চাল-ডিমের দাম বেড়েছে, ৮০ টাকার নিচে মিলছে না সবজি
প্রকাশ : ১৫-০৮-২০২৫ ১৫:৫৩

ছবি : সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। রাজধানীসহ সারা দেশে চাল, ডিম, সবজি, মসলা ও মাছের দাম লাগামছাড়া হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে, অতি সাধারণ খাদ্যপণ্য হিসেবেই পরিচিত ডিম, চাল ও সবজির মূল্যবৃদ্ধি এখন গড়পড়তা ক্রেতাদের জন্য বাড়তি চাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ডজনপ্রতি ডিমের দাম ১৫০ টাকা, অধিকাংশ সবজি ৮০ টাকার উপরে, আর চালের দাম ৬০-১০০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করছে। মসলাজাতীয় পণ্যের মধ্যে পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের দামে ব্যাপক উল্লম্ফন দেখা গেছে। মৌসুমি প্রভাব, সরবরাহ ঘাটতি, বৃষ্টিপাত ও মৌসুম শেষ হওয়ার মতো নানা অজুহাতে দাম বেড়েই চলেছে।
অন্যদিকে, ভরা মৌসুমেও ইলিশসহ মাছ-মাংসের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। সরকারের পক্ষ থেকে কিছু নিয়ন্ত্রণমূলক উদ্যোগের আশ্বাস থাকলেও বাজারে এখনো তার বাস্তব প্রতিফলন নেই। সবমিলিয়ে মধ্য ও নিম্নআয়ের মানুষের জন্য টিকে থাকা প্রতিদিন আরো কঠিন হয়ে পড়ছে।
এ মাসের শুরুতেই প্রতি ডজন ডিমের দাম ছিল ১২০ টাকা; যা এখন ঠেকেছে ১৫০ টাকায়। সহজ প্রোটিনের উৎস এ খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায় দারুণ অস্বস্তিতে পড়েছেন নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষ। অন্যদিকে বাজারে চালের দাম বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরেই বেশি। এরমধ্যে বেশিরভাগ সবজিও মিলছে না প্রতি কেজি ৮০ টাকার নিচে। সঙ্গে গত দুই সপ্তাহ ধরেই পেঁয়াজ, আদা ও এলাচের দাম বেড়েছে। সবমিলে অনেকগুলো পণ্যের দাম একসঙ্গে বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন মানুষ।
জুলাই-আগস্ট মূলত ইলিশের ভরা মৌসুম। মৌসুমের শুরুতে ইলিশের সরবরাহ কম ছিল বিধায় চড়া দামে ইলিশ বিক্রি হতো রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন ছোট-বড় বাজারে। তবে মৌসুমের মধ্যভাগে বেড়েছে সরবরাহ। ফলে কিছুটা দাম কমে পাওয়া যাচ্ছে কাঙিক্ষত ইলিশ।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) রাজধানীর কয়েকটি বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেই এমনটি জানা গেছে।
বাজারে দেখা গেছে, পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজিতে। কয়েক সপ্তাহ আগেও ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে পেঁয়াজ। বেড়েছে আদার দামও। বর্তমানে বাজারে আমদানি করা আদা ৩০০ থেকে ৩৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আর দেশি রসুন ১৬০ টাকা কেজি, আমদানি করা রসুন ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া প্রতি কেজি ৮০ টাকার নিচে মিলছে না বেশিরভাগ সবজি। এর নিচে শুধু মিলছে ৪০ টাকা কেজিদরে পেঁপে এবং ৩০ টাকা কেজি দরে আলু। বাজারে প্রতি কেজি লম্বা বেগুন ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, উস্তা ১০০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, কচুর লতি ৬০ টাকা, কচুমুখী ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর বাইরে গাজর ৮০ টাকা, শসা ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, কাঁকরোল ৭০ টাকা, ঝিঙ্গা ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, ধন্দুল ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে। প্রতি হালি কলা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায় ও টমেটো প্রতি কেজি ১৬০ টাকায়। কাঁচামরিচ এখন ২২০ থেকে ২৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে৷ টমেটো ১৬০ থেকে ২০০ টাকা, গাজর ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অবশ্য কারওয়ান বাজার বা বড় পাইকারি বাজারে প্রতিটি সবজির দামই তুলনামূলক কম। সপ্তাহের অন্যান্য দিনের তুলনায় শুক্রবার সবজির দাম কিছুটা বেড়ে যায়।
বাজারে খাসির মাংস এক হাজার ২০০ টাকা ও গরুর মাংস ৭৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতিহালি ডিম ৪৬ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, অর্থাৎ ডজনপ্রতি ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা।
