weather ২৭.৯৯ o সে. আদ্রতা ৮৯% , সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস আজ

বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা ১০ দেশে শান্তির বার্তা বহন করে চলেছেন

প্রকাশ : ২৯-০৫-২০২৫ ১২:০৫

ছবি : সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক
বিশ্বশান্তি রক্ষায় বাংলাদেশের পথচলা ১৯৮৮ সালে শুরু। তখন জাতিসংঘের ইরান-ইরাক সামরিক পর্যবেক্ষক মিশনে ১৫ জন সদস্য পাঠিয়েছিল বাংলাদেশ। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে ১০ দেশে শান্তির বার্তা বহনে নিয়োজিত আছেন ৪৪৪ নারীসহ পাঁচ হাজার ৮১৮ শান্তিরক্ষী।

বিশ্বশান্তি রক্ষার এ যাত্রায় ৩৫ বছরে জীবন দিয়েছেন ১৬৮ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী। আহত হয়েছেন অন্তত ২৫৭ জন। পেশাদারিত্বের মাধ্যমে শান্তি রক্ষা মিশনে সৈন্য পাঠানো শীর্ষ দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমানে বাংলাদেশ তৃতীয় শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ।

এমন প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার (২৯ মে) পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস। দিবসটির এবারে প্রতিপাদ্য, ‘শান্তিরক্ষার ভবিষ্যৎ’। এদিন বিশ্বজুড়ে সম্মান জানানো হবে সেসব বীরকে, যারা শান্তির পতাকা হাতে যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করছে।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাণী দিয়েছেন। বাণী দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসেও। আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস উদযাপনে বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। আজ সকালে শান্তিরক্ষীদের স্মরণের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে ‘শান্তিরক্ষী দৌড়/রেলি-২০২৫’ অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন। পরে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলনকেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আহত শান্তিরক্ষীদের জন্য সংবর্ধনা এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ওপর বিশেষ আয়োজন অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। অন্যদের মধ্যে উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যরা, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী, তিন বাহিনী প্রধানগণ, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, পুলিশের মহাপরিদর্শক, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বসহ ঊর্ধ্বতন সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।

রাষ্ট্রপতি বাণীতে বলেন, বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা বিশ্বের বিভিন্ন যুদ্ধপীড়িত ও সংঘাতময় দেশে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। 

প্রধান উপদেষ্টা বাণীতে বলেন, বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা সংঘাতময় বিভিন্ন দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও জরুরি মানবিক সহায়তা দিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের কর্মদক্ষতা ও নিষ্ঠা যুদ্ধপীড়িত সাধারণ জনগণের আস্থা অর্জন করেছে; আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের মর্যাদাকে করেছে আরও সমুন্নত।  

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ ও বেসামরিক সদস্যদের সম্মিলিত অংশগ্রহণ একটি বড় অবদান রাখছে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) সূত্রে জানা যায়, বিগত তিন দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ ৪৩টি দেশ ও অঞ্চলে ৬৩টি মিশনে সফলভাবে অংশগ্রহণ করেছে। এ পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনীর প্রায় ১ লাখ ৭৮ হাজার ৭৪৩ জন সদস্য শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করেছেন।

বর্তমানে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা জাতিসংঘের অন্তর্ভুক্ত সুদান ও দক্ষিণ সুদানের মধ্যবর্তী অঞ্চল আবেই, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র (সিএআর), সাইপ্রাস, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো (ডিআর কঙ্গো), লেবানন, দক্ষিণ সুদান, পশ্চিম সাহারা, ইয়েমেন, লিবিয়া এবং নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে দায়িত্ব পালন করছেন। এসব অঞ্চলে তারা স্থানীয় জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত, যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ, মানবিক সহায়তা, অবকাঠামো উন্নয়ন, শরণার্থী সহায়তা ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার কাজে নিয়োজিত আছেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকাগুলোতে শান্তি ফিরিয়ে আনার পথে এ সকল দায়িত্ব পালন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং হলেও বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।

বাংলাদেশ পুলিশেরও শান্তিরক্ষা মিশনে রয়েছে দীর্ঘ ও গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। ১৯৮৯ সালে নামিবিয়া মিশনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জাতিসংঘ মিশনে পুলিশের যাত্রা শুরু হয়। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত ২৬টি মিশনে ২১ হাজার ৮১৫ জন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনটি দেশে ১৯৯ জন পুলিশ সদস্য শান্তিরক্ষায় নিয়োজিত আছেন। এ সময় পর্যন্ত শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনকালে ২৪ জন পুলিশ সদস্য প্রাণ উৎসর্গ করেছেন।

পুলিশ সদর দপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক (অপারেশন্স) মো. রেজাউল করিম জানান, শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণের ফলে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে বাংলাদেশের পুলিশের দৃঢ় আস্থা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে; যা শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

নারী শান্তিরক্ষীদের অংশগ্রহণও বাংলাদেশকে বিশেষ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর মিলিয়ে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৭১৮ জন নারী সদস্য শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিয়েছেন। জাতিসংঘ ২০২৫ সালের মধ্যে শান্তিরক্ষা মিশনে ২২ শতাংশ নারী অংশগ্রহণের যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, সেখানে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ১৮ শতাংশ নারী অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে এবং এই হার আরো বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে ৭১ জন নারী পুলিশ সদস্য বিভিন্ন মিশনে কাজ করছেন; যারা দক্ষিণ সুদান, ডিআর কঙ্গো ও মধ্য আফ্রিকায় দায়িত্ব পালন করছেন।

বিশ্লেষক ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান মনে করেন, বিশ্ব শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের অবদান প্রশংসনীয় হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শান্তিরক্ষা মিশনের প্রকৃতি পরিবর্তিত হচ্ছে। প্রযুক্তির ব্যবহার, ভাষাগত দক্ষতা ও আধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। সেই সঙ্গে প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রেও আধুনিকায়নের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরার লক্ষ্যে বিশেষ জার্নাল ও জাতীয় দৈনিকসমূহে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়েছে এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি চ্যানেলে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচারিত হচ্ছে। এ ছাড়া শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের কার্যক্রমের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত হবে।

পিপলসনিউজ/আরইউ

-- বিজ্ঞাপন --


CONTACT

ads@peoplenewsbd.com

বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে বিক্ষোভে কর্মচারীরা চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে বিক্ষোভে কর্মচারীরা এমআই সিক্সের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধান হচ্ছেন ব্লেইজ মেট্রেওয়েলি এমআই সিক্সের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধান হচ্ছেন ব্লেইজ মেট্রেওয়েলি ঈদযাত্রার ১৫ দিনে ৩৭৯ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩৯০ জন ঈদযাত্রার ১৫ দিনে ৩৭৯ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩৯০ জন করোনা পরীক্ষায় পুরোপুরি প্রস্তুত নয় সরকারি হাসপাতালগুলো করোনা পরীক্ষায় পুরোপুরি প্রস্তুত নয় সরকারি হাসপাতালগুলো