চট্টগ্রাম ক্লাবের গেস্ট হাউজে সাবেক সেনাপ্রধান হারুনের মরদেহ
প্রকাশ : ০৪-০৮-২০২৫ ১৬:২৪

ছবি : সংগৃহীত
চট্টগ্রাম ব্যুরো
চট্টগ্রাম ক্লাবের গেস্ট হাউজের একটি কক্ষ থেকে সাবেক সেনাপ্রধান এম হারুন-অর-রশীদ বীর প্রতীকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারুন-অর-রশীদ ছিলেন ডেসটিনি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট। তার মৃত্যুর বিষয়টি ডেসটিনি মাল্টি পারপাস কোঅপারেটিভ সোসাইটির সভাপতি প্রকৌশলী শহীদুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন।
৭৭ বছর বয়সী হারুন-অর-রশীদ ২০০০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০০২ সালের জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ছিলেন। ডেসটিনির আর্থিক কেলেঙ্কারির একটি মামলায় হাজিরা দিতে তিনি রবিবার বিকালে চট্টগ্রামে আসেন। চট্টগ্রাম ক্লাব গেস্ট হাউজের ৩০৮ নম্বর কক্ষে তিনি উঠেছিলেন।
শহীদুল ইসলাম বলেন, এখানে আমাদের একটি মামলার হাজিরার তারিখ ছিল। আমরা সবাই কোর্টে এসেছি। কিন্তু সময় হয়ে যাওয়ার পরও উনি আসছিলেন না, উনাকে ফোনেও পাওয়া যাচ্ছিল না। গেস্টগাউজে বলার পর তারা ঘরে ঢুকে দেখে ঘরে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছেন উনি। পরে সিএমএএইচের লোকজন এসেছে। তারা এসে দেখেছে উনি আর নেই।
চট্টগ্রাম ক্লাব লিমিটেডের সেক্রেটারি অবসরপ্রাপ্ত কমান্ডার মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, সকালে উনাকে নিতে সেনাবাহিনীর গাড়ি এসেছিল। তাকে ফোনে না পেয়ে আমাদের জানানো হয়। তখন আমরা পেছনের দরজা দিয়ে প্রবেশ করে উনাকে বিছানায় শোয়া অবস্থায় পাই।
তবে সাবেক এই সেনাপ্রধানের মৃত্যুর কারণ এখনো স্পষ্ট নয়। চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-ওসি আবদুল করিম বলেন, উনি রাতে ক্লাবের গেস্ট হাউজে ছিলেন। আমরা খবর পেয়ে এসেছি। কীভাবে কী হয়েছে পরে বিস্তারিত বলতে পারব।
মামলার হাজিরা দিতে চট্টগ্রামে আসা ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীনও চিটাগাং ক্লাবে ছুটে আসেন।
উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, এর আগেও আমরা এই মামলায় হাজিরা দেওয়ার জন্য কয়েকবার চট্টগ্রামে এসেছি। কাল সকালে উনার ফ্লাইট বুক করা ছিল। আমরা আজকে চলে যাব। এভাবে কথাবার্তা হয়েছে। এর মধ্যে কী হয়ে গেল।
১৯৪৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জন্ম নেওয়া হারুন-অর-রশীদের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারীর ধলই ইউনিয়নে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পর চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত অবস্থায় ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব দেয়।
২০০০ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে আসেন হারুন। ২০০২ সালের জুনে অবসরে যাওয়ার পর সরকার তাকে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ফিজির রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বও দিয়েছিল।
সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সাবেক মহাসচিব হারুন-অর-রশিদ ডেসটিনি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট হিসেবে যোগ দেন ২০০৬ সালে। পরের কয়েক বছরে আরো বহু ক্ষেত্রে ডেসটিনির ব্যবসা বিস্তৃত হতে দেখা যায়।
কিন্তু জালিয়াতি ও অনিয়মের অভিযোগ এবং ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ তুঙ্গে উঠলে ২০১২ সালে হারুনকে কারাগারে যেতে হয়। পরে ‘স্বাস্থ্য ও সামাজিক অবস্থা’ বিবেচনায় তিনি জামিনে মুক্তি পান।
ডেসটিনির গ্রাহকের অর্থ আত্মসাত ও দায়ে দুদকের এক মামলায় ২০২২ সালের ১২ মে হারুন-অর-রশিদকে চার বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত।
সাবেক সেনাশাসক এইচ এম এরশাদের পর হারুন-অর-রশিদই প্রথম সাবেক সেনাপ্রধান, যাকে কোনো মামলায় দণ্ড নিয়ে কারাগারে যেতে হয়েছিল।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com