লন্ডন নেওয়া হবে খালেদা জিয়াকে
প্রকাশ : ০৫-১২-২০২৫ ০১:৪১
ছবি : সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের লন্ডনে নেওয়া হচ্ছে। কাতারের আমিরের দেওয়া এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে তাকে লন্ডন নেওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) বেলা তিনটার আগে এভারকেয়ার হাসপাতালে সাংবাদিকদের এ জেড এম জাহিদ হোসেন খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান। জাহিদ খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক, তিনি খালেদা জিয়ার সফরের সঙ্গীও।
জানা যায়, সবকিছু ঠিক থাকলে খালেদা জিয়াকে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের পরে অথবা শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) ভোরে লন্ডনে নেওয়া হবে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুসারে তাকে লন্ডনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, কারিগরি ত্রুটির কারণে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় পৌঁছাতে দেরি হতে পারে। সেক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার যাত্রা বিলম্ব হতে পারে।
বৃহস্পতিবার বেলা তিনটার পরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ব্রিফ করেন। তিনি জানান, রাতের মধ্যেই কাতারের আমিরের পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্স এসে পৌঁছানোর কথা। শুক্রবার ভোরের মধ্যে খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স লন্ডন যাত্রা করবে।
এর আগে ব্রিফিংয়ে ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, মেডিক্যাল বোর্ডের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত এবং খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থার ভিত্তিতে তাকে কাতার রয়্যাল এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডনের একটি নির্ধারিত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
জাহিদ হোসেন বলেন, বিমানে যাতে যেকোনো প্রতিকূলতার মধ্যেও তাকে সুস্থভাবে চিকিৎসা দেওয়া যায়, সেই লক্ষ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক পরিস্থিতি জানতে চাইলে জাহিদ হোসেন বলেন, মেডিক্যাল বোর্ডের পরামর্শের বাইরে কিছু চিন্তা করা হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে বৃহস্পতিবার তিনবার ভার্চ্যুয়ালি মিটিং করা হয়েছে। যুক্তরাজ্য ও চীনের চিকিৎসকেরা সশরীর দেখেছেন। তাদের সবার সঙ্গে সর্বশেষ আলোচনা হয়েছে।
১২ দিন ধরে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে বলে জানা গেছে। তাকে নিয়ে দেশের মানুষ উদ্বেগে রয়েছে।
এভারকেয়ার হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের অধীন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে।
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার ফুসফুসে সংক্রমণের কারণে যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল, সেটা কিছুটা উন্নতির দিকে। তবে হৃদ্যন্ত্রে জটিলতা রয়েছে। বাকি সমস্যাগুলো অনেকটাই অপরিবর্তিত।
বুধবার রাতে চীন থেকে দেশটির চারজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ঢাকায় আসেন। রাতেই তারা খালেদা জিয়ার মেডিক্যাল বোর্ডে যোগ দেন। এর আগে দুপুরে যুক্তরাজ্য থেকে ঢাকায় আসেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রিচার্ড বেলে। তিনি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে সরাসরি এভারকেয়ার হাসপাতালে যান। খালেদা জিয়াকে দেখেন। এই চিকিৎসকেরা বুধবারই খালেদা জিয়ার সর্বশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রতিবেদনগুলো দেখেছেন।
উন্নত চিকিৎসার জন্য গত জানুয়ারি মাসে লন্ডনে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। সেখানে প্রথমে হাসপাতালে, পরে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় থেকে তিনি চিকিৎসা নেন। প্রায় চার মাস পর গত ৬ মে তিনি দেশে ফেরেন।
গত ২৩ নভেম্বর রাতে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরীক্ষায় ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ায় তাকে ভর্তি করা হয়। গত রোববার ভোরের দিকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে এসডিইউ থেকে সিসিইউতে নেওয়া হয়।
এদিনে অন্তর্বর্তী সরকার মঙ্গলবার খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রের ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ (ভিভিআইপি) ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেয়। এর মধ্য দিয়ে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্ব এসএসএফকে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়। এরপর মঙ্গলবারই এসএসএফ ও পিজিআর সদস্যরা এভারকেয়ার এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্ব নেয়।
তিন বাহিনীর প্রধানদের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান মঙ্গলবার রাতে এভারকেয়ারে গিয়ে খালেদা জিয়াকে দেখে আসেন। এরপর বুধবার রাতে সেখানে যান প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
সঙ্গে যাবেন ১৪ জন, থাকবেন পুত্রবধূ শামিলা, ছয় চিকিৎসক: বিএনপির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন ১৪ জন। ওই সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার সঙ্গে যে ১৪ জন যাচ্ছেন তারা হলেন, খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ সৈয়দা শামিলা রহমান, চিকিৎসক আবু জাফর মো. জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী, চিকিৎসক ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকি, চিকিৎসক মো. শাহাবুদ্দিন তালুকদার, চিকিৎসক নূরউদ্দিন আহমদ, চিকিৎসক মো. জাফর ইকবাল, চিকিৎসক মোহাম্মদ আল মামুন, স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) হাসান শাহরিয়ার ইকবাল, স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের সৈয়দ সামিন মাহফুজ, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সহকারী মো. আবদুল হাই মল্লিক, সহকারী ব্যক্তিগত সচিব মো. মাসুদুর রহমান, গৃহকর্মী ফাতেমা বেগম ও গৃহকর্মী রূপা শিকদার।
রাতে আসছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স-ফখরুল: মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আপনারা ইতোমধ্যে শুনেছেন যে কাতার আমির তার নিজের উদ্যোগে, তার মহানুভবতায় আমরা একটা অত্যন্ত উন্নতমানের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পেয়েছি। যেটা রাতের (বৃহস্পতিবার) মধ্যেই এখানে এসে পৌঁছাবে এবং সম্ভবত খুব ভোরেই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে তারা যুক্তরাজ্যে চলে যাবে। আনুষঙ্গিক যে সমস্ত কাজগুলো দরকার সেই কাজগুলো আমরা সেরে ফেলেছি এবং এখান থেকে আপনারা এর মধ্যে শুনেছেন যে কারা কারা যাচ্ছেন। ম্যাডামের সঙ্গে একটি চিকিৎসক দল যাচ্ছেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, কাতারের আমিরের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি অত্যন্ত আধুনিক একটা এয়ার অ্যাম্বুলেন্স। এর মধ্যে অপারেশন থিয়েটার থেকে শুরু করে সব ব্যবস্থাই রয়েছে। আমরা পরম করুণাময় আল্লাহ তাআলার কাছে এই দোয়া চাচ্ছি, যে আল্লাহ তাআলা তাকে যেন সুস্থভাবে নিয়ে যান, নিরাপদভাবে নিয়ে যান এবং সুস্থভাবে আমাদের মাঝে আমরা যেন তাকে ফিরে পেতে পারি।
বিএনপির তরফে দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে তিনি বলেন, দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী, গণতন্ত্রের আপোষহীন নেত্রী এবং এই মুহূর্তে যিনি, দেশের দলমত নির্বিশেষে সমগ্র মানুষের কাছে যিনি একজন অভিভাবক হিসেবে পরিচিত এবং যার অসুস্থতার কারণে সারাদেশের প্রতিটি মানুষ তার জন্য দোয়া করছেন তার রোগ মুক্তির জন্যে। তার উন্নত চিকিৎসার জন্যে দেশি-বিদেশি ডাক্তারদের নিয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে দেশনেত্রীকে যুক্তরাজ্যের একটি উন্নত হাসপাতালে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবও সায় জানিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com