বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত: নিহত ২০, আহত ১৭১
প্রকাশ : ২২-০৭-২০২৫ ০০:২২

ছবি : সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে সোমবার বিধ্বস্ত হয়ে অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ১৭১ জন। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) হতাহতের এ সংখ্যা জানিয়েছে।
বেলা ১টার পর বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। আইএসপিআরের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সোমবার বেলা ১টা ৬ মিনিটে বিমানটি উড্ডয়ন করে; পরে বিধ্বস্ত হয়।
বিকাল পৌনে ৫টার দিকে মাইলস্টোনের দুর্ঘটনাকবলিত এলাকা পরিদর্শনের সময় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ জাহেদ কামাল বলেন, ‘আপনারা সবাই জানেন, সোমবার বিমানবাহিনীর একটি এফটি-সেভেন বিজেআই ফাইটার এয়ারক্র্যাফট আনুমানিক একটার দিকে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের উত্তরা শাখার দোতলা স্কুল ভবনে ক্র্যাশ ল্যান্ডিং করেছে। এই দোতলা ভবনের প্রথম তলায় ছিল তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির বাচ্চাদের ক্লাস। দ্বিতীয় তলায় ছিল দ্বিতীয় ও পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস। তার সঙ্গে ছিল প্রিন্সিপালের (অধ্যক্ষের) অফিস মিটিং রুম। একটা কোচিংয়ের ক্লাস চলমান ছিল। ক্র্যাশ ল্যান্ডিং যখন হয়, তখন স্কুল ছুটি হয়ে গিয়েছিল এবং ওই সময় যে জায়গায় টিচার্স রুমের সঙ্গে যে ল্যান্ডিং হয়, আঘাত করে, ওই জায়গায় বাচ্চাকাচ্চারা জড়ো হয়েছিল এবং তাদের সঙ্গে হয়তো কিছু অভিভাবকও ছিলেন।’
ফায়ার ফার্ভিস আনুমানিক বেলা ১টা ৮ মিনিটে দুর্ঘটনার খবর পায় জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, ‘দ্রুত আমাদের ইউনিট পৌঁছে যায় এবং উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে। আমাদের মোট নয়টি ইউনিট এখানে কার্যক্রম করেছে। বর্তমানে আগুন সম্পূর্ণ নির্বাপণ অবস্থায় আছে এবং আমরা উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছি।’
হতাহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক বলেন, সেনাবাহিনী এবং আমাদের ফায়ার সার্ভিস, পুলিশসহ অন্যান্য সবাই মিলে আমাদের সহযোগিতা করেছে, আমাদের উদ্ধারকাজ চলমান আছে। মুহাম্মদ জাহেদ কামাল বলেন, ‘যারা নিহত, এখনো তাদের পরিচয় আমরা জানতে পারিনি, সময় লাগবে। আমাদের ধারণা, অধিকাংশই শিশু।’
শনাক্ত হওয়া মরদেহ দ্রুত পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে : প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়
বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহতদের মধ্যে পরিচয় শনাক্ত হওয়া মরদেহ তাদের পরিবারের কাছে দ্রুত হস্তান্তর করা হবে। সোমবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এসব তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
পেজে জানানো হয়, বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় নিহতদের মধ্যে যাদের পরিচয় শনাক্ত করা যাবে তাদের মরদেহ অতিসত্বর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
পেজে আরো জানানো হয়, যাদের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত করা যাবে না তাদের মরদেহ ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করে পরবর্তীতে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এতে বলা হয়েছে, আহতদের চিকিৎসার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখছেন। চিকিৎসা কাজ নির্বিঘ্নে করার স্বার্থে হাসপাতাল এলাকায় অহেতুক ভিড় না করার জন্য সর্বসাধারণকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা যাচ্ছে।
কোন হাসপাতালে কতজন ভর্তি?
বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় ঢাকার কোন হাসপাতালে কতজনকে আহত অবস্থায় ভর্তি করা হয়েছে অথবা মৃতদেহ রয়েছে, তার একটি তালিকা দিয়েছে আইএসপিআর।
তালিকা অনুযায়ী- কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে আহত ৮ জন, নিহত নেই; জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে আহত ৭০ জন, নিহত দুই; ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আহত তিন, নিহত ১; সিএমএইচ-ঢাকায় আহত ১৭, নিহত ১২; কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে আহত এক, নিহত দুই; লুবনা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টার উত্তরায় আহত ১১, নিহত দুই; উত্তরা আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আহত ৬০, নিহত এক এবং উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে আহত এক, নিহত নেই। এই আট হাসপাতালে মোট আহত হয়ে চিকিৎসাধীন ১৭১ জন।
আশঙ্কাজনক ৮ জন জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের আইসিউতে
দুর্ঘটনায় আহত অনেককে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। তবে এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে আটজনের বর্তমান অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। তাই তাদেরকে আইসিউতে রেখে চিকিৎসা চলছে।
আইসিউতে থাকা আহতরা হলেন, ১. নাফি, তার শরীরের ৯৫ ভাগ দগ্ধ হয়েছে। ২. আব্দুল্লাহ শামীম, তার শরীরের ৯০ ভাগ দগ্ধ হয়েছে। ৩. শায়ান ইউসুফ, তার শরীরের ৯৫ ভাগ দগ্ধ হয়েছে। ৪. শামিমা, তার শরীরের ২০ ভাগ দগ্ধ হয়েছে। ৫. মাহিয়া তাসনিম, তার শরীরের ৪৫ ভাগ দগ্ধ হয়েছে। ৬. আফনান ফাইয়াজ, তার শরীরের ৯৫ ভাগ দগ্ধ হয়েছে। ৭. বাপ্পি সরকার, তার শরীরের ৩৫ ভাগ দগ্ধ হয়েছে এবং ৮. মাসুদা, তার শরীরের ৯৫ ভাগ দগ্ধ হয়েছে।
এদিকে হতাহতের ঘটনায় জরুরি প্রয়োজনে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে জরুরি হটলাইন চালু করা হয়েছে। হটলাইন নম্বর ০১৯৪৯০৪৩৬৯৭।
সোমবার বিকাল ৩টার দিকে দায়িত্বরত একজন আবাসিক চিকিৎসক সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি জানান, আহতদের কে কতটুকু দগ্ধ হয়েছেন, সেটা নির্ধারণ করে যাচ্ছি। এখানে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে শিশুরাতো আছেই, প্রাপ্ত বয়স্কও অনেকেই আছেন। তবে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
সোমবার দুপুরে বার্ন ইনস্টিটিউটে গিয়ে দেখা যায়, বার্ন ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগে একের পর এক রোগী আসছেন। চিকিৎসকরা দ্রুত তাদের জরুরি বিভাগে নিয়ে চিকিৎসা দিতে তোরজোড় করতে দেখা গেছে।
বার্ন ইনস্টিটিউটে রক্ত দিতে মানুষের ঢল
বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি হওয়া আহতদের রক্ত দানে দ্রুত সাড়া দিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন বহু মানুষ। দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই আহতদের জীবন বাঁচাতে রক্তদানের জন্য জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে মানুষের ঢল নেমেছিল। অসংখ্য মানুষ স্বেচ্ছায় রক্ত দিতে ছুটে এসেছিলেন, যা দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এক উজ্জ্বল উদাহরণ।
দগ্ধদের মধ্যে অনেককে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। তাদের জীবন বাঁচাতে রক্তের প্রয়োজন মেটাতে হাসপাতাল চত্বরে ভিড় করেন কয়েকশ মানুষ। তবে পজিটিভ রক্তের পর্যাপ্ত সংখ্যক ডোনার থাকলেও নেগেটিভ গ্রুপগুলোর রক্তের সংকট ছিল। সোমবার বিকালে বার্ন ইনস্টিটিউটের সামনে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বার্ন ইনস্টিটিউট সূত্র জানায়, দগ্ধ রোগীদের অনেকের ৫০ শতাংশের বেশি পুড়ে গেছে। তাদের চিকিৎসায় জরুরি ভিত্তিতে প্রচুর রক্তের প্রয়োজন। এই খবরে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন মানুষ। হাসপাতালের গেটের বাইরে রক্তদাতাদের দীর্ঘ সারি তৈরি হয়। অনেকে আবার একসঙ্গে কয়েকজনকে নিয়ে আসেন।
হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়ে থাকা রক্তদাতা আশরাফুল ইসলাম বলেন, সংবাদ দেখে আর ঘরে বসে থাকতে পারিনি। বাসা থেকে স্ত্রীকেও সঙ্গে এনেছি। সে ‘ও’ পজিটিভ, আমি ‘বি’ নেগেটিভ- যার যেখানে দরকার হবে, রক্ত দিতে রাজি আছি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও রক্তের আবেদন ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিভিন্ন রক্তদাতা সংগঠন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ রক্ত দিতে ছুটে আসেন বার্ন ইনস্টিটিউটে।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com