পাকিস্তানকে হারিয়ে এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন ভারত, পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে নাটক
প্রকাশ : ২৯-০৯-২০২৫ ১১:২৯

ছবি : সংগৃহীত
ক্রীড়া প্রতিবেদক
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারত-পাকিস্তানের লড়াই যেন হয়ে উঠেছিল সত্যিকারের ক্রিকেট মহারণ। দুবাইয়ে রোমাঞ্চকর এই ফাইনাল নাটকীয় উত্থান-পতনে ভরা ছিল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। পাকিস্তানের ঝড়ো সূচনা থামিয়ে ভারতীয় বোলারদের দাপট, তিলক ভর্মার শান্ত অথচ দৃঢ় ব্যাটিং, আর শেষ পর্যন্ত ৫ উইকেটের জয়— সব মিলিয়ে ভারত আবারো প্রমাণ করল এশিয়ার সেরা দল হিসেবে নিজেদের আধিপত্য। তবে মাঠের ভেতরের উত্তেজনা ছাপিয়ে যায় ম্যাচ-পরবর্তী নাটক।
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরও ভারতীয় দল ট্রফি নিল না পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও এসিসি-প্রধান মহসিন নাকভির হাত থেকে। পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে এই অস্বাভাবিক দৃশ্য ছড়ায় নতুন আলোচনার ঝড়। ক্রিকেটীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতার সঙ্গে কূটনৈতিক টানাপোড়নও মিশে গিয়ে ফাইনালকে দিয়েছে অন্য রকম মাত্রা।
দীর্ঘ ৪১ বছর পর প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারত-পাকিস্তান লড়াই। প্রত্যাশিতভাবেই ম্যাচটি পরিণত হয়েছিল মহারণে। শেষ ওভার পর্যন্ত উত্তেজনায় ভরপুর এই লড়াইয়ে অবশেষে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে সূর্যকুমার যাদবের ভারত।
এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারত-পাকিস্তান লড়াই মানেই এক অন্যরকম রোমাঞ্চ। তবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে জমজমাট ফাইনালে নাটকীয় উত্থান-পতনের পর শিরোপা হাসল ভারতেরই মুখে।
রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাতে পাকিস্তানের দেওয়া ১৪৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করে ১৯.৪ ওভারেই জয় নিশ্চিত করেছে সূর্যকুমার যাদবের দল। ম্যাচ জয়ের নায়ক তিলক ভর্মা, যিনি দায়িত্বশীল এক ইনিংস খেলে অপরাজিত অর্ধশতক পূর্