বিপৎসীমার ৩৫ সেমি ওপরে তিস্তার পানি
প্রকাশ : ০৬-১০-২০২৫ ১০:৫৫

ছবি : সংগৃহীত
রংপুর ব্যুরো
তিস্তা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নদী উপচে পানি ঢুকছে নিম্নাঞ্চলগুলোতে। ফলে ভয়াবহ বন্যার আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন তিস্তাপাড়ের মানুষ।
রবিবার (৫ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টায় তিস্তার ডালিয়া ব্যারেজ পয়েন্টে পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ২৫ মিটার; যা বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর। রাত ১২টায় পানিপ্রবাহ বেড়ে দাঁড়ায় ৫২ দশমিক ৫০ মিটারে; যা বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটারের ওপরে।
রাতের মধ্যেই তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপরে উঠার আশঙ্কার কথা জানায় পানি উন্নয়ন বোর্ড। এরই মধ্যে নদী এলাকায় সতর্কতা জারি করে মাইকিং করা হয়েছে। সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এদিকে তিস্তার পানি বৃদ্ধিতে রংপুরের গংগাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলসহ নীলফামারী ও লালমনিরহাটের নদী তীরবর্তী এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
সতর্কতা অবলম্বনে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন নির্দেশনাও জারি করা হয়েছে। তিস্তা তীরবর্তী অনেকে মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন বিদ্যালয় ও আশ্রয়কেন্দ্রে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রবিবার বিকাল থেকে পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে তিস্তার পানি। সন্ধার পর থেকে তা আরো বাড়তে শুরু করে। পানি বেড়ে অনেক রাস্তা তলিয়ে গেছে। ফলে যেকোনো সময় তিস্তা তীরবর্তী এলাকার রাস্তা ভেঙে শহরে পানি ঢুকে যেতে পারে।
রংপুরের গংগাচড়ার চর ইচলির বাসিন্দা মকবুল হোসেন বলেন, পানি যে হারে বাড়তেছে তাতে আমাদের বাড়িতে থাকার কোনো সুযোগ নেই। হঠাৎ পানি বাড়ি ঘরে ঢুকে গেলে গবাদিপশু আর বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে বিপদে পড়ে যেতাম। তাই রাত ১০টার দিকে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছি।
চর বাঘ ডোহরার বাসিন্দা আয়নাল হক বলেন, চলতি বছরের মধ্যে রবিবারই সবচেয়ে বেশি পানি বেড়েছে তিস্তায়। যে কারণে বিপদ এড়াতে আমরা চর এলাকার সবাই বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছি। জানি না, এই পানি কতদিনে নামবে। সারারাত বন্যা আতঙ্কে ঘুম আসবে না।
গংগাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদু হাসান মৃধা বলেন, সকাল থেকে নদী তীরবর্তী বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিদর্শন করা হয়েছে। নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষদের সতর্ক করতে মাইকিং করা হয়েছে। এতে সর্বসাধারণকে তাদের গরু-ছাগলসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে সতর্ক থেকে নিকটস্থ বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র বা প্রাইমারি অথবা হাইস্কুলে অবস্থান নেয়ার জন্য বলা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। রবিবার সকাল ছয়টায় বিপৎসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও সন্ধ্যা ৬টায় ৮৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
এই কর্মকর্তা আরো জানান, পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তিস্তা নদীর জিরো পয়েন্টের কাছাকাছি কালীগঞ্জ নামক স্থানে তিস্তার ডান তীরের প্রধান বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সেটির মেরামতকাজ চলছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ব্যারাজের সব কটি (৪৪টি) জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে।
তিনি জানান, তিস্তা তীরবর্তী এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করে সন্ধ্যায় মাইকিং করা হয়েছে। রাত ৮টার দিকে পানি বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও ১২ টার পরে তা ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com