weather ২৮.৯৯ o সে. আদ্রতা ৮৪% , বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইউরোপের ঘাঁটিতে ৩০ মার্কিন সামরিক বিমান, যুদ্ধে জড়ানোর ইঙ্গিত

প্রকাশ : ১৮-০৬-২০২৫ ১২:১৪

ছবি : সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সামরিক তৎপরতা বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও রয়টার্স ফ্লাইট ট্র্যাকিং ডেটা এবং সামরিক বিশ্লেষকদের উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, গত তিন দিনে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইউরোপের বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটিতে ৩০টিরও বেশি সামরিক বিমান পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি, দক্ষিণ চীন সাগর থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে যাত্রা শুরু করেছে একটি মার্কিন বিমানবাহী রণতরী। সামরিক বিশ্লেষকরা এই পদক্ষেপগুলোকে আসন্ন কোনো বড় সংঘাতের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে দেখছেন।

ফ্লাইট ট্র্যাকিং সংক্রান্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ইউরোপে পাঠানো বিমানগুলোর সবই ট্যাংকার বিমান, যা মূলত আকাশে অন্যান্য যুদ্ধবিমান ও বোমারু বিমানকে জ্বালানি সরবরাহের কাজে ব্যবহৃত হয়। এই ধরনের বিমানগুলো যুদ্ধ পরিস্থিতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, কারণ এর মাধ্যমে আকাশপথে যুদ্ধবিমানগুলোর চলার ক্ষমতা ও সময় উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো সম্ভব হয়। বিশেষ করে কেসি-১৩৫ মডেলের অন্তত সাতটি ট্যাংকার বিমান ইতোমধ্যে স্পেন, স্কটল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যের মার্কিন বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করেছে।

একই সময়ের মধ্যে, যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস নিমিৎজকে দক্ষিণ চীন সাগর থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রয়টার্স জানিয়েছে, রণতরীটির ভিয়েতনামের হ্যানয়ে পূর্বনির্ধারিত একটি কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে। মার্কিন দূতাবাস এটিকে একটি ‘জরুরি অভিযানিক প্রয়োজন’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। ইউএসএস নিমিৎজের সঙ্গে রয়েছে বহু যুদ্ধবিমান ও একাধিক গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার, যা এই বহরের আক্রমণক্ষমতা ও প্রতিরক্ষাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।

এ ছাড়া তিনজন মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে রয়টার্স আরো জানায়, যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ঘাঁটিতে ইতোমধ্যে এফ-১৬, এফ-২২ এবং এফ-৩৫ মডেলের অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে। ইউরোপে পাঠানো ট্যাংকার বিমানগুলো এসব যুদ্ধবিমানকে আকাশপথে জ্বালানি দিয়ে সহায়তা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যদিও যুক্তরাষ্ট্র এই সামরিক তৎপরতাগুলোর সঙ্গে সরাসরি ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের কোনো সম্পর্কের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি, বিশেষজ্ঞরা এই পদক্ষেপকে অস্বাভাবিক এবং তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন। যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী গবেষণা সংস্থা রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের (রুসি) জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক জাস্টিন ব্রঙ্ক বিবিসিকে বলেন, এই তৎপরতা থেকে স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, যুক্তরাষ্ট্র আগামী সপ্তাহগুলোতে মধ্যপ্রাচ্যে একটি তীব্র যুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।

অন্যদিকে, আয়ারল্যান্ডের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সাবেক প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল মার্ক মেলেটের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এই তৎপরতা হয়তো দেশটির ‘কৌশলগত অস্পষ্টতা’ নীতির অংশ, যার মাধ্যমে তেহরানকে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনায় ফিরে আসার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হতে পারে। এই ধরনের তৎপরতা কখনো কখনো সরাসরি সামরিক সংঘাতে না গিয়ে প্রতিপক্ষকে মনস্তাত্ত্বিক ও কূটনৈতিক চাপের মধ্যে ফেলতেও ব্যবহৃত হয়।

