কাশিমপুর কারাগারে অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়া
প্রকাশ : ১৯-০৫-২০২৫ ২৩:১০

ছবি : সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক
চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়াকে কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সোমবার (১৯ মে) আদালতে হাজির করা হলে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। রবিবার (১৮ মে) তাকে ঢাকার হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আটক করা হয়। পরে ভাটারা থানায় করা একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এই গ্রেপ্তার নিয়ে সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং সংস্কৃতি উপদেষ্টা আলাদাভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, ফারিয়ার বিরুদ্ধে মামলা থাকায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপরদিকে সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ঘটনাটিকে ‘বিব্রতকর’ উল্লেখ করে সরকারের দায়িত্বশীলতার কথা স্মরণ করিয়ে দেন
এদিকে, জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ একে সরাসরি রাজনৈতিক ‘মনোযোগ বিভ্রান্তি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। অন্যদিকে আদালতে উপস্থিত হয়ে ফারিয়া কান্নায় ভেঙে পড়েন, আর তার মা মেয়ের দেখা না পেয়েই আদালত প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন। ফারিয়ার আইনজীবী দাবি করেছেন, ফারিয়া আন্দোলনের সময় দেশে ছিলেন না এবং তিনবার বিদেশ সফর করে ফেরত এসেছেন।
কাশিমপুর কারাগারে ফারিয়া: সোমবার বেলা আড়াইটার দিকে নুসরাত ফারিয়াকে পুলিশ প্রহরায় কারাগারে নেওয়া হয় বলে জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের মহিলা কারাগারের জেল সুপার কাওয়ালিন্নাহার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, দুপুর আড়াইটার দিকে একটি প্রিজনভ্যানে করে নুসরাত ফারিয়াকে কাশিমপুর মহিলা কারাগারে আনা হয়েছে।
ভাটারা থানায় দায়ের করা হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়াকে সোমবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে নেওয়া হলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে সকালে তাকে আদালতে হাজির করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। রবিবার নুসরাত ফারিয়াকে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আটক করে ইমিগ্রেশন পুলিশ। থাইল্যান্ড যাওয়ার সময় বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট থেকে তাকে আটক করা হয়। পরে ভাটারা থানায় করা একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ওই মামলায় তাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে আসামি করা হয়।
গ্রেপ্তারের কারণ জানালেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা: নুসরাত ফারিয়ার নামে মামলা ছিল বলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, নুসরাত ফারিয়ার নামে তদন্ত হচ্ছে। নির্দোষ প্রমাণ হলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
যারা জুলাই গণহত্যায় প্রকৃত অপরাধী তারাই যাতে গ্রেপ্তার হয়, কেউ যেন ভোগান্তির শিকার না হয়- এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বিব্রতকর একটি ঘটনা-মোস্তফা সরয়ার ফারুকী: নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তারের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার বেলা ১১টা ১২ মিনিটে সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেই স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো- আমি সাধারণত চেষ্টা করি আমার মন্ত্রণালয়ের কাজের বাইরে কথা না বলতে। কিন্তু আমার তো একটি পরিচয় আছে, আমি এই ইন্ডাস্ট্রিরই মানুষ ছিলাম এবং দুই দিন পর সেখানেই ফিরে যাবো। নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তার বিব্রতকর একটি ঘটনা হয়ে থাকলো আমাদের জন্য। আমাদের সরকারের কাজ জুলাইয়ের প্রকৃত অপরাধীদের বিচার করা। ঢালাও মামলার ক্ষেত্রে আমাদের পরিষ্কার অবস্থান প্রাথমিক