নানা অভিযোগ নিয়ে বিসিবি নির্বাচন আজ
প্রকাশ : ০৬-১০-২০২৫ ১০:৫২

ছবি : সংগৃহীত
ক্রীড়া প্রতিবেদক
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচন আজ। রাজধানীর একটি হোটেলে সোমবার (৬ অক্টোবর) সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে বিসিবি পরিচালক পদে ভোটগ্রহণ। তিনটি ক্যাটাগরিতে পরিচালক হবেন ২৩ জন। বাকি দুজন পরিচালক সরাসরি মনোনয়ন পাবেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে। ফল ঘোষণা করা হবে সন্ধ্যা ৬টায়।
পরিচালকদের ভোটে এ দিনই সভাপতি ও সহ-সভাপতি নির্বাচন হয়ে যাবে। সেই ফল জানা যাবে রাত ৯টায়।
নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন মোট ২১ জন প্রার্থী। এমনকি নির্বাচনের আগে রাত ২টার পর নাম প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন ক্লাব ক্যাটেগরির প্রার্থীদের একজন মোহাম্মদ ফায়জুর রহমান ভূঞা।
নির্বাচনের আগেই বিসিবি পরিচালক পদ নিশ্চিত হয়ে গেছে নয় জনের। সবচেয়ে বেশি ১২ পরিচালক আসেন যে কোটা থেকে, সেখানেও আদতে আকর্ষণের কিছু অবশিষ্ট নেই।
কেবল ৩ নম্বর ক্যাটাগরিতে (সাবেক ক্রিকেটার, বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন সংস্থা) সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ (পাইলট) ও সাবেক ক্রিকেটার দেবব্রত পালের লড়াই ঘিরেই রোমাঞ্চ যা একটু আছে। এ ছাড়া ১ নম্বর ক্যাটাগরিতে (জেলা-বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা) রংপুর বিভাগে কিছুটা দৃষ্টি থাকবে, যেখানে একটি পদের লড়াইয়ে আছেন তিনজন।
নাজমুল হাসান (পাপন) টানা তিনবার বিসিবি সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। এবার আমিনুল ইসলামও (বুলবুল) একইভাবে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছাড়াই সভাপতি হওয়ার পথে।
চার মাস আগে নাটকীয় পালাবদলের পথ ধরে ফারুক আহমেদের জায়গায় সভাপতি হন আমিনুল। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘একটি কুইক টি-টোয়েন্টি ইনিংস’ খেলে বাংলাদেশের ক্রিকেটে ছাপ রাখতে চান তিনি এবং দীর্ঘমেয়াদে থাকার ইচ্ছা তার নেই। সেই আমিনুলই কিছুদিন আগে সংবাদমাধ্যমে বলেন, ক্রীড়া উপদেষ্টা চাইলে তিনি আবার সভাপতি হয়ে কাজ চালিয়ে যেতে চান।
বিসিবি সভাপতি পদের লড়াইয়ে আমিনুলের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন তামিম ইকবাল। যদি আড়ালে নানা সমীকরণ চলছিল, ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বারংবার উদ্যোগে দুই পক্ষের সমঝোতার চেষ্টা চলছিল। উপদেষ্টা নিজেও সেটি সংবাদমাধ্যমে তুলে ধরেছেন। বড় প্রশ্ন উঠে গেছে সেখানেই।
ক্রীড়াঙ্গনের অভিভাবক হিসেবে ক্রীড়া উপদেষ্টার কাজ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা বা ক্ষেত্র তৈরি করা। সেখানে সমঝোতার চেষ্টা কেন করতে হবে! অভিযোগ উঠেছে, আমিনুলকে সভাপতি করতেই সমঝোতার চেষ্টা করে গেছেন ক্রীড়া উপদেষ্টা।
এ ছাড়া, চার মাস আগে নানা অভিযোগে যাকে বিসিবি সভাপতির পদ থেকে সরানো হয়েছিল, যার বিরুদ্ধে ক্রীড়া উপদেষ্টা নিজেও নানা কিছু বলেছেন, অভিযোগ উঠেছে সেই ফারুক আহমেদকেই তিনি আবার আলিঙ্গন করে নিয়েছেন নির্বাচনী সমীকরণ মেলাতে।
উপদষ্টার সমঝোতার চেষ্টায় কাজ হয়নি। তামিম ইকবাল ও নাম প্রত্যাহার করে নেওয়া অন্যদের দাবি, নির্বাচনের কোনো সুষ্ঠু পরিবেশই তারা পাননি। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে গত বুধবার সরে দাঁড়ান তামিমসহ ১৬ জন প্রার্থী। নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতায় বড় ধাক্কা লাগে তখনই।
নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরুর কিছুদিন পরই একটি সংবাদ সম্মেলনে তামিম বলেছিলেন, সরকারের একটি অংশ নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করার পরও সাবেক এই অধিনায়ক তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান। বলেন, আপনারা জিততেও পারেন, হারতেও পারেন, তবে আজকে ক্রিকেট শতভাগ হেরে গিয়েছে। এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নাই। আপনারা বড় গলায় যে বলেন বাংলাদেশে ফিক্সিং বন্ধ করা লাগবে। আগে নির্বাচনের ফিক্সিং বন্ধ করুন, পরে ক্রিকেটের ফিক্সিং বন্ধ করার চিন্তাটা করবেন।
একইদিন নাম প্রত্যাহার করে নেওয়া আরেক প্রার্থী ইসরাফিল খসরু বলেন, বিসিবি নির্বাচনে নগ্ন হস্তক্ষেপ চলছে। নির্বাচনের কোনো পরিবেশ এখানে নেই। স্বেচ্ছাচারিতা করা হচ্ছে। নতুন বাংলাদেশে এই ধরনের কোনো নির্বাচন আমরা চাই না। সরকারের একটি গোষ্ঠী এখানে হস্তক্ষেপ করছে। আপাতত এটুকুই বলতে পারি। শিগগিরই সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত বলব আমরা।
মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময়সীমা শেষ হয়ে গেলেও সরে নির্বাচন বর্জনের পালা শেষ হয়নি। শুক্রবার মধ্যরাতে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান লুৎফর রহমান বাদল। কারণ খোলাসা না করে তিনি বলেন, অদূর ভবিষ্যতে পরিস্থিতি কখনো অনুকূলে থাকলে সবাইকে জানাব, কেন এবং কী কারণে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলাম।
শনিবার নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে রাজশাহী বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার কাউন্সিলর হাসিবুল আলম বলেন, আগের নির্বাচনের চেয়েও খারাপ পরিস্থিতি এখন চোখে পড়ছে। সুষ্ঠু ভোট হচ্ছে না, বরং এটা প্রহসনের নির্বাচন হয়ে যাচ্ছে।
তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মুহাম্মদ মুখলেছুর রহমান (শামীম), যিনি সরকার ঘনিষ্ঠ বলে গুঞ্জন আছে, তিনি রাজশাহীর ভোটারদের গোপনে ঢাকার একটি হোটেলে এনে রেখেছেন বলে অভিযোগ করেন হাসিবুল।
শনিবার বিকালে ঢাকার ৪৮টি ক্লাব সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন নিয়ে ছয়টি গুরুতর অভিযোগ তোলেন, এর মধ্যে আছে সরকারের হস্তক্ষেপসহ অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার কথা। নির্বাচন পিছিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন না করা হলে সব ধরনের লিগ বর্জনের ঘোষণা দেন তারা। পরদিন তারা প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপিও দেন ওই অভিযোগগুলো তুলে ধরে।
শনিবার রাতে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন মেজর (অব.) ইমরোজ আহমেদ।
বিসিবি সভাপতি আমিনুল ও বিসিবি পরিচালক নাজমূল আবেদীনের সঙ্গে পরিচালক পদের লড়াইয়ে ছিলেন যিনি, সেই এসএম আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদ রেদুয়ান নির্বাচনী লড়াই থেকে সরে যান রবিবার দুপুরে। জামালপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার এই কাউন্সিলর বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের রাতের ভোটকেও হার মানিয়েছে বিসিবির এবারের নির্বাচন।
দেশের একটি দৈনিক পত্রিকায় রবিবার খবর প্রকাশিত হয়, শুক্রবার রাতেই ঢাকার একটি হোটেলে ছক সাজিয়ে ক্লাব ক্যাটাগরির ১২ পরিচালক চূড়ান্ত করে ফেলা হয়েছে। অনেক ভোটারকে একসঙ্গে বসিয়ে ই-ভোট নিয়ে ফেলা হয়েছে।
সেখানে উপস্থিত ছিলেন যিনি, নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো মেজর (অব.) ইমরোজ আহমেদ রবিবার রাতে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেন বারবার বলেন, এটি ‘সেট-আপ’ নির্বাচন। রাতের ভোটের আয়োজনে যা যা দেখেছেন, তা তুলে ধরেন কাঁঠালবাগান গ্রীন ক্রিসেন্ট ক্লাবের এই কাউন্সিলর।
সবশেষ রবিবার রাত দুটোর পর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবের কাউন্সিলর মোহাম্মদ ফয়জুর রহমান ভূঞা বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ও প্রাণবন্ত নির্বাচনের পরিবেশ না থাকায় ক্রিকেটের সুস্থ নির্বাচনী সংস্কৃতি এবং অংশগ্রহণমূলক গণতান্ত্রিক পন্থা পুনঃস্থাপনের লক্ষ্যে তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন।
ক্লাব ক্যাটাগরির পরিচালক পদে আগে প্রার্থী ছিলেন যেখানে ৩০ জন, সেখানে শেষ পর্যন্ত অংশ নিচ্ছেন স্রেফ ১৫ জন। তাদের মধ্যে ১২ জনই পরিচালক হবেন। এর মধ্যে ইয়াং পেগাসাস ক্লাবের আহসানুর রহমান মল্লিক রনি ও এইস ওয়ারিয়র্সের রাকীব উদ্দিন মূলত বসুন্ধরা গ্রুপের। তারা মূলত আনুষ্ঠানিকতার স্বার্থে নির্বাচনে আছেন। কার্যত তাই ১৩ জনের মধ্য থেকে ১২ পরিচালক নির্বাচিত হবেন।
বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বিসিবি কার্যালয়ে নিজের নির্বাচন করা প্রসঙ্গে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখানে আমার কাছে (সরকারের) প্রভাব কিছু মনে হয়নি। আমার মনে হয়েছে, বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য আমার (বিসিবিতে) চালিয়ে যাওয়া দরকার। আমাকে যারা ভোট দিচ্ছেন বা ভোট দেবেন না অথবা আপনারা (সাংবাদিক) যারা আছেন, যদি মনে করেন আমি যথেষ্ট ভালো না, আমি চলে যেতে আগ্রহী আছি যেকোনো সময়।
এর আগে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com