মুরগির বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারে এখন ব্রয়লার মুরগি ১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহ খানেক আগেও ১৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। পাকিস্তানি মুরগি ৩০০ টাকা এবং দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজিতে।
এদিকে, বাজারে ইলিশের দামও চড়া রয়েছে। বাজারে বড় সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি দুই হাজার ১০০ টাকা পর্যন্ত। মাঝারি সাইজের ইলিশের দামও এক হাজার ২০০ টাকা থেকে শুরু হচ্ছে। আর ছোট সাইজের ইলিশ কেজিপ্রতি ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাঙ্গাস ১৬০ থেকে ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে, চালের চড়া দামে নিম্নমুখী কোনো প্রবণতাই লক্ষ্য করা যায়নি। মাস দেড়েক ধরে উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে চাল। মোটা চালের দামই এখন ৬০ টাকার বেশি। মাঝারি মানের এক ধরনের কিছু মিনিকেট ও নাজিরশাইল রয়েছে, যেটা শুধু ৬৫-৭০ টাকায় পাওয়া যায়। এ ছাড়া বাকি সব চাল সাধারণত ৭৫-৮৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। আর খুব ভালো মানের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের চালের দাম ৯০ থেকে ১০০ টাকা ছুঁইছুঁই করছে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, চলতি বছর খুচরায় গত বছরের চেয়ে গড়ে ১৬ শতাংশ বেশি দামে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীতে এখন কেজি ৮০০ থেকে দুই হাজার টাকায় ইলিশ মিলছে, যেখানে গত বছর দাম ছিল ৮০০ থেকে এক হাজার হাজার ৬০০ টাকা।
পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রেতারা বলছেন, পেঁয়াজের ভরা মৌসুম শেষ হয়ে আসছে। এরমধ্যে, কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে পেঁয়াজের সরবরাহ পর্যায়ে বিঘ্ন ঘটেছে। বাজারে এর প্রভাব পড়েছে।
মালিবাগ এলাকার দোকানি মফিজুর রহমান বলেন, দুই সপ্তাহ আগে ডিমের দাম ১২০ টাকা ডজন ছিল; যা এখন ৩০ টাকা বেড়েছে। তারপরও ডিমের সরবরাহ ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না।
কারওয়ান বাজারে পাইকারি বিক্রেতা জুবায়ের আলী বলেন, উৎপাদন এলাকায় পেঁয়াজের দাম কয়েক দিন বেড়েছে। পাবনা-ফরিদপুর এলাকার মোকামে প্রতি মণ পেঁয়াজের দাম প্রায় ৪০০ টাকা বেড়েছে।
সেগুনবাগিচা বাজারে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাজার করতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী খুরশিদ আলম। তিনি বলেন, আজকে বাজারে দেখছি সব ধরনের সবজির অতিরিক্ত দাম। কিছুদিন ধরে সবজির দাম বাড়তি যাচ্ছে, অথচ কী কারণে বাড়তি যাচ্ছে বা বাজার নিয়ন্ত্রণের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করতে কাউকে দেখা যাচ্ছে না। যদি সবজির এত দাম হয়, তাহলে সাধারণ ক্রেতা খাবে কী?
মালিবাগ বাজারের ক্রেতা নাজমুল ইসলাম বলেন, বাজারে ৮০ থেকে ১০০ টাকার নিচে, কোনো সবজি নাই। কিছু কিছু সবজির এর চেয়েও বেশি দাম। এত দাম যদি সবজির হয় তাহলে আমরা কিনব কীভাবে? বিক্রেতারা কারণ হিসেবে বলছেন— থেমে থেমে বৃষ্টি আর বেশিরভাগ সবজির মৌসুম শেষ। কিন্তু আমরা ক্রেতা হিসেবে দেখতে পাচ্ছি এক মাসেরও বেশি সময় ধরে সবজির দাম অতিরিক্ত বেশি যাচ্ছে।
মগবাজারের সবজি বিক্রেতা মুকিদুর রহমান বলেন, পাইকারি বাজারে আমাদের অতিরিক্ত দামে সব সবজি কিনতে হচ্ছে। আড়তে মালের সরবরাহ খুবই কম। যে কারণে সবজিগুলো বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। একদিকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে সেজন্য ফসলের ক্ষতি হয়েছে, সেই সঙ্গে ঢাকায় সরবরাহ কমেছে। অন্যদিকে বাজারে বর্তমানে থাকা বেশিরভাগ সবজির মৌসুম এখন শেষ হয়েছে, নতুন করে সবজি বাজারে ওঠার আগ পর্যন্ত এ অবস্থা চলতে পারে।
এদিকে গত মঙ্গলবার পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণা দিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি বলেন, পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে শিগগিরই পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। আমদানি উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। যে দেশে সস্তায় পাওয়া যাবে সেখান থেকেই পেঁয়াজ আমদানি করা হবে।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com