দেশে প্রজনন হার বাড়ছে : বিবিএস ও ইউনিসেফের জরিপ
প্রকাশ : ১৭-১১-২০২৫ ১৩:৫৬
ছবি : সংগৃহীত
পিপলসনিউজ ডেস্ক
নতুন জরিপ বলছে- বাংলাদেশে দীর্ঘ পাঁচ দশকের অগ্রগতির পর আবারো মোট প্রজনন হার (টিএফআর) বেড়ে দুই দশমিক চার-এ উঠেছে। স্বাধীনতার পর ছয়টির বেশি সন্তান জন্মদানের ঐতিহাসিক বাস্তবতা থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে নিচে নামতে থাকা টিএফআর ২০২৪ সালেও ছিল দুই দশমিক ১৭। কিন্তু বিবিএস ও ইউনিসেফের সর্বশেষ জরিপ দেখাচ্ছে, প্রায় এক দশক স্থিতিশীল থাকার পর এবার হারটি আবার ঊর্ধ্বমুখী।
ময়মনসিংহে সর্বোচ্চ দুই দশমিক আট এবং রাজশাহীতে সর্বনিম্ন দুই দশমিক দুই- এমন অঞ্চলভেদে বৈষম্য, দরিদ্র ও নিরক্ষর নারীদের মধ্যে তুলনামূলক বেশি সন্তান জন্মদানের প্রবণতা, পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের শিথিলতা এবং জনসংখ্যা নীতির দুর্বল বাস্তবায়ন- সব মিলিয়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধির নতুন চাপের আশঙ্কা জোরালো হয়ে উঠছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, টিএফআর বৃদ্ধি অর্থনীতির ওপর বাড়তি বোঝা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে নতুন চ্যালেঞ্জ এবং দেশের সামগ্রিক উন্নয়নগত অগ্রযাত্রার জন্য সম্ভাব্য সতর্ক সংকেত।
একজন নারী তার প্রজনন বয়সে (১৫ থেকে ৪৯ বছর) যত সন্তানের জন্ম দেন, সেটিকে বলা হয় মোট প্রজনন। স্বাধীনতার সময় বাংলাদেশের নারীরা গড়ে ছয়টি বা তার বেশি সন্তানের জন্ম দিতেন। পাঁচ দশক ধরে বাংলাদেশ টিএফআর কমানোর চেষ্টা করেছে। অর্থনীতি ও স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের বড় অর্জনের একটি এই জন্মহার কমানো।
রবিবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এবং ইউনিসেফ যৌথভাবে মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে (মিকস) ২০২৫ প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ময়মনসিংহ বিভাগে প্রজনন হার সবচেয়ে বেশি, দুই দশমিক আট। সবচেয়ে কম রাজশাহী বিভাগে, দুই দশমিক দুই। সবচেয়ে দরিদ্র পরিবারের নারীদের মধ্যে এবং কম শিক্ষিত বা নিরক্ষর নারীদের মধ্যে টিএফআর বেশি।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে টিএফআর ছিল ছয় বা তার বেশি। মিকস ও অন্যান্য উৎসের তথ্য ব্যবহার করে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৮২ সালে টিএফআর ছিল পাঁচ দশমিক শূন্য সাত। এরপর তা কমতে থাকে। ১৯৯৪ সালে টিএফআর কমে হয় তিন দশমিক চার। টিএফআর আরো কমতে থাকে, ২০০৪ সালে তা কমে হয় তিন। ২০১২ সালে ছিল দুই দশমিক তিন এবং ২০২২ সালেও একই হার। ২০২৪ সালের দিকে তা ছিল দুই দশমিক ১৭ বা তার কাছাকাছি।
পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে টিএফআর কখনো কমতে দেখা যায় না। হয় ক্রমাগত কমেছে, না হয় কয়েক বছর ধরে স্থির অবস্থায় ছিল। যেমন ১৯৯৬ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত টিএফআর তিন দশমিক তিন ছিল। আবার ২০১২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত টিএফআর দুই দশমিক তিন ছিল। অর্থাৎ এক দশক ধরে টিএফআর স্থির ছিল। টিএফআর কেন কমছে না, তা নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে।
স্বাধীনতার পর সরকার জনসংখ্যা কমানোর নীতি গ্রহণ করে। পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির ওপর জোর দেওয়া হয়। মানুষের হাতের কাছে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার কর্মকৌশল দেওয়া হয়। পাশাপাশি ব্যাপক জনসচেতনতা কর্মকাণ্ড চালু করা হয়। রাষ্ট্র পরিচালিত টেলিভিশন ও বেতার এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে। পরিবার পরিকল্পনা মাঠকর্মী ছাড়াও এনজিওরা এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে।
গত কয়েক দশকে সক্ষম দম্পতিদের মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের হার বেড়েছে। মানুষ সহজে হাতের কাছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা দোকান থেকে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী কিনতে পারে। এর পাশাপাশি নারী শিক্ষার হার বেড়েছে। কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। এসব উপাদানও টিএফআর কমাতে সহায়তা করেছে।
বাংলাদেশের উদ্দেশ্য ছিল টিএফআর দুই দশমিক এ-এ নিয়ে যাওয়া; তা হয়নি। টিএফআর বেড়ে যাওয়ার অর্থ জনসংখ্যার চাপ বেড়ে যাওয়া। বাংলাদেশ এমনিতেই জনবহুল দেশ। তারপরও জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতি বেড়ে গেলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ার ঝুঁকি আছে অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ নানা ক্ষেত্রে।
জনসংখ্যাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম বলেন, ‘টিএফআর বাড়ছে, এর অর্থ আমাদের পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম ঠিকভাবে চলছে না। এটা দেখে মনে হচ্ছে আমাদের জনসংখ্যাবিষয়ক নীতি ও কর্মকৌশল সঠিক পথে নেই। এমনিতেই দেশে বেকারত্ব বেশি। টিএফআর বৃদ্ধি দেশের সার্বিক উন্নয়নকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিতে পারে।’
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com