খাগড়াছড়িতে সড়ক অবরোধ, সাজেকে আটকা দুই হাজার পর্যটক
প্রকাশ : ২৭-০৯-২০২৫ ১২:০০

ছবি : সংগৃহীত
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
খাগড়াছড়িতে এক পাহাড়ি নারীকে নির্যাতনের প্রতিবাদে জুম্ম ছাত্র-জনতা সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধ ডেকেছে। শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে শুরু হওয়া এ অবরোধের ফলে জেলার অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। হঠাৎ অবরোধের ডাক দেওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সাজেক ভ্যালিতে প্রায় দুই হাজার পর্যটক আটকে আছেন। খাগড়াছড়ি শহরেও অনেকে আটকা পড়েছেন।
খাগড়াছড়ি-সাজেক পরিবহন কাউন্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত মো. আরিফ জানান, শুক্রবার অন্তত ২০০টির বেশি গাড়ি সাজেকে গেছে, যাতে প্রায় দুই হাজার পর্যটক রয়েছেন। শনিবারও খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকগামী বেশ কয়েকটি গাড়ি প্রস্তুত থাকলেও প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া সেগুলো ছাড়া হচ্ছে না।
অবরোধের কারণে খাগড়াছড়ি শহরের বলপাইয়ে আদাম এলাকায় অন্তত ছয়-সাতটি গাড়ি আটকে রেখেছেন পিকেটাররা। কাছাকাছি অবস্থানে থাকা যাত্রীরা হেঁটে শহরে প্রবেশ করছেন। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছেড়ে আসা অনেক নৈশ কোচও জেলার বিভিন্ন জায়গায় আটকে পড়েছে।
অবরোধকারীরা খাগড়াছড়ি-ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়ক ছাড়াও পানছড়ি, দীঘিনালা, মহালছড়িসহ জেলার বিভিন্ন সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছের গুড়ি ফেলে ব্যারিকেড তৈরি করেছেন। কিছু জায়গায় গাছ কেটে সরাসরি সড়ক অবরোধ করা হয়েছে।
নোয়াখালী থেকে আসা পর্যটক মো. ফারুক বলেন, বন্ধুদের নিয়ে সাজেক যাওয়ার জন্য খাগড়াছড়ি এসেছি। এখানে এসে অবরোধের খবর পাই। এখন আমরা আটকে আছি, যেতে পারব কিনা কিছুই জানি না। গাজীপুর থেকে পরিবার নিয়ে আসা মো. সোলাইমান বলেন, ছোট ছেলে-মেয়ে নিয়ে পথে আছি। সাজেকের গাড়ি না ছাড়লে হোটেলে উঠব কিনা সে চিন্তায় আছি।
তবে এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল জানিয়েছেন, গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ ব্যারিকেড সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় খাগড়াছড়ি সদর এলাকায় প্রাইভেট পড়ে বাসায় ফেরার পথে এক মারমা কিশোরী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর বাবা অজ্ঞাতনামা তিনজনকে আসামি করে সদর থানায় মামলা করেন। সেনাবাহিনীর সহায়তায় সন্দেহভাজন শয়ন শীলকে আটক করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
এদিকে শুক্রবার খাগড়াছড়িতে নিপীড়নবিরোধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদিন সকালে খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে চেঙ্গী স্কয়ারে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে এক সমাবেশ থেকে আজ শনিবার খাগড়াছড়ি জেলায় সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধের ডাক দেওয়া হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, পাহাড়ে নারী নিপীড়ন, ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটলেও বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে অভিযুক্তরা ছাড় পেয়েছে। সমাবেশ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে অব্যাহত নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানানো হয়। সেই সঙ্গে পাহাড়ি নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতেরও দাবি জানান তারা।
সমাবেশে বক্তব্য দেন আয়োজক সংগঠনের নেতা কৃপায়ন ত্রিপুরা, ক্যাচিংনু মারমা, আকাশ ত্রিপুরা, কবিতা চাকমা, উকানু মারমা প্রমুখ।
সমাবেশে কবিতা চাকমা বলেন, গত মঙ্গলবার আমাদের এক বোন ধর্ষণের শিকার হয়েছে। আমরা তার বিচার দাবিতে সমাবেশ করছি। পার্বত্য চট্টগ্রামে সব ধর্ষণের বিচার করতে হবে।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com