আফগানিস্তানকে হারিয়ে সুপার ফোরের আশা জিইয়ে রাখল বাংলাদেশ
প্রকাশ : ১৭-০৯-২০২৫ ১১:০৫

ছবি : সংগৃহীত
ক্রীড়া প্রতিবেদক
জয়টা আসতে পারতো আরো সহজে, ব্যবধানও হতে পারতো আরো বেশি। হলো না, কারণ ব্যাটিংয়ে শেষ দিকে রান তোলার গতি হয়ে পড়েছিল মন্থর। অন্যদিকে, ১৪তম ওভারে সাইফ হাসানের কাছ থেকে আজমতউল্লাহ ওমরজাই ২০ রান নিয়ে ম্যাচের গতিই যেন ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন।
কিন্তু তাসকিন, নাসুম আর মোস্তাফিজুর রহমানের শেষ মুহূর্তের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের মুখে আর পেরে ওঠেনি আফগান ব্যাটাররা। জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে তুললেও ৮ রান দূরে থাকতে থেমে যেতে হয়েছে তাদের।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে জয়ের জন্য ১৫৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ১৪৬ রানে অলআউট হয়েছে আফগানরা। ফলে ৮ রানের ব্যবধানে জয় তুলে নিয়ে সুপার ফোরে যাওয়ার সম্ভাবনা টিকিয়ে রাখলো বাংলাদেশ দল।
আফগানিস্তানকে হারালেও বাংলাদেশের সুপার ফোর এখনো নিশ্চিত নয়। কারণ, ‘বি’ গ্রুপে বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কা জয় পেয়েছে ২টি করে। আফগানিস্তান-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ বাকি এখনো। ওই ম্যাচে আফগানরা জিতলে তাদেরও জয় হবে ২টি। তখন তিন দলের জয় সমান, পয়েন্ট সমান। ফলে রানরেটে এগিয়ে থাকা দল উঠবে সুপার ফোরে।
এ জায়গায় বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়েই রয়েছে আফগানরা। ৩ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে ২য় স্থানে থাকলেও বাংলাদেশের রানরেট ঋণাত্মক (-০.২৭০)। অন্যদিকে ২ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে থাকলেও আফগানিস্তানের রানরেট ধনাত্মক (+২.১৫০)। এর অর্থ, শ্রীলঙ্কাকে হারাতে পারলেই আফগানিস্তান উঠে যাবে সুপার ফোরে, বাংলাদেশ বিদায় নেবে।
জয় ছাড়া এদিন আর কোনো উপায় ছিল না বাংলাদেশের। ব্যাটিং ইনিংস শেষেও ছিল শঙ্কার দোলাচল। তবে দুর্দান্ত বোলিং-ফিল্ডিংয়ে জয় পেল লিটন কুমার দাসের দল।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, টি-টোয়েন্টিতে দেশের বাইরে ষষ্ঠবারের চেষ্টায় আফগানদের প্রথম হারাতে পারল বাংলাদেশ।
টস জয়ী বাংলাদেশ ২০ ওভারে বাংলাদেশ তোলে ১৫৪ রান। একসময় যদিও ১৭০-১৮০ রানের পথে ছিল তারা। কিন্তু প্রথম ১০ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ৮৭ রান তোলা দল পরের ১০ ওভারে করতে পারে স্রেফ ৬৭ রান! ৩১ বলে ৫২ রানের ইনিংস খেলেন তানজিদ।
