রাজধানীতে রাতভর বৃষ্টিতে সড়কে জলাবদ্ধতা, নাগরিক দুর্ভোগ
প্রকাশ : ০১-১০-২০২৫ ০৯:০৪

ছবি : সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীতে মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১টার পর শুরু হওয়া বৃষ্টি বুধবার (১ অক্টোবর) ভোর পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। থেমে থেমে বজ্রপাতও হয়। সঙ্গে বিদ্যুৎও চমকায়। বিরামহীন বৃষ্টিতে ঢাকার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা।
এতে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটেছে, বন্ধ হয়ে গেছে অনেক রুটে অটোরিকশা ও ব্যক্তিগত গাড়ির চলাচল। এমনকি কিছু কিছু এলাকায় সকালে স্কুলগামী শিশু, কর্মজীবী মানুষ ও সাধারণ পথচারীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, টানা বৃষ্টিতে রাজধানী নিউ মার্কেট, পল্টন, রামপুরা, কাকরাইল, মিরপুরের কাজীপাড়া, কালশী ও মতিঝিলের বেশ কিছু সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সরকারি ছুটির দিনেও সড়কে যানবাহনের জটলা বাড়ছে। পানির কারণে কিছু স্থানে সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে বিকল হতে দেখা গেছে।
আবহাওয়া বিভাগ জানায়, ঢাকায় মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টায় ১৩২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এটি এই সময়ে দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টি। আর গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীতে বৃষ্টি হয়েছে ২০৩ মিলিমিটার।
এর আগে সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাতে বৃষ্টির আগাম বার্তা দিয়ে বাংলাদেশ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ দল (বিডব্লিউওটি) বলেছিল, দেশের ওপর ধেয়ে আসছে একটি শক্তিশালী মৌসুমি বৃষ্টিবলয় ‘প্রবাহ’। এটি ৩০ সেপ্টেম্বর রাত থেকে শুরু হয়ে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকায় প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
এটি একটি ‘প্রায় পূর্ণাঙ্গ বৃষ্টিবলয়’ এবং চলতি বছরের ১৩তম বৃষ্টিবলয়। যদিও এটি সারা দেশে একসঙ্গে সক্রিয় হবে না, তবে নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত ঘটাবে।
বৃষ্টিবলয়টি দেশের পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে এবং দক্ষিণাঞ্চলে বেশি সক্রিয় থাকবে। এর সক্রিয়তার ভিত্তিতে বিভাগগুলোকে ভাগ করা হয়েছে। সক্রিয়তার মাত্রা
মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, ময়মনসিংহ, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়া অফিস জানায়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পূর্ব উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর কম সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও মধ্য বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে।
বৃষ্টিবলয়টি ৩০ সেপ্টেম্বর দেশের পূর্বাঞ্চল দিয়ে প্রবেশ করে ৬ অক্টোবর রংপুর বিভাগ হয়ে দেশ ত্যাগ করতে পারে। এর সর্বাধিক সক্রিয়তা দেখা যেতে পারে ২-৪ অক্টোবর।
এদিকে বৃষ্টির সকালে গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীরা জানান, রাস্তায় গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে না। যে অল্প কয়েকটি বাস রাস্তায় বেরিয়েছে, সড়ক তলিয়ে থাকায় সেগুলোও বিকল হয়ে গেছে। সিএনজি-অটোরিকশার ভেতরে থেকে ভিজতে হচ্ছে। ভোগান্তির শেষ নেই যেন।
পরিবার নিয়ে পূজার ছুটিতে গ্রামে যাবেন অঙ্গন পাল। শেওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ডের হাঁটুজলে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি, অপেক্ষা অন্তত গাবতলী পর্যন্ত যাওয়ার কোনো যানবাহন। তিনি বলেন, পরিবার নিয়ে পূজার ছুটি কাটাতে বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হলাম। কিন্তু এখন হাঁটুজলে দাঁড়িয়ে আছি। নারী-শিশুদের নিয়ে বিপাকে আছি। এদিকে বৃষ্টিও থামছে না। ফলে নিজেরাও ভিজতেছি, ব্যাগে থাকা কাপড়ও ভিজে যাচ্ছে।’
সড়কে যানবাহনের সংখ্যা কম হলেও জলাবদ্ধতার কারণে ভোরেই রাজধানীর বেশ কিছু রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হয়। ভারী বৃষ্টিপাতের মধ্যে চলাচলের সময় ইঞ্জিনে পানি ঢুকে বিকল হয়ে পড়ে বেশ কিছু গাড়ি। সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক মনির হোসেন বলেন, মিরপুর-১০ থেকে কোনোমতে পানি ঠেলে এ পর্যন্ত এলাম। কিন্তু রাস্তায় পানি বেশি থাকার কারণে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেছে। এখন টেনে টেনে নিতে হচ্ছে।
জলাবদ্ধতার এই চিরচেনা সমস্যা সমাধানে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি চালক-যাত্রী সকলের।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com