weather ২০.৯৯ o সে. আদ্রতা ৭৮% , বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পাল্টা শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি এ মাসেই

প্রকাশ : ০৩-০৮-২০২৫ ১০:৩৮

ছবি : সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা ইতোমধ্যে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এই ঘোষণার পরেও এখন পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো চুক্তি স্বাক্ষর হয়নি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, আগস্ট মাসের মধ্যেই এই চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তর (ইউএসটিআর) বর্তমানে চুক্তির খসড়া তৈরির কাজ করছে। খসড়া চূড়ান্ত হলে তা পাঠানো হবে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সেই খসড়া পর্যালোচনা করে মতামত দেবে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে উভয় দেশের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে নির্ধারিত দিনে যুক্তরাষ্ট্রেই এই চুক্তি স্বাক্ষর হবে।

পাল্টা শুল্ক কার্যকরের তারিখ ৭ আগস্ট নির্ধারণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও তা এখনো কার্যকর হয়নি, তবে এই পুরো বিষয় নিয়ে শিগগিরই বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একটি যৌথ বিবৃতি দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তোজার সঙ্গে গত শুক্রবার রাতে আলাপের সময় তিনি যৌথ বিবৃতির বিষয়ে আলোচনা করেছেন।

শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, পাল্টা শুল্ক নিয়ে আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই। এর সাফল্য বা ব্যর্থতা নির্ভর করবে মূলত বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সক্ষমতার ওপর। তিনি আরো জানান, জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি ‘নন ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট’ (এনডিএ) সই করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এই চুক্তির মাধ্যমে উভয় পক্ষ আলোচনার নির্দিষ্ট কিছু বিষয় গোপন রাখার অঙ্গীকার করে।

তিনি বলেন, দুঃখজনকভাবে এনডিএ সম্পর্কিত কিছু তথ্য ফাঁস হয়ে গেছে। যদিও এতে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী কিছু নেই। বরং আলোচনার মাধ্যমে সম্ভাব্য স্বার্থবিরোধী বিষয়গুলো থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজে পেয়েছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতির ভিত্তিতেই চুক্তিটি প্রকাশ করা হবে।

বাণিজ্য উপদেষ্টা এনডিএর যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, স্থানীয়ভাবে দুটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, এমনকি ব্যাংক-বীমা কোম্পানিও যখন কোনো চুক্তি করে, তখন এনডিএ স্বাভাবিক বিষয়। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় নিরাপত্তাকে চুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচনা করছে, তাই আলোচনা চলাকালীন গোপনীয়তা বজায় রাখা অপরিহার্য।

তিনি আরো বলেন, যদি চুক্তি করতে গিয়ে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিতে হয়, তাহলে তা কোনোভাবেই বোধগম্য নয়। দেশের সামগ্রিক বাণিজ্যিক সক্ষমতা ক্ষুণ্ন হলে স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদে কোনো চুক্তিই লাভজনক হবে না।

বাণিজ্য আলোচনায় বহুল আলোচিত একটি ইস্যু হলো যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং কোম্পানি থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কেনার বিষয়টি। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য উপদেষ্টা জানান, আলোচনায় বিষয়টি উল্লেখই হয়নি। তিনি বলেন, বোয়িং গত বছর মাত্র ১২টি উড়োজাহাজ নির্মাণ করেছে, সেক্ষেত্রে এই চুক্তি কার্যকর হলেও তারা ২০৩৭ সালের আগে প্রথম উড়োজাহাজ সরবরাহ করতে পারবে না।

