ইমরান খানের মা বলেছিলেন, বিদেশিনীকে বিয়ে না করতে
প্রকাশ : ১৩-০৮-২০২৫ ০০:০১

ছবি: সংগৃহীত
ক্রীড়া ডেস্ক
পাকিস্তানের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার, ১৯৯২ সালের বিশ্বজয়ী অধিনায়ক এবং পরবর্তীতে দেশের প্রধানমন্ত্রী—ইমরান খান। খেলোয়াড়ি জীবনে যেমন ছিলেন ক্রিকেটের নায়ক, তেমনি ছিলেন গ্ল্যামারের কেন্দ্রবিন্দু।
তার দ্বিতীয় আত্মজীবনী অলরাউন্ড ভিউ, যা প্রকাশিত হয় ১৯৮৮ সালে, সেখানে তিনি তুলে ধরেছেন শৈশব, বেড়ে ওঠা, ক্রিকেট-জীবন, পাকিস্তানের সমাজ-সংস্কৃতি, প্রেম ও বিয়ে নিয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি।
ইমরান শুরুতেই লিখেছেন, জীবনের দুই বড় সিদ্ধান্ত ছিল— মদ্যপান না করা এবং বিয়ে না করা। তার মতে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ও সংসারধর্ম একসাথে চলা কঠিন। বছরজুড়ে সফরে থাকা একজন খেলোয়াড়ের পক্ষে স্ত্রী-সন্তানের প্রতি ন্যায়বিচার করা সহজ নয়। স্ত্রীকে সফরে নেওয়া হলেও তাতে লাভ হয় না; খেলোয়াড়রা খেলার মধ্যেই ব্যস্ত থাকেন, আর স্ত্রীদের মন খারাপ হয়, বিশেষ করে স্বামী যদি আকর্ষণীয় হন এবং চারপাশে নারীভক্তদের ভিড় থাকে।
তিনি উদাহরণ দিয়েছেন গ্রেগ চ্যাপেলের, যিনি বিদেশ সফরে যেতে চাননি সন্তানদের বড় হওয়ার সময়ে। অনেক ক্রিকেটারের স্ত্রী অভিযোগ করতেন, তাদের জীবনে পারিবারিক সময় বলে কিছুই নেই— স্বামীরা হয় খেলছেন, নয়তো খেলার ধকল কাটাচ্ছেন। অবসরের পর পেশাদার খেলোয়াড়দের জীবনও অনিশ্চিত, তাই সংসারের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বাড়তি চাপ হয়ে দাঁড়ায়।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানের হয়ে ইংল্যান্ড সফরে যাওয়ার আগে মায়ের শেষ উপদেশ ছিল— কোনো বিদেশি বউ নিয়ে আসিস না। তার ধারণা ছিল, পশ্চিমা মেয়েরা পাকিস্তানি সংস্কৃতিতে মানিয়ে নিতে পারবে না, আর মানিয়ে নিতে না পারলে স্বামীকে নিয়েই ফিরে যাবে। তাই ইমরান ঠিক করেছিলেন, বড় মামাতো ভাইদের মতো তিনিও দেশে ফিরে পারিবারিকভাবে বিয়ে করবেন।
তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ব্যস্ততায় পাকিস্তানে দীর্ঘ সময় থাকা হয়নি তার। বয়স ৩০ পেরোলে মনে হলো, এবার স্থায়ী হওয়ার সময় এসেছে। কিন্তু বাস্তবে বিয়ে করা তত সহজ নয়। এই সময় তিনি এক ব্রিটিশ নারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। সাংস্কৃতিক পার্থক্য ও দীর্ঘ সফরজীবনের কারণে সম্পর্ক ভেঙে গেলেও তিনি বুঝলেন— কাকে, কখন বিয়ে করা হবে, তা আগে থেকে বলা যায় না।
বিয়ের ধরন নিয়ে ইমরানের মত ছিল, ভালোবাসার বিয়ে বা দেখাশোনা করে বিয়ে— দুটোতেই সফলতা নির্ভর করে বন্ধুত্বের ওপর। তবে পাকিস্তানি সমাজে দেখাশোনা করে বিয়েতে প্রত্যাশা কম থাকায় সম্পর্ক টিকে থাকার সম্ভাবনা বেশি। ভালোবাসার বিয়েতে আবেগ হারিয়ে গেলে কিছুই অবশিষ্ট থাকে না।