এদিকে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। তিনি লিখেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধে ‘আরো পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এই বক্তব্য অনেকের কাছেই ভবিষ্যতের সম্ভাব্য সামরিক অভিযান বা চাপ সৃষ্টির নীতির পূর্বাভাস হিসেবে মনে হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরানের প্রধান দুটি পারমাণবিক স্থাপনা— নাতাঞ্জ ও ফোরদো, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের নজরদারিতে রয়েছে। এর মধ্যে নাতাঞ্জে ইসরায়েল পূর্বে হামলা চালিয়েছে। তবে কোম শহরের কাছে পাহাড়ের গভীরে নির্মিত ভূগর্ভস্থ স্থাপনা ফোরদো এখনো অক্ষত রয়েছে। এই ফোরদো স্থাপনাটি এতটাই সুরক্ষিত যে, এটি ধ্বংস করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যবহার করতে হবে ‘বাংকার ব্লাস্টার’ নামে পরিচিত ভয়ঙ্কর জিবিইউ-৫৭ বোমা, যার ওজন ১৩ হাজার ৬০০ কেজি এবং যা ৬০ মিটার গভীর কংক্রিট ভেদ করতে সক্ষম। এই বোমা বহন করতে পারে কেবল যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমান, যেগুলো অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে পরিচালিত হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে ভারত মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের দিয়েগো গার্সিয়া ঘাঁটিতে একটি বি-২ স্কোয়াড্রন মোতায়েন ছিল। সেখান থেকে ইরানের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা চালানো সম্ভব। মার্চ মাসের শেষ দিকের স্যাটেলাইট ছবিতে এই বিমানগুলোকে সেই ঘাঁটিতে দেখা গেলেও বর্তমানে তাদের উপস্থিতি আর দৃশ্যমান নয়; যা ইঙ্গিত দেয় তারা হয়তো অন্য কোথাও স্থানান্তরিত হয়েছে বা গোপন অভিযানে নিযুক্ত হয়েছে।

এই সব কিছুর মধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে, মধ্যপ্রাচ্যে সম্ভাব্য একটি বড় সংঘাতের আশঙ্কা বাড়ছে। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু ঘোষণা দেওয়া হয়নি, যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ ও কৌশলগত মোতায়েন এসব গুঞ্জনকে আরো জোরালো করে তুলেছে। এখন প্রশ্ন হলো, ইরান-ইসরায়েল সংঘাত যদি পূর্ণমাত্রায় বিস্ফোরিত হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্র কি শুধু পর্যবেক্ষক থাকবে, নাকি সরাসরি সামরিকভাবে সম্পৃক্ত হবে? আপাতত যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান স্পষ্ট না করলেও, বাস্তবতা বলছে— তাদের প্রস্তুতি চলছেই।

পিপলসনিউজ/আরইউ

-- বিজ্ঞাপন --


CONTACT

ads@peoplenewsbd.com

এসএসএফকে জনসংযোগ ও নিরাপত্তার মেলবন্ধনে দায়িত্ব পালনের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার এসএসএফকে জনসংযোগ ও নিরাপত্তার মেলবন্ধনে দায়িত্ব পালনের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্রের সংকটে রয়েছে ইসরায়েল, ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্রের সংকটে রয়েছে ইসরায়েল, ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন উত্তেজনার মধ্যেই পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের সঙ্গে বসছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প উত্তেজনার মধ্যেই পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের সঙ্গে বসছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ঢাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টিতে অনেক কারণ ঢাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টিতে অনেক কারণ ইউরোপের ঘাঁটিতে ৩০ মার্কিন সামরিক বিমান, যুদ্ধে জড়ানোর ইঙ্গিত ইউরোপের ঘাঁটিতে ৩০ মার্কিন সামরিক বিমান, যুদ্ধে জড়ানোর ইঙ্গিত