বোয়িংয়ের উড়োজাহাজকে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করছেন না বাণিজ্য উপদেষ্টা। তার মতে, যদি বিমান পরিচালনা সক্ষমতা না বাড়ানো যায়, তাহলে নতুন উড়োজাহাজ কিনে তেমন লাভ নেই। তিনি জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশ বিমানের পরিচালন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে চেষ্টা করছে। বর্তমানে বিমানের সক্ষমতা রয়েছে বছরে এক কোটি যাত্রী পরিবহনের। এই প্রেক্ষাপটে ২৫টি উড়োজাহাজ খুব বড় কোনো সংখ্যা নয়।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আলোচনায় মূলত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কৃষিপণ্যের ওপর। বাণিজ্য উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশ প্রতিবছর এক হাজার ৫০০ কোটি থেকে দুই হাজার কোটি ডলারের খাদ্যপণ্য আমদানি করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে কৃষিপণ্যের অন্যতম বৃহৎ উৎপাদক দেশ। ফলে, এই পণ্যগুলো আমদানি বাড়ানো হলে বাণিজ্য ঘাটতি কমানো সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ বর্তমানে প্রায় ৬০০ কোটি ডলার। এই ঘাটতি কমাতে তুলা, সয়াবিন, ভুট্টা, গমজাতীয় কৃষিপণ্যের আমদানি বাড়ানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। এসব পণ্য এমনিতেই আমদানি করতে হয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তোজা জানিয়েছেন, বাণিজ্যচুক্তির খসড়া তৈরির কাজ চলমান রয়েছে এবং চলতি আগস্ট মাসের মধ্যেই চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্র মতে, জুনে এনডিএ স্বাক্ষরের পর যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কাছে বাণিজ্যচুক্তির জন্য বেশ কিছু শর্ত পাঠায়। এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা, ডিজিটাল বাণিজ্য ও প্রযুক্তি, উৎসনির্ধারণ বিধি, জাতীয় নিরাপত্তা এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক বিষয়ক বাধ্যবাধকতা। একই সঙ্গে চীন থেকে পণ্য আমদানি কমানো এবং যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের বাংলাদেশে অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ও রয়েছে।

চুক্তিতে আরো বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও বেসামরিক উড়োজাহাজ এবং যন্ত্রাংশ আমদানি বাড়ানো, তাদের জ্বালানি তেল ও ভোজ্যতেল আমদানি বৃদ্ধি, এলএনজি আমদানিতে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করা এবং গম আমদানির পরিমাণ বাড়ানোর বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে। এই চুক্তি সম্পাদনের পর তা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকেও (ডব্লিউটিও) জানাতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি হচ্ছে, তাদের গাড়ি ও যন্ত্রাংশ বাংলাদেশে সহজে প্রবেশ করতে দিতে হবে এবং এসব পণ্যের আমদানিতে কোনো বাড়তি পরীক্ষা-নিরীক্ষা যেন না হয়। এ ছাড়া শ্রমসংক্রান্ত বিষয়েও রয়েছে কিছু কঠিন শর্ত। যেমন- ইপিজেডে শ্রমিকদের সংগঠন গঠনের পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করতে হবে এবং ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন করা পোশাক শ্রমিক ও শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

তবে এসব শর্তের কিছু অংশ ফাঁস হয়ে যাওয়ায় বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। গত ১৬ জুলাই এই তথ্য ফাঁসের অভিযোগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দ্বিতীয় সচিব ও উপকর কমিশনার মুকিতুল হাসানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এনবিআরের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, তিনি রাষ্ট্রের অত্যন্ত গোপনীয় দলিল প্রকাশ করেছেন; যা চাকরির শৃঙ্খলা পরিপন্থী আচরণ। তার বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

চুক্তির আনুষ্ঠানিকতা এবং তা ঘিরে নানা শর্ত ও বিতর্কের মধ্যেই বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বাণিজ্য সক্ষমতা ধরে রাখা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি ভারসাম্যপূর্ণ, স্বার্থ-সুরক্ষিত চুক্তি সম্পাদন। এখন দেখার বিষয়, আগস্ট মাসের মধ্যেই এই চুক্তি কার্যকর হয় কি না এবং তা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কী ধরনের প্রভাব ফেলে।

পিপলসনিউজ/আরইউ

-- বিজ্ঞাপন --


CONTACT

ads@peoplenewsbd.com

সাগরতলে সবচেয়ে দীর্ঘ ও গভীর সড়ক বানাচ্ছে নরওয়ে সাগরতলে সবচেয়ে দীর্ঘ ও গভীর সড়ক বানাচ্ছে নরওয়ে বায়ুদূষণে আজ শীর্ষে ঢাকা, বাতাস ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বায়ুদূষণে আজ শীর্ষে ঢাকা, বাতাস ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ রাজধানীতে ভূমিকম্প অনুভূত, উৎপত্তিস্থল নরসিংদী রাজধানীতে ভূমিকম্প অনুভূত, উৎপত্তিস্থল নরসিংদী নিউইয়র্কের ৮ অভিবাসন বিচারককে বরখাস্ত করলেন ট্রাম্প নিউইয়র্কের ৮ অভিবাসন বিচারককে বরখাস্ত করলেন ট্রাম্প খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ দল এভারকেয়ারে খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ দল এভারকেয়ারে