বিদেশে থাকা পাকিস্তানিদের দ্বিধার কথাও লিখেছেন তিনি। তাদের সন্তানরা পশ্চিমা শিক্ষা ও মূল্যবোধে বড় হচ্ছে, কিন্তু মা-বাবা আঁকড়ে ধরেছেন প্রাচ্যের সংস্কৃতি। এতে প্রজন্মের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। ব্রিটেনে জন্ম নেওয়া অনেক পাকিস্তানিই জাতিগত বৈষম্যের মুখে পড়ে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চায়, আবার পাকিস্তানে গিয়েও নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে না।
খ্যাতি নিয়েও বলেছিলেন ইমরান— শৈশবে বড় বোন তাকে বলতেন, তিনি নাকি দেখতে ভালো নন। পরে ক্রিকেটে সাফল্যের সঙ্গে সঙ্গেই ‘সুদর্শন’ উপাধি পেতে শুরু করেন। খ্যাতি তাকে অবাক করলেও প্রশংসা পাওয়ার আনন্দ স্বীকার করেছেন। তবে মা-বাবা সব সময় তাকে শিখিয়েছেন— খ্যাতি ক্ষণস্থায়ী, পা মাটিতে রাখতে হবে।
একটি ঘটনা তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন— ১৯৭৯ সালের ভারত সফরের সময় জনপ্রিয়তা এত বেড়েছিল যে, একবার ভিড় এড়িয়ে চলতে চাইলেও বাবা তাকে জনসমক্ষে যেতে বাধ্য করেন। হাজারো মানুষের ভিড় দেখে বাবা বিস্মিত হয়েছিলেন, বুঝেছিলেন ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা পাকিস্তানের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।
যে ইমরান একসময় বিয়ে নিয়ে অনাগ্রহী ছিলেন, তার প্রেমের গুঞ্জন ছিল অনেক— জিনাত আমান, রেখা, মুনমুন সেন, এমা সার্জেন্ট, সিতা হোয়াইটসহ বহু নাম। এক সাক্ষাৎকারে সুনীল গাভাস্কার মজা করে জিজ্ঞেসও করেছিলেন, ‘প্রেমিকা না টেস্ট উইকেট—কোনটা বেশি?’ (ইমরানের টেস্ট উইকেট সংখ্যা ছিল ৩৬২)।
মায়ের অনিচ্ছা সত্ত্বেও ১৯৯৫ সালে ইমরান প্রথম বিয়ে করেন ব্রিটিশ ধনকুবের ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব জেমিমা গোল্ডস্মিথকে। তাদের দুই সন্তান— সুলাইমান ও কাশিম। নয় বছর পর ২০০৪ সালে সেই দাম্পত্যের অবসান হয়।
এরপর ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ সাংবাদিক ও লেখক রেহাম খানকে, যা একই বছরের অক্টোবরে ভেঙে যায়।
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইমরান তৃতীয়বার বিয়ে করেন পাকিস্তানের আধ্যাত্মিক উপদেষ্টা ও সুফি গুরু বুশরা বিবিকে। গুঞ্জন ছিল, বুশরা বিবি নাকি স্বপ্নে দেখেছিলেন— ইমরানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার একমাত্র উপায় তাকে বিয়ে করা।
সেই বছরই সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে পাকিস্তানের ২২তম প্রধানমন্ত্রী হন ইমরান খান। ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট শপথ নেন তিনি। তবে ২০২২ সালে অনাস্থা ভোটে ক্ষমতা হারান এই সাবেক বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com