নোয়াখালীতে বিপন্ন প্রজাতির জীবিত ও মৃত ৪২৫ কচ্ছপ উদ্ধার
প্রকাশ : ১৪-০৯-২০২৫ ১২:২০

ছবি : সংগৃহীত
নোয়াখালি প্রতিনিধি
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় পাচারের উদ্দেশ্যে মজুত করা বিপন্ন ও সংকটাপন্ন প্রজাতির জীবিত এবং মৃত ৪২৫টি কচ্ছপ উদ্ধার করেছে বন বিভাগ।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাতে চৌমুহনী পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মন্ডল পাড়ায় একটি পরিত্যক্ত ঘর থেকে কচ্ছপগুলো উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান উপকূলীয় বন বিভাগ নোয়াখালীর সহকারী বন সংরক্ষক একেএম আরিফুজ্জামান।
তিনি বলেন, আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এনে চৌমুহনীতে অবৈধভাবে প্রচুর কচ্ছপ মজুদ করা হয়েছে এমন গোপন খবরে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট (ডাব্লিউসিসিইউ) ও বন বিভাগ সদস্যরা ঘটনাস্থলে অভিযান চালান।
টের পেয়ে পাচারকারী চক্র কচ্ছপগুলো সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করলেও এর মধ্যে ৩২৫টি কচ্ছপ জীবিত এবং ১০০টি মৃত অবস্থায় জব্দ করা হয়েছে।
বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের বন্যপ্রাণী পরিদর্শক আব্দুল্লাহ আস সাদিক বলেন, নোয়াখালী ঢাকা এবং চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী জেলা হওয়ায় এখানে নিয়মিত বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কচ্ছপ এনে মজুদ করা হয়। সেগুলো পরে ঢাকা এবং ভারতসহ দেশ-বিদেশে পাচার করা হয়।
তিনি আরো বলেন, ধারণা করা হচ্ছে গত শীতের মৌসুম থেকেই এখানে কচ্ছপ মজুদ করছিল পাচারকারী চক্র। অভিযানে জীবিত এবং মৃত অবস্থায় ফ্রিজিং করে রাখা কচ্ছপ ছাড়াও কচ্ছপ রাখার ৮০টির মতো ড্রাম পাওয়া গেছে। অর্থাৎ বেশ কিছু কচ্ছপ এর মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
জব্দকৃত কচ্ছপগুলোর মধ্যে কড়ি কাইট্টা, সুন্ধি কাছিম ও ধুম কাছিম প্রজাতির কচ্ছপ রয়েছে বলে জানান তিনি।
এর মধ্যে কড়ি কাইট্টা কচ্ছপ বা ইনডিয়ান রুফড টার্টল (Pangshura tecta) আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ বা আইইউসিএনের লাল তালিকায় ভালনারেবল বা সংকটাপন্ন প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এবং বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন ২০১২ এর তফিসল-১ ভুক্ত সংরক্ষিত।
কড়ি কাইট্টা কচ্ছপ পিঠের খোলসের জন্য পরিচিত। দেখে মনে হয়, এর পিঠের ওপর আলাদা একটি ছাদ আছে। বাদামি খোলসের কিনারার দিক হলদেটে কমলা রঙের। খোলসের মাঝের অংশ কমলা বা লালচে কালো ডোরা রয়েছে।
সুন্ধি কাছিম বা চিতি কাছিম বা ইনডিয়ান ফ্ল্যাপশেল টার্টলও (Lissemys punctata) আইইউসিএনের লাল তালিকায় ভালনারেবল বা সংকটাপন্ন প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ প্রজাতিটি বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-২ অনুযায়ী সংরক্ষিত।
‘ফ্ল্যাপশেল’ নামটি খোলসের উপর অবস্থিত ফিমোরাল ফ্ল্যাপের উপস্থিতি থেকে এসেছে। ত্বকের এই ফ্ল্যাপগুলি খোলসের মধ্যে ফিরে যাওয়ার সময় কচ্ছপের অঙ্গগুলিকে ঢেকে রাখে।
অন্যদিকে ধুম তরুণাস্থি কাছিম বা ধুম কাছিম বা ইনডিয়ান পিকক সফ্টশেল টার্টল (Nilssonia hurum) আইইউসিএনের লাল তালিকায় আছে বিপন্ন প্রজাতি হিসেবে। অর্থাৎ প্রজাতিটি প্রকৃতিতে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
কচ্ছপের প্রজাতিটি বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুযায়ী সংরক্ষিত।
ধুম কাছিম অনেক বড় আকৃতির হয়, ১০ কেজি থেকে শুরু করে ৪৫ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। এগুলো মূলত নিশাচর। ছোট মাছ, শামুক, গুগলি, শেওলা এই কাছিমের খাবার। তবে বিপন্নতার কারণে এগুলো সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য জানা যায় না।
উপকূলীয় বন বিভাগ নোয়াখালীর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু ইউসুফ বলেন, জলজ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কচ্ছপের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রাণী শিকার, হত্যা, সংগ্রহ বা পাচার নিষিদ্ধ। অবৈধভাবে বন্যপ্রাণী সংগ্রহ, সংরক্ষণ বা পাচারের সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এ ধরনের অভিযান চলমান থাকবে।
বনবিভাগের কর্মকর্তারা জানান, জব্দ করা কচ্ছপগুলির মধ্যে শনিবার দুপুরে কিছু কচ্ছপ বন বিভাগের জেলা কার্যালয়ের পুকুরে অবমুক্ত করা হয়। বাকি কচ্ছপগুলোর ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে জীবিত কচ্ছপগুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী উপযুক্ত জলাশয়ে অবমুক্ত করা হবে।
এ ছাড়া মৃত কচ্ছপগুলোর কিছু নোয়াখালীতে মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে এবং কিছু বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ল্যাবে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com