মাত্র চার বিশেষজ্ঞ বোলার নিয়ে নামা বাংলাদেশ তখন বড় ঝুঁকিতে। অনিয়মিত দুই স্পিনার সাইফ হাসান ও শামীম হোসেন মিলে ৪ ওভারে ৫৫ রান দিয়ে কাজ কঠিন করেও তোলেন। তবে অন্য বোলারদের দারুণ পারফরম্যান্স ও সম্মিলিত ফিল্ডিংয়ে আফগানদের আটকে রাখা যায় ১৪৬ রানে।
তিন উইকেট নিয়ে সফলতম বোলার যদিও মুস্তাফিজুর রহমান, তবে সেরা বোলার ছিলেন নিঃসন্দেহে নাসুম আহমেদ। আসরে প্রথম খেলতে নেমে উইকেট শিকার করেন তিনি প্রথম বলেই। চার ওভারে স্রেফ ১১ রান দিয়ে দুই উইকেট নিয়ে এই বাঁহাতি স্পিনারই ম্যাচের সেরা।
সাম্প্রতিক হতাশা কাটিয়ে দুর্দান্ত বোলিং করেন রিশাদ হোসেন। এই লেগ স্পিনারের মতো দুটি উইকেট নেন তাসকিন আহমেদও। জয়ের চেষ্টায় মরিয়া বাংলাদেশ একাদশ সাজায় চার পরিবর্তন নিয়ে। পরিবর্তন আসে উদ্বোধনী জুটিতেও।
বাংলাদেশের শুরুটা জুটি হিসেবে দারুণ। তবে নতুন উদ্বোধনী দুই ব্যাটসম্যানের ছিল দুই রূপ। সাইফ হাসানের ব্যাটিং ছিল অস্বস্তিময়, তবু টিকে যান পাওয়ার প্লের পুরোটা। ফাঁকে দু-একটি ভালো শটও খেলেন। তানজিদ ছিলেন রুদ্ররূপে। দুজনের সংযোগে শুরুর জুটিতে আসে ৬৩ রান।
প্রথম ওভাররে ফাজালহাক ফারুকির সুইংয়ে টালমাটাল সাইফ জীবন পান শূন্য রানে। বাঁহাতি এই পেসারের বলে তানজিদও সুযোগে মতো দেন। তবে তা কিপার ও স্লিপের মাঝ দিয়ে ছুটে যায় বাউন্ডারিতে। ওই ওভারে তানজিদের ব্যাট থেকে আসে চারটি বাউন্ডারি।
এএম গাজানফারকে মাথার ওপর দিয়ে উড়িয়ে দেন সাইফ, এই রহস্য স্পিনারকেই পাত্তা না দিয়ে দুটি ছক্কা মেরে দেন তানজিদ। ১১ ম্যাচ পর এই সংস্করণে অর্ধশত রানের জুটি পায় বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লেতে ওঠে ৫৯ রান। রাশিদ খান আক্রমণে এসেই ভাঙেন জুটি। ধৈর্য হারিয়ে স্লগ করে বোল্ড হন সাইফ (২৮ বলে ৩০)।
লিটন দাস চেষ্টা করে একটু সময় নিয়ে থিতু হওয়ার। দশম ওভারে মোহাম্মাদ নাবির বলে পুল করে তানজিদের ছক্কায় দারুণ অবস্থানে থেকে পানি পানের বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।
বিরতির পর প্রথম বলেই ছন্দপতন। মোহাম্মাদ নুর বল হাতে নিয়েই ফেরান লিটনকে (১১ বলে ৯)। ২৮ বলে ফিফটি করা তানজিদ বিদায় নেন বাঁহাতি এই রিস্ট স্পিনারের পরের ওভারে। তাওহিদ হৃদয়ের শুরুটা ছিল দারুণ। ক্রিজে যাওয়ার পরপরই প্রিয় সুইপে ছক্কা মারেন তিনি নুরকে। তার রানিং বিটুইন দা উইকেট ছিল দুর্দান্ত।
তবে ক্রমশ গতি হারায় বাংলাদেশের ইনিংস। রাশিদের ওভারে দুটি বাউন্ডারির পর আফগান অধিনায়কের কাছেই উইকেট হারান শামীম হোসেন (১১ বলে ১১)। হৃদয়ও পরের দিকে মেটাতে পারেননি সময়ের দাবি (২০ বলে ২৬)।
