সাক্ষাৎকারের বিড়ম্বনা: পরিবারসহ বাড়ি ছেড়েছেন মুরাদনগরের সেই নারী
প্রকাশ : ০২-০৭-২০২৫ ১১:৫০

ছবি : সংগৃহীত
কুমিল্লা প্রতিনিধি
কুমিল্লার মুরাদনগরে ধর্ষণ ও নিপীড়নের শিকার সেই নারী বাবার বাড়ি (ঘটনাস্থল) থেকে অন্যত্র চলে গেছেন। ধারণা করা হচ্ছে তিনি শ্বশুরবাড়িতে ফিরে গেছেন। মঙ্গলবার (১ জুলাই) এ তথ্য জানিয়েছেন মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘ট্রমা কাটাতে তিনি শ্বশুরবাড়িতে ফিরে যেতে পারেন। বৃহস্পতিবার রাতে বাবার বাড়িতে বেড়াতে এসে তিনি পাশবিকতার শিকার হন।’
স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন মানুষ ওই নারীর বাবার বাড়িতে ভিড় করছেন। সাংবাদিক, গণমাধ্যমকর্মী ও ইউটিউবারদের সাক্ষাৎকার দিতে দিতে তাদের পরিবার বিরক্ত হয়ে উঠেছে। পাশবিক নির্যাতনের মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে তাদের খোলামেলা কথা বলতে হচ্ছে। তাই ছোট দুই শিশুসহ তিনি মঙ্গলবার সকালের পর হোমনা উপজেলার শ্বশুরবাড়িতে ফিরে গেছেন। তার মা-বাবাসহ পরিবারের অন্যরাও অন্যত্র সরে গেছেন। বিব্রতকর পরিস্থিতি সামলাতেই তারা এমন ব্যবস্থা নিয়েছেন।
স্থানীয়রা আরো জানান, যারা ঘটনা ঘটিয়েছেন তারাও একই গ্রামের প্রতিবেশী। তাই পুরো পাঁচকিত্তা গ্রামজুড়েই একই আলোচনা। পাঁচ দিনে এসব নিয়ে একঘেয়েমি এসেছে।
এদিকে মঙ্গলবার ভুক্তভোগী নারীর বাড়িতে যান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ। তিনি যাবেন জানতে পেরে সকালে দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের ভিড় বাড়ে। পরে কায়কোবাদ ভুক্তভোগী পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন ও বিচার দাবি করেন।
অবশ্য কায়কোবাদ ওই নারী কিংবা তার পরিবারের সদস্যদের কাউকে বাড়িতে পাননি। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে কায়কোবাদ বলেন, আমি এখানে এসেছিলাম সবার সঙ্গে দেখা করতে, কথা বলতে। ভুক্তভোগী ওই নারী ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানাতে। কিন্তু এসে তাদের পেলাম না। পুলিশ ও আমাদের মাননীয় উপদেষ্টা ষড়যন্ত্র করে তাদেরকে এখান থেকে দূরে নিয়ে গেছে। আমি জানতে চাই, তাদের উদ্দেশ্য কী।
ওসি জাহিদুর রহমান বলেন, ওই নারী তার শ্বশুরবাড়ি যাবেন এমনটিই জানি। এটি তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তিনি বা তার পরিবার কোনো নিরাপত্তার চাননি। দরকার আছে কিনা তাও বলেননি। আমরা খোঁজ-খবর রাখছি। আসামিদের ধরতে ডিবি ও থানা পুলিশ অভিযানে আছে। নিরাপত্তার কোনো ইস্যু নেই।
গত ২৬ জুন দিবাগত রাতে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় ধর্ষক ও ভুক্তভোগী নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের দুটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। এরই মধ্যে পুলিশ ধর্ষণে অভিযুক্ত একই গ্রামের বাসিন্দা ফজর আলী ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে চার যুবককে গ্রেপ্তার করেছে।
এদিকে নির্যাতন ও ভিডিও ছড়ানোর ঘটনায় গ্রেপ্তার চার যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১১ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক মমিনুল হক আগামীকাল বৃহস্পতিবার রিমান্ড শুনানির তারিখ ধার্য করেছেন।
কুমিল্লা আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. সাদেকুর রহমান বলেন, মুরাদনগর থানায় হওয়া নারী নির্যাতন ও পর্নোগ্রাফি আইনের মামলায় কারাগারে থাকা চার আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সোমবার সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। মঙ্গলবার আদালত থেকে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার শুনানি হবে।
কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা ওই চার আসামি হলেন মোহাম্মদ আলী ওরফে সুমন, রমজান আলী, মো. আরিফ ও মো. অনিক।
নতুন করে কেউ গ্রেপ্তার না হওয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওসি জাহিদুর রহমান বলেন, আমরা এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনকে শনাক্ত করেছি। তবে তাদের সবাই এলাকা থেকে পালিয়েছেন। তাদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, চার আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করলে আশা করছি তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে।
ওসি বলেন, ওই চারজনকে গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছে থাকা মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে। ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য সেগুলো সিআইডির ল্যাবে পাঠানো হবে। এর মাধ্যমে জানার চেষ্টা করা হবে ভিডিওটি কোথা থেকে প্রথম ছড়ানো হয়েছে।
অন্যদিকে প্রধান আসামি ফজর আলী কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com