আরো পাঁচ হাজার নতুন রোহিঙ্গা কক্সবাজারে
প্রকাশ : ০৪-০৫-২০২৫ ১১:২১
ফাইল ছবি
চট্টগ্রাম ব্যুরো
কক্সবাজারে নতুন করে আরো পাঁচ হাজার ,অনুপ্রবেশ করেছে। ফলে নতুন রোহিঙ্গার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১৮ হাজারে। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ১ মে পর্যন্ত ওই এক লাখ ১৮ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে।
তাদের ‘নতুন রোহিঙ্গা’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। আগে থেকেই কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে বসবাস করছে ১২ লাখ রোহিঙ্গা। সরকারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
শনিবার (৩ মে) রাতে মিজানুর রহমান বলেন, নতুনভাবে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা এক লাখ ১৮ হাজারে দাঁড়িয়েছে।
নতুন রোহিঙ্গাদের আবাসস্থলের ব্যবস্থা করতে সম্প্রতি জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর) বাংলাদেশকে চিঠি দিয়েছে। তবে শনিবার পর্যন্ত বাংলাদেশ চিঠির জবাব দেয়নি।
মিজানুর রহমান বলেন, নতুন আসা রোহিঙ্গাদের আবাসস্থলের ব্যবস্থার অনুরোধ জানিয়ে ইউএনএইচসিআরের চিঠির জবাব আমরা এখনো দিইনি। তাদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে নতুনভাবে ঘর তৈরি করে দেওয়ার মতো অবস্থায় আমরা নেই। আমরা প্রত্যাবাসনে জোর দিচ্ছি।
এদিকে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে মিয়ানমারের রাখাইনের মংডু বুড়া শিকদাপাড়া এলাকায় রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে বলে জানা গেছে। দেশটির রাখাইন রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মির সদস্যরা এ নিপীড়ন চালাচ্ছে। এতে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের পূর্বদিকে অবস্থিত শিকদারপাড়া থেকে অনেক রোহিঙ্গা কক্সবাজারে বিভিন্ন ক্যাম্পে বসবাসরত তাদের স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। কেউ কেউ পালিয়ে আসছেন।
পালিয়ে আসা এমনই একজন আমির হোসেন। টেকনাফের জাদিমুড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া আমির জানান, তার কিছু স্বজন এখনো শিকদাপাড়ায় বসবাস করছেন। শনিবার তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। এদিন সকালে গ্রামে ঢুকে খোলা আকাশের দিকে গুলি চালায় আরাকান আর্মি। এর পর মাইকিং করে ঘর থেকে সবাইকে বের হতে বলে। এক পর্যায়ে একটি খালি মাঠে সবাইকে জড়ো করে। এ সময় আরসাকে কারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে, তাদের নাম প্রকাশ করতে বলা হয়। এর ব্যত্যয় হলে সবাইকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
তিন মাস আগে পালিয়ে আসা আমির আরো জানান, রাখাইনের লডাইং, উচিংজং, নাকমুড়া, কুলি পাড়াসহ বেশকিছু এলাকায় এখনো রোহিঙ্গাদের বসতি রয়েছে। সেখানে আরাকান আর্মি অনেকের ঘরে গিয়ে আরসার বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছে। সাধারণ রোহিঙ্গাদের নানাভাবে নির্যাতন করছে তারা। এতে সেখানকান রোহিঙ্গারা ভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে চেষ্টা করছেন।
উখিয়া ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ জুবায়ের বলেন, আরসাকে আশ্রয় দেওয়ার বাহানা করে কাল চার গ্রামে হামলা চালানো হয়েছে। মূলত সেখানে এখনো থাকা রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দিতে এ ধরনের অজুহাতে নির্যাতন চালাচ্ছে আরাকান আর্মি।
এদিকে শনিবার চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা সৈকতের মুসলিমাবাদ বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে নারী-শিশুসহ ৩৫ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে র্যাব। র্যাব-৭-এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক এ আর এম মোজাফফর হোসেন বলেন, মিয়ানমার থেকে নৌকায় করে বেশকিছু রোহিঙ্গা পতেঙ্গা ঘাট দিয়ে অনুপ্রবেশ করেছে– এমন তথ্য পেয়ে অভিযান চালানো হয়। পরে নারী-শিশুসহ ৩৫ জনকে আটক করা হয়। তাদের চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তারা ভাসানচর থেকে নাকি মিয়ানমার থেকে এসেছে তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
আটক রোহিঙ্গাদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, প্রতিজন দুই হাজার টাকার বিনিময়ে মিয়ানমার থেকে দালালের মাধ্যমে চট্টগ্রাম শহরে প্রবেশ করে। তাদের চট্টগ্রামে পৌঁছে দেওয়ার চুক্তি ছিল। এখান থেকে তারা কোথায় যেতে চেয়েছিল, তা স্পষ্ট নয়। তাদের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্থানান্তর করার প্রক্রিয়া চলছে।
বিজিবি টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে। নাফ নদ ও স্থলপথে সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। পাশাপাশি মাদক-মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছি।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com