জাকের আলি ক্রিজে যাওয়ার পরপরই নুরকে চার মারলেও পরে আর ব্যাট-বলেই করতে পারছিলেন না। শাফল করে বল লেগ সাইডে টেনে মার চেষ্টায় ব্যর্থ হন বারবার। ১৯তম ওভারে টানা তিন বলে রান নিতে পারেননি তিনি। শেষ পর্যন্ত পর্যন্ত থাকেন ১২ বলে ১৩ রান করে। শেষ দিকে দুটি বাউন্ডারিতে নুরুল হাসান সোহানের ৬ বলে ১২ রানের ইনিংসে দেড়শ ছাড়াতে পারে বাংলাদেশ। শেষ পাঁচ ওভারে মাত্র ৩৫ রান তুলতে পারে তারা।
এই পুঁজির পর যেমন দরকার ছিল, বাংলাদেশকে ঠিক তেমন শুরুই এনে দেন নাসুম। ইনিংসের প্রথম বলেই এলবিডব্লিউ করে দেন তিনি সেদিকউল্লাহ আটালকে। একটু পরে একইভাবে তার শিকার ইব্রাহিম জাদরান (১২ বলে ৫)। দুই উইকেট হারিয়ে পাওয়ার প্লেতে মাত্র ২৭ রান তুলতে পারে আফগানরা। জুটি গড়ে ওঠার মুখে রিশাদ হোসেন ফিরতি ক্যাচ নিয়ে ফিরিয়ে দেন গুলবাদিন নাইবকে (১৪ বলে ১৬)।
ওপেন করতে নেমে তখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন রাহমানউল্লাহ গুরবাজ। শামীম ও সাইফকে সামনে পেয়ে দুটি ছক্কা মারেন তিনি। তবে বিপজ্জনক হয়ে ওঠার আগে তাকেও (৩১ বলে ৩৫) ফেরান রিশাদ। মুস্তাফিজ দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে যখন ভেঙে দেন নাবির প্রতিরোধ (১৫ বলে ১৫), ম্যাচ তখন বাংলাদেশের মুঠোয়।
আজমাতউল্লাহ ওমারজাইয়ের মনে যদিও ছিল ভিন্ন ভাবনা। অনিয়মিত স্পিনার সাইফকে পেয়ে এক ওভারে ২০ রান নেন তিনি। তাসকিনকে হুক করে আছড়ে ফেলেন মাঠের বাইরে। তবে স্লোয়ার ডেলিভারিকে ওমারজাইকে (১৬ বলে ৩০) ফিরিয়ে শোধ তোলেন তাসকিন। সোহানের অসাধারণ ফিল্ডিংয়ে রান আউট হয়ে ফেরেন কারিম জানাত।
বাংলাদেশের যন্ত্রণার যদিও শেষ হয়নি তাতে। রাশিদ ক্রিজে নেমে সহজাত ব্যাটিংয়ে আবার জাগিয়ে তোলেন আফগানদের আশা। ‘নো লুক’ শটে মুস্তাফিজকে ছক্কা মারেন তিনি, পরে চার মারেন দুটি। সেই দ্বৈরথে শেষ পর্যন্ত রাশিদকে (১১ বলে ২০) ফিরিয়ে জিতে যান মুস্তাফিজ। সেই পথ ধরে একটু পরে জিতে যায় দলও। এই জয় কতটা মূল্যবান, সেটি পরিস্কার হবে বৃহস্পতিবার এই মাঠেই শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান লড়াইয়ে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৫৪/৫ (সাইফ ৩০, তানজিদ ৫২, লিটন ৯, হৃদয় ২৬, শামীম ১১, জাকের ১২*, সোহান ১২*; ফারুকি ৪-০-৩৭-০, ওমারজাই ৩-০-১৯-১, গাজানফার ৩-০-৩২-০, রাশিদ ৪-০-২৬-২, নাবি ২-০-১৭-০, নুর ৪-০-২৩-২)।
আফগানিস্তান: ২০ ওভারে ১৪৬ (আটাল ০, গুরবাজ ৩৫, ইব্রাহিম ৫, নাইব ১৩, নাবি ১৫, ওমারজাই ৩০, জানাত ৬, রাশিদ ২০, নুর ১৪, গাজানফার ০, ফারুকি ২*; নাসুম ৪-১-১১-২, তাসকিন , মুস্তাফিজ ৪-০-২৮-৩, রিশাদ ৪-০-১৮-২, শামীম ১-০-১৬-০, সাইফ ৩-০-৩৯-০)।
ফল: বাংলাদেশ ৮ রানে জয়ী। ম্যান অব দা ম্যাচ: নাসুম আহমেদ।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com