গরুর মাংস ও ডিমে অস্বস্তি, মুরগি-মাছে স্বস্তি
প্রকাশ : ১৭-০৫-২০২৫ ০০:০৪

ছবি : সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক
বাজারে গরুর মাংসের দাম চড়া। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকায়; যা অনেক মধ্যবিত্ত ও স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে। এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে ডিমের দাম ডজনে প্রায় ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে।
অন্যদিকে অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেকটা কম দামেই মিলছে ব্রয়লারসহ সবধরনের মুরগির মাংস। ফলে অনেকেই গরুর মাংস থেকে মুখ ফিরিয়ে ঝুঁকছেন তুলনামূলক সস্তা মুরগির দিকে। এদিকে মাছের বাজারও তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকায় মাছ ও মুরগিতেই স্বস্তি খুঁজে নিচ্ছেন ক্রেতারা।
এদিকে বেশিরভাগ সবজির দামের চড়াভাব এখনো কাটেনি। তবে কিছু কিছু সবজি আগের চেয়ে তুলনামূলক কম দামে বিক্রি হচ্ছে।
দীর্ঘদিন বাজারে প্রোটিনের সস্তা উৎস হিসেবে পরিচিত ডিমের দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে ছিল। এখন দাম বাড়ায় তাদের কেউ কেউ উষ্মা প্রকাশ করছেন। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এতদিন ডিম বিক্রি করে লোকসান করেছেন খামারিরা। এখন দাম কিছুটা বাড়লে সেটি খামারিদের জন্য ন্যায্য হবে।
শুক্রবার (১৬ মে) সকালে রাজধানীর একাধিক বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহ ব্যবধানে বাজারে কমেছে সব ধরনের মুরগির দাম। কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত কমে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর কেজিতে ২০ টাকা কমে প্রতিকেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকায়। এ ছাড়া আজকের বাজারে দেশি মুরগি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৬০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকায়। আর জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়।
বিক্রেতারা বলছেন, দুই সপ্তাহ আগেও ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। আর মাসখানেক আগে বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়। তবে হঠাৎ করেই কিছুদিন ধরে অস্বাভাবিকভাবে সেই দাম ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায় নেমে এসেছে। অনেকটা যেন পানির দামে মুরগি বিক্রি হচ্ছে। তাই ক্রেতাদের ভিড়ও বেশি। অনেকেই বেশি পরিমাণে কিনে ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রাখছেন।
এদিকে মুরগির দাম কমলেও বাজারে আগের মতোই চড়া রয়েছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায়। এ ছাড়া প্রতি কেজি খাসির মাংস এক হাজার ২৫০ টাকা ও ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ১০০ টাকায়।
আজকের বাজারে মাছের দামও অনেকটা স্থিতিশীল রয়েছে। বাজারে প্রতি কেজি রুই ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, কাতল ৩৪০ থেকে ৪০০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, টেংরা ৬০০-৭০০ টাকা, চাষের শিং ৫০০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ টাকা, চাষের কৈ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, কোরাল ৭৫০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০ থেকে ২২০ টাকা ও তেলাপিয়া ১৫০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া প্রতি কেজি বোয়াল ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, পোয়া ৪০০ টাকা, আইড় ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, দেশি কৈ ৮০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা ও দেশি শিং এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বড় বাজারগুলোতে এখন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা ডজন হিসেবে। পাড়া-মহল্লায় প্রতি ডজন ডিম ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যেখানে গত সপ্তাহেও এ দাম ছিল ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা।
