weather ২৬.৯৯ o সে. আদ্রতা ৯৪% , বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পুলিশের ১৩৫৩ অস্ত্র এখনও বেহাত, পুরস্কার ঘোষণার তিন সপ্তাহেও নেই সাড়া

প্রকাশ : ১৫-০৯-২০২৫ ১১:৫৬

ছবি : সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক
অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা সত্ত্বেও পুলিশের বেহাত হওয়া অস্ত্রের খোঁজ এখনো মিলছে না। প্রায় তিন সপ্তাহ আগে সরকার ঘোষণা দিয়েছিল, লুট হওয়া অস্ত্র বা গুলির সন্ধান দিলে অর্থ পুরস্কার দেওয়া হবে। কিন্তু সময় গড়ালেও তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত পুলিশের এক হাজার ৩৫৩টি আগ্নেয়াস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সারাদেশে উত্তাল পরিস্থিতি তৈরি হয়। সেসময় বিভিন্ন থানায়, পুলিশ ফাঁড়িতে, পুলিশ বক্সে এবং পুলিশের অন্যান্য স্থাপনায় ব্যাপক হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ ঘটে। এই অরাজকতার মধ্যেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অস্ত্রাগারগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট হয়ে যায়। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, মোট পাঁচ হাজার ৭৬৩টি অস্ত্র লুট হয় এবং বেহাত হয় ছয় লাখ ৫২ হাজার আট রাউন্ড গুলি। এ পর্যন্ত পুলিশ চার হাজার ৪১০টি অস্ত্র ও তিন লাখ ৫৪ হাজার ৩৪৯ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করতে সক্ষম হলেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি। 

লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে জনগণের সহায়তা চেয়ে সরকার গত ২৫ আগস্ট সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে পুরস্কার ঘোষণা করে। ওইদিন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, লুট হওয়া অস্ত্র বা গুলির সন্ধান দিতে পারলে আর্থিক পুরস্কার দেওয়া হবে। তার ঘোষণায় বলা হয়, লুট হওয়া পিস্তল ও শটগানের খবর দিলে ৫০ হাজার টাকা, চায়না রাইফেলের জন্য এক লাখ টাকা, এসএমজি (স্মল মেশিনগান)-এর জন্য দেড় লাখ টাকা এবং এলএমজির (লাইট মেশিনগান) সন্ধান দিলে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়া হবে। এ ছাড়া লুট হওয়া প্রতিটি গুলির খোঁজ দিলে মিলবে ৫০০ টাকা করে।

পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্র জানায়, লুট হওয়া অস্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের রাইফেল, এসএমজি, এলএমজি, পিস্তল, শটগান, গ্যাসগান, কাঁদানে গ্যাস লঞ্চার, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও স্প্রে, সাউন্ড গ্রেনেডসহ নানা ধরনের গুলি। এর বাইরে আরও অনেক ট্যাকটিক্যাল গিয়ার, বেতার সেট ও অপারেশনাল সরঞ্জামও লুট হয়। গণভবন ও জাতীয় সংসদ ভবনে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এসএসএফের অস্ত্রভাণ্ডার থেকেও সেদিন বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-গোলাবারুদ বেহাত হয়।

অন্যদিকে, একই আন্দোলনের সময় দেশের বিভিন্ন কারাগার থেকেও ব্যাপক বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছিল। কারা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই আন্দোলনের সময় মোট দুই হাজার ২০০ আসামি কারাগার থেকে পালিয়ে যান। তাদের মধ্যে এক হাজার ৫০০ জনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হলেও এখনো ৭০০ জন পলাতক। পলাতকদের মধ্যে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ও অতি ঝুঁকিপূর্ণ ৭০ জন আসামিও রয়েছেন, যাদের ধরতে পুলিশ ও গোয়েন্দারা বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সারাদেশে চলমান অভিযানে অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। যদিও ঘোষিত পুরস্কার এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য সাড়া ফেলতে পারেনি, তবু পুলিশ আশাবাদী যে নির্বাচনের আগে অস্ত্র উদ্ধারে বড় অগ্রগতি হবে। তিনি বলেন, সামনে জাতীয় নির্বাচন রয়েছে, আর এ সময় অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়টি সরকারের প্রধান অগ্রাধিকারগুলোর একটি।

পুলিশের আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, গোয়েন্দারা ইতোমধ্যে খতিয়ে দেখছেন লুট হওয়া অস্ত্র কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বা অপরাধীদের হাতে পৌঁছেছে কিনা। প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, পেশাদার অপরাধীদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া বেশ কিছু অস্ত্র আসলে গত বছরের ওই অভ্যুত্থানকালে লুট করা।

এই পরিস্থিতি নিয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, আগ্নেয়াস্ত্র দীর্ঘ সময় ধরে বেহাত থাকলে তা সন্ত্রাসী, বিচ্ছিন্নতাবাদী, উগ্রবাদী কিংবা সুযোগসন্ধানী অপরাধচক্রের হাতে চলে যেতে পারে। এতে শুধু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিই নয়, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাও মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন এলাকায় লুট হওয়া অস্ত্র দিয়ে অপরাধ সংঘটিত হওয়ার নজির পাওয়া গেছে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গত বছরের ২৯ আগস্ট চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী এলাকায় ব্যবসায়ী মো. আনিছকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া পাঁচটি গুলির খোসায় ‘পুলিশ’ লেখা ছিল। আবার ১৪ নভেম্বর কক্সবাজারের মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়নে কোস্টগার্ডের অভিযানে ডাকাত দলের প্রধান জিয়াউর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়, যা লুট হওয়া পুলিশের অস্ত্র ভাণ্ডার থেকে নেওয়া হয়েছিল। জিয়াউর স্বীকার করেন, তিনি আগে অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করলেও চট্টগ্রামে পুলিশের স্থাপনা থেকে লুট করা অস্ত্র দিয়ে আবারো ডাকাতি শুরু করেন।

এমন ঘটনার পর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি দ্রুত হারানো অস্ত্র উদ্ধার না করা যায়, তবে অপরাধ দমনে চরম ব্যাঘাত ঘটবে। একইসঙ্গে জনগণের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়বে, যা দেশের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরো অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।

পিপলসনিউজ/আরইউ

-- বিজ্ঞাপন --


CONTACT

ads@peoplenewsbd.com

চার পদ্ধতিতে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের, জানালেন আলী রীয়াজ চার পদ্ধতিতে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের, জানালেন আলী রীয়াজ ভালো থাকুক বাংলাদেশ, আদালতে সাংবাদিকদের বললেন ব্যারিস্টার সুমন ভালো থাকুক বাংলাদেশ, আদালতে সাংবাদিকদের বললেন ব্যারিস্টার সুমন দুদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে যুক্তরাজ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প দুদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে যুক্তরাজ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প সাতরাস্তা মোড়ে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ, তীব্র যানজট সাতরাস্তা মোড়ে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ, তীব্র যানজট লন্ডনে বোরকা পরায় বাংলাদেশিকে হেনস্থা, বাবা ও ছেলে আটক লন্ডনে বোরকা পরায় বাংলাদেশিকে হেনস্থা, বাবা ও ছেলে আটক