তদন্তে সংশ্লিষ্টতা না থাকলে কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না। এবং সেই নীতিই অনুসরণ করা হচ্ছিলো। ফারিয়ার বিরুদ্ধে এই মামলাতো অনেকদিন ধরেই ছিলো। সরকারের পক্ষ থেকে তদন্ত শেষ হওয়ার আগে গ্রেপ্তারের কোনো উদ্যোগ নেওয়ার বিষয় আমার নজরে আসেনি। কিন্তু এয়ারপোর্টে যাওয়ার পরেই এই ঘটনাটি ঘটে। আওয়ামী লীগের সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিদেশ গমনকে কেন্দ্র করে ক্ষোভের পর ওভার নারভাসনেস থেকেই হয়তোবা এইসব ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। কয়দিন আগে ব্যারিস্টার আন্দালিব পার্থের স্ত্রীর সঙ্গেও এরকম একটি ঘটনা ঘটেছে। এইসব ঘটনা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য না। আমি বিশ্বাস করি ফারিয়া আইনি প্রতিকার পাবে। এবং এই ধরনের ঢালাও মামলাকে আমরা আরো সংবেদনশীলভাবে হ্যান্ডেল করতে পারবো-এই আশা। আমাদের মনে রাখতে হবে আমাদের প্রধান কাজ জুলাইয়ের প্রকৃত অপরাধীদের বিচার করা।’
আদালতে কাঁদলেন ফারিয়া: সোমবার নুসরাত ফারিয়াকে এজলাসের কাঠগড়ায় রাখা হয়। শুনানি চলাকালে কাঠগড়ায় নীরবে দাঁড়িয়ে ছিলেন নুসরাত ফারিয়া। পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী নুসরাত ফারিয়াকে ফ্যাসিস্টের দোসর আখ্যা দিয়ে আদালতে শুনানি করেন। শুনানি চলাকালে চোখ মুছতে দেখা যায় নুসরাত ফারিয়াকে।
আন্দোলনের সময় ফারিয়া দেশে ছিলেন না-আইনজীবী: জুলাই আন্দোলনকেন্দ্রিক ভাটারা থানাধীন ছাত্রদল নেতা এনামুল হক হত্যাচেষ্টা মামলায় আদালতকে শুনানির সময় চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়ার আইনজীবী ফারহান মোহাম্মদ আয়াজ বলেন, জুলাই আন্দোলনের সময় আমার মক্কেল দেশে ছিলেন না। আন্দোলনের পরও তিনি সিনেমা ও শুটিংয়ের কাজে তিনবার দেশ থেকে বিদেশে গিয়েছেন। তার পালিয়ে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা ছিল না।
সোমবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ্ ফারজানা হকের আদালতে তিনি এসব কথা বলেন। পরে বিচারক বলেন, আপনার মক্কেলের পক্ষে বিদেশে যাওয়ার যে সাবমিশন দাখিল করেছেন, সেটি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যাচাই করে দেখবেন। এখন জামিন শুনানি হচ্ছে না। পরে বিচারক আগামী ২২ মে জামিন শুনানির দিন ধার্য করেন।
ফারিয়ার দেখা পাননি তার মা: নুসরাত ফারিয়াকে এক নজর দেখার জন্য সোমবার সকাল ৮টার দিকে আদালত চত্বরে আসেন তার মা ফেরদৌসী বেগম। কিন্তু মেয়ের দেখা পাননি তিনি। আদালতে তোলার সময় বেশ ভিড় থাকায় আদালতের সামনে যাননি। বেলা ১১টার দিকে শুনানি শেষ হলে আইনজীবীর মাধ্যমে মেয়ের খোঁজ নেন অভিনেত্রীর মা।
আদালত চত্বরে বিমর্ষ মুখে দেখা গেছে নুসরাত ফারিয়ার মাকে। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চাননি তিনি। তবে আইনজীবীর কাছে মেয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে ভালো আছে কিনা― তা জানতে চেয়েছেন ফেরদৌসী বেগম।
এনামুল হক নামের এক ব্যক্তি গত মার্চ মাসে নায়িকা নুসরাত ফারিয়া, অপু বিশ্বাস, নিপুণ আক্তার, আশনা হাবিব ভাবনা, নায়ক জায়েদ খানসহ ১৭ অভিনয়শিল্পীসহ ২৮৩ জনের নামে আদালতে মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে ভাটারা থানা গত ২৯ এপ্রিল তা এজাহার হিসেবে লিপিবদ্ধ করে।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯ জুলাই ভাটারা থানার সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। এসময় গুলি চালানো হলে তা এনামুলের পায়ে গুলি লাগে। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী নির্ভর ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ সিনেমায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ফারিয়া। নুসরাত ফারিয়ার ক্যারিয়ার শুরু হয় রেডিও জকি ও উপস্থাপক হিসেবে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনায় ‘আশিকী’ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে নায়িকা হিসেবে আবির্ভূত হন তিনি। চলচ্চিত্রের পাশাপাশি গানও করেন ফারিয়া।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com