আমের রেকর্ড উৎপাদন হলেও রপ্তানিতে পিছিয়ে
প্রকাশ : ২৩-০৫-২০২৫ ১১:৪৩

ছবি : সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক
বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম আম উৎপাদনকারী দেশ বাংলাদেশ। দেশের অন্তত ছয়টি জেলার প্রধান বাণিজ্যিক কৃষিপণ্য এখন আম। বর্তমানে ২২টি জেলায় বাণিজ্যিকভাবে আমের চাষ হচ্ছে। উৎপাদনে বিস্ময়কর সাফল্য থাকলেও রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো অনেক পিছিয়ে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে প্রায় দুই লাখ পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে ২৭ লাখ টন আম উৎপন্ন হয়েছে। কিন্তু রপ্তানির চিত্র এর উল্টো। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২১ লাখ টন আম উৎপাদন হলেও রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ৩০৯ টন। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উৎপাদন দাঁড়ায় ২৫ লাখ টনে, অথচ রপ্তানি হয় মাত্র এক হাজার ৩২১ টন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নত জাতের অভাব, দুর্বল প্যাকেজিং, মানসম্পন্ন কৃষি পদ্ধতির ঘাটতি, এবং আন্তর্জাতিক বাজারে ব্র্যান্ডিং দুর্বল হওয়ায় এই খাতে সম্ভাবনার পূর্ণ ব্যবহার হচ্ছে না।
রপ্তানিতে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে পরিবহন ব্যয়। ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে প্রতি কেজি আম পাঠাতে ভাড়া পড়ে যথাক্রমে ৩৫০-৩৮০ টাকা ও ২০০-২২০ টাকা। কানাডা ও যুক্তরাজ্যে এ ভাড়া দাঁড়িয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। অথচ প্রতিবেশী দেশগুলো রপ্তানিতে নিজস্ব কার্গো ফ্লাইট ব্যবহার করে। বাংলাদেশ এখনো যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ নির্ভর।
বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ফলমূলসহ কৃষিপণ্যে প্রণোদনার হার ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। রপ্তানিকারকরা বলছেন, রপ্তানি বাড়াতে এই হার আরো বাড়ানো প্রয়োজন।
অবশ্য আশার আলো দেখাচ্ছে চীনের বাজার। সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে আম রপ্তানির বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। ২৮ মে প্রথমবারের মতো চীনে ৫০ টন আম রপ্তানি করবে বাংলাদেশ। চীন সরকার ইতোমধ্যে ১৫ লাখ টন আম রপ্তানিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
চীনে প্রতি কেজি পরিবহন ব্যয় মাত্র ৭০-৮৫ টাকা; যা ইউরোপের তুলনায় অনেক কম। ফলে সঠিক মান বজায় রেখে উৎপাদন করা গেলে এই বিশাল বাজারে বাংলাদেশি আমের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।
কৃষি মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো আম রপ্তানি বাড়াতে ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, রাজশাহী বিমানবন্দর থেকে কার্গো ফ্লাইট চালু, ১০টি হট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন, ‘ম্যাংগো বোর্ড’ গঠন ও নীতিমালা প্রণয়ন, প্যাকিং হাউস ও আধুনিক প্রসেসিং সুবিধা, কৃষকের জন্য সোলার প্যানেল বিতরণ ও কৃষি ইপিজেড গঠন এবং প্রক্রিয়াজাত পণ্যে সহায়তা।
কাতারকে টার্গেট করে বাংলাদেশ দূতাবাস দোহার বাণিজ্যিক এলাকা সুক ওয়াকিফে আগামী ২৫ জুন থেকে সপ্তাহব্যাপী ফল মেলার আয়োজন করেছে। এতে ৬০টি স্টলে প্রদর্শিত হবে বাংলাদেশি আম, লিচু ও কাঁঠাল।
প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাজারে টিকে থাকতে হলে শুধু উৎপাদন বাড়ানোই নয়, প্রয়োজন মানসম্পন্ন পণ্য, কার্যকর প্যাকেজিং, পরিবহনে অবকাঠামোগত সুবিধা এবং বৈশ্বিক ব্র্যান্ডিং। সরকার ও বেসরকারি খাতের সমন্বিত উদ্যোগে রপ্তানিতে যে উল্লম্ফনের সম্ভাবনা রয়েছে, তা বাস্তবে রূপ নিতে পারলে বাংলাদেশের আম হতে পারে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম উৎস।
গ্লোবাল ট্রেড লিঙ্কের কর্ণধার রাজিয়া সুলতানা বলেন, ভারত, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলো আম রপ্তানিতে আলাদা কার্গো ফ্লাইট ব্যবহার করে, অথচ বাংলাদেশ নির্ভর করে যাত্রীবাহী বিমানের ওপর। প্যাকিং হাউস করা হয়েছে শ্যামপুরে, পণ্য পাঠাতে হয় বিমানবন্দর থেকে। অথচ দুটো একই জায়গায় হওয়া প্রয়োজন ছিল। এতে খরচ কমত।
কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়া বলেন, আগামী ২৮ মে চীনে প্রথমবারের মতো প্রায় ৫০ টন আম রপ্তানি করবে বাংলাদেশ। দেশভিত্তিক পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে কীভাবে আমের রপ্তানি বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বিমান ভাড়া কমানোর লক্ষ্যে কার্গো বিমান ব্যবস্থার বিষয়ে সিভিল এভিয়েশনের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com