধ বন্ধ করুন।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হাসান মারুফ জানিয়েছেন, ২০১৮ সালের জরিপের পর দেশের জনসংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে মাদকাসক্ত মানুষের সংখ্যা। তিনি স্বীকার করেছেন, সীমিত সম্পদ ও জনবল নিয়েই অধিদপ্তর মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসনের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

এই পরিস্থিতি সম্পর্কে মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি ও পুলিশ সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ উমর ফারুক বলেন, ৮৩ লাখ মানুষ যদি মাদকাসক্ত হয়ে থাকে, তা হলে তা দেশের মাদক পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতিরই প্রমাণ। এটি স্পষ্টভাবে দেখায়, দেশে মাদক নিয়ন্ত্রণ কার্যকরভাবে হচ্ছে না। তার মতে, নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি এবং যথাযথ কার্যক্রমের অভাবেই এই চিত্র তৈরি হয়েছে।

মাদক নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উঠে এসেছে দেশের ভূগোল এবং সীমান্ত নিরাপত্তার দুর্বলতা। প্রতিবছর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ‘ড্রাগ রিপোর্ট’ প্রকাশিত হয়। এ বছরের ‘ড্রাগ রিপোর্ট ২০২৪’-এ বলা হয়েছে, বাংলাদেশ মাদক উৎপাদনকারী দেশ না হলেও ভৌগোলিকভাবে আন্তর্জাতিক মাদক পাচারের তিনটি বড় রুটের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত। এই তিনটি রুট হলো: গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল (মিয়ানমার, লাওস, থাইল্যান্ড), গোল্ডেন ক্রিসেন্ট (ইরান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান) এবং গোল্ডেন ওয়েজ (ভারতের হিমাচল প্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, অরুণাচল প্রদেশ, নেপাল, ভুটান)।

বাংলাদেশের ৩২টি সীমান্তবর্তী জেলা এবং তার মধ্যে চিহ্নিত ১০৪টি ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে ইয়াবা, হেরোইন, ফেনসিডিলসহ নানা ধরনের মাদক দেশে প্রবেশ করছে। বিশেষ করে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা প্রবেশ এখনো অব্যাহত। এমনকি নতুন করে আসা শুরু হয়েছে আরও ভয়াবহ মাদক ক্রিস্টাল মেথ (আইস), যা ইয়াবার মূল উপাদান এবং বহুগুণ বেশি ক্ষতিকর।

দেশে মাদক নিয়ন্ত্রণে কাজ করে একাধিক সংস্থা— মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি ও কোস্টগার্ড। তবে বাস্তবতা হলো, অভিযানে অধিকাংশ সময়ই ধরা পড়ে ছোট ব্যবসায়ী ও সেবনকারী; অথচ মাদকের মূল গডফাদারদের ধরতে কার্যকর কোনো উদ্যোগ খুব কমই দেখা যায়। মাদক মামলার তদন্ত ও সাক্ষ্যগ্রহণেও দুর্বলতা রয়েছে। ২০২৪ সালে তিন হাজার ৬৯৮টি মাদক মামলার মধ্যে ৫৫ শতাংশেই সব আসামি খালাস পেয়েছেন।

এই বাস্তবতা নিয়ে বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, দুটি জিনিস আমরা এখনো নিয়ন্ত্রণে আনতে পারিনি— এক, মাদক; দুই, দুর্নীতি। শুধু মাদক বহনকারীদের ধরলে হবে না, গডফাদারদের ধরতে হবে। তিনি জানান, অধিদপ্তরকে এক হাজার ৪০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা মাদক নিয়ন্ত্রণে আরো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদকের বিস্তার তরুণ সমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এতে করে শিক্ষাজীবন, কর্মজীবন ও পারিবারিক শান্তি— সবই বিঘ্নিত হচ্ছে। মাদকসেবীরা নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক রোগে আক্রান্ত হন, সমাজে অপরাধ বাড়ে, বাড়ে স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় এবং দেশের অর্থনীতি ক্ষতির মুখে পড়ে।

জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা আঙ্কটাডের ২০২৩ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু মাদক ব্যবসা ও পাচারের কারণে বাংলাদেশ থেকে বছরে পাচার হয়ে যায় ৪৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার, যার পরিমাণ প্রায় পাঁচ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম।

মাদক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো দেশে চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। ঢাকার কেন্দ্রীয় মাদক নিরাময় কেন্দ্রসহ চারটি বিভাগীয় শহরে সরকারি পর্যায়ে মাত্র ১৯৯ জনকে একসঙ্গে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে ৫০টি শয্যা ও পাবনা মানসিক হাসপাতালে ৩০টি শয্যা মাদকাসক্তদের জন্য বরাদ্দ। অর্থাৎ, সরকারি ব্যবস্থায় একসঙ্গে সর্বোচ্চ ২৭৯ জনকে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব।

বেসরকারি পর্যায়ে মোট ৩৮৭টি মাদক নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে। সরকার নতুন করে ঢাকায় ২৫০ শয্যার একটি এবং বাকি সাতটি বিভাগে ২০০ শয্যার করে আরও সাতটি আধুনিক পুনর্বাসন ও নিরাময় কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে।

পিপলসনিউজ/আরইউ

-- বিজ্ঞাপন --


CONTACT

ads@peoplenewsbd.com

যুক্তরাষ্ট্রকে সজোরে চপেটাঘাত করেছে ইরান যুক্তরাষ্ট্রকে সজোরে চপেটাঘাত করেছে ইরান ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত: সিআইএ প্রধান ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত: সিআইএ প্রধান সুষ্ঠু পরিবেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এইচএসসি পরীক্ষা: শিক্ষা উপদেষ্টা সুষ্ঠু পরিবেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এইচএসসি পরীক্ষা: শিক্ষা উপদেষ্টা দেশে মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশ মাদকাসক্ত, সংখ্যায় ৮৩ লাখ দেশে মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশ মাদকাসক্ত, সংখ্যায় ৮৩ লাখ ‘মহান নায়ক’ নেতানিয়াহু, তাকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিত: ট্রাম্প ‘মহান নায়ক’ নেতানিয়াহু, তাকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিত: ট্রাম্প