প্যালেস্টাইন অ্যাকশনের পক্ষে বিক্ষোভ, যুক্তরাজ্যে গ্রেপ্তার ৪৬৬
প্রকাশ : ১০-০৮-২০২৫ ১১:৫৪

ছবি : সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টারে পার্লামেন্ট স্কয়ারে এক বিক্ষোভ থেকে শনিবার (৯ আগস্ট) অন্তত ৪৬৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে মেট্রোপলিটন পুলিশ।
পুলিশ বলেছে, যুক্তরাজ্যে ফিলিস্তিনিদের অধিকার নিয়ে কাজ করা ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’ নামের একটি গ্রুপকে নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদে এ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। ডিফেন্ড আওয়ার জুরিস নামের একটি ক্যাম্পেইন গ্রুপ এ বিক্ষোভ আয়োজন করে বলে বিবিসির খবরে বলা হয়।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পুলিশ জানিয়েছে, পার্লামেন্ট স্কয়ারে জড়ো হয়ে বিক্ষোভকারীরা হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’-এর পক্ষে সমর্থন জানানোয় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিবিসি জানায়, বিক্ষোভের শুরুতে পার্লামেন্ট স্কয়ারে ৫০০ থেকে ৬০০ জন ছিলেন। তাদের মধ্যে অনেক দর্শক, সাংবাদিক ছিলেন। আবার এমন অনেকে ছিলেন, যাদের হাতে প্যালেস্টাইন অ্যাকশনের সমর্থনে কোনো প্ল্যাকার্ড ছিল না। তাদের মধ্যে নিষিদ্ধ সংগঠনটিকে সমর্থন করার অভিযোগে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ ৩৬৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে আরো অনেককে গ্রেপ্তার করার খবর দেয় রয়টার্স। এ ছাড়া পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে পাঁচজনসহ সাত ব্যক্তি গ্রেপ্তার হয়েছেন। তবে পুলিশ সদস্যরা গুরুতর আহত হননি।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়, লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ বিভাগ সামাজিকমাধ্যম এক্সে এক বার্তায় বলেছে, এ পর্যন্ত ৪৬৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে তারা।
ঘটনাস্থল থেকে রয়টার্সের ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীদের কেউ কেউ ফিলিস্তিনি পতাকার মতো সাদা-কালো স্কার্ফ পড়েছেন। তাদের ‘আপনাদের লজ্জা পাওয়া উচিত’ এবং ‘গাজা থেকে হাত গুটাও’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে শোনা গেছে। পাশাপাশি ‘আমি গণহত্যার বিরোধী, প্যালেস্টাইন অ্যাকশনের সমর্থক’-এর মতো বিভিন্ন স্লোগান-সংবলিত প্ল্যাকার্ড বহন করতে দেখা গেছে।
বিক্ষোভকারী প্যাডি ফ্রেন্ড বলেন, ‘যদি আমরা সাতটি শব্দের একটি সাইন নিয়ে চুপচাপ বসতে না পারি, তবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মানে কী?’ অন্যদিকে পূর্বে গ্রেপ্তার হওয়া এক বিক্ষোভকারী, নানী মানজি ম্যান্সফিল্ড আবারো মাঠে নেমে বলেন, ‘এটা সেই ব্রিটেন নয় যেখানে আমি বড় হয়েছি। আমরা যেন এক ভিন্ন বাস্তবতায় বাস করছি, যা আমি মেনে নেব না।’
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যুক্তরাজ্য বলেছে, শুধুমাত্র ব্যানার বা সাইনবোর্ড হাতে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করার কারণে গ্রেপ্তার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের পরিপন্থী। লেবার পার্টির এমপি জন ম্যাকডোনেলও গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ‘গণতান্ত্রিক অধিকারের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য মানুষকে গ্রেপ্তার করা লজ্জাজনক।’
প্যালেস্টাইন অ্যাকশন দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাজ্যে ইসরায়েল-সংযুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ, প্রবেশপথ অবরোধ, লাল রঙ ছিটানো ও যন্ত্রপাতি নষ্ট করে আসছে। সংগঠনের অভিযোগ, গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধে যুক্তরাজ্য সরকার জড়িত।
গত জুনে তারা একটি সামরিক বিমানঘাঁটিতে ঢুকে দুটি এয়ারবাস ভয়েজার বিমান ক্ষতিগ্রস্ত করে; যা আকাশে জ্বালানি সরবরাহে ব্যবহৃত হয়।
সংগঠনের মুখপাত্র মানাল সিদ্দিকি আল জাজিরাকে বলেন, এই বিমানগুলো ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানকে জ্বালানি সরবরাহে ব্যবহৃত হতে পারে। তাদের দাবি, ব্রিজ নর্টন ঘাঁটি থেকে বিমানগুলো সাইপ্রাসে ব্রিটিশ বিমানঘাঁটিতে যায় এবং সেখান থেকে ইসরায়েলের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানের মিশনে অংশ নেয়।
গত জুলাই মাসে যুক্তরাজ্যের আইনপ্রণেতারা গ্রুপটিকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় নিষিদ্ধ করেন। নিষিদ্ধ হওয়া ওই গ্রুপের সদস্য হওয়া যুক্তরাজ্যে এখন অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে, যার সাজা হিসেবে সর্বোচ্চ ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।
প্যালেস্টাইন অ্যাকশনের সহপ্রতিষ্ঠাতা হুদা আম্মোরি গত সপ্তাহে নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আইনি চ্যালেঞ্জ জানানোর অনুমতি পেয়েছেন।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com