তবে সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। বাজারে এখন ব্রয়লার ১৬০ থেকে ১৮০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। অন্যদিকে কিছু কিছু দোকানে গরুর মাংস কিছুটা বাড়তি দামে বিক্রি করার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। তবে দরদাম করে আগের দামে কেনা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা।
পুরোনো মিনিকেট চাল বাড়তি দামে বিক্রি হলেও কিছুটা কমেছে বাজারে নতুন আসা মিনিকেট। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পুরোনো মিনিকেট চাল যেখানে সর্বনিম্ন ৭২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, সেখানে নতুন মিনিকেটের কেজি ৭০ টাকা। তবে ভালো মানের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পুরোনো মিনিকেট চাল এখনো সর্বোচ্চ ৮৫-৮৬ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
বাজারে এখন গ্রীষ্মের পটোল-ঢ্যাঁড়সের মতো সবজিগুলো অন্যসময়ের তুলনায় কম দামে কেনা যাচ্ছে। এসব সবজি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪০-৬০ টাকায়। এ ছাড়া চিচিঙ্গা, ঝিঙে, কাকরোল, উস্তা, বেগুন ও বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়।
রামপুরা বাজারে শফিকুল ইসলাম নামের এক স্কুল শিক্ষক বলেন, বাজারে এসেছিলাম মাংস নিতে। গরুর মাংসের দাম বাড়তি এবং সেই তুলনায় মুরগির দাম বেশ কম থাকায় মুরগির মাংসই নিয়েছি। গরুর তুলনায় বাচ্চারাও মুরগির মাংসই বেশি পছন্দ করে।
তিনি বলেন, কিছুদিন পরই ঈদ আসছে, তাই একটু বেশি করে কিনে নিয়েছি। আমার মতো আরো অনেকেই নিচ্ছে। বলা তো যায় না, ঈদ উপলক্ষ্যে হয়তো আবারো দাম বেড়ে যাবে।
মগবাজারে বিউটি খাতুন নামের এক গৃহিণী বলেন, এক কেজি গরুর মাংস নিয়েছি ৮০০ টাকায়। দাম কিছুটা বেশিই মনে হচ্ছে। কিন্তু কিছু তো করার নেই। দামাদামি করারও কোনো সুযোগ নেই। ব্যবসায়ীদের ভাবখানা এমন যে নিলে নেন, না নিলে বিদায় হোন।
তিনি বলেন, গত ঈদের পর থেকে বাজারে মাছের দামটাও একটু বেশি। তবে অন্যদিনের তুলনায় আজ একটু কম মনে হয়েছে। আবার ব্রয়লার মুরগির দামও দেখলাম দাম অনেকটা কম।
খিলগাঁও বাজারের মুরগি বিক্রেতা রাসেল মিয়া বলেন, প্রচণ্ড গরমের কারণে মুরগির দাম কমে গেছে। কেউই আর মুরগি ধরে রাখতে চায় না। তাই দাম কিছুটা কম হলেও ছেড়ে দেয়। রাখতে গেলেই গড়ে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচটি মুরগি গরমে মারা যায়। যে কারণে ১৭০ টাকায়, এমনকি মাঝেমধ্যে ১৬০ টাকা হলেও দিয়ে দিচ্ছি।
শান্তিনগর বাজারের মুরগি বিক্রেতা আশিকুল ইসলাম বলেন, মাসখানেক আগেও ব্রয়লার মুরগি ২০০ টাকার বেশি বিক্রি করেছি। কিন্তু গত দুই সপ্তাহে দাম ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত কমে গেছে। প্রতি মুরগিতে কোনো রকম খরচ উঠতেছে।
বনশ্রী এলাকার মাছ বিক্রেতা জসিম উদ্দিন জানান, মাছের বাজারে খুব বেশি পার্থক্য নেই। কিছু মাছের দাম কিছুটা কমেছে, আবার ইলিশসহ আরো কিছু মাছের দাম বেড়েছে। তবে সবমিলিয়ে ভালোই বিক্রি হচ্ছে।
মালিবাগ বাজারের পাইকারি ডিম বিক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, বর্ষার এ মৌসুমে অন্যান্য বছর ডিমের দাম আরো বেশি থাকতো। এ বছর অনেকদিন ধরে ডিমের দাম কম, খামারিরা লোকসান গুনছেন। অনেক খামার বন্ধও হয়ে গেছে।
সবজি বিক্রেতা মনির হোসেন বলেন, গ্রীষ্মকালীন সবজির সরবরাহ বেড়েছে, দামও কমছে। তবে বাজার এখনো ওঠানামা করছে। বৃষ্টিতে সরবরাহ কমলে দাম বাড়ছে। এ ছাড়া প্রতিদিনই দামে কিছুটা হেরফের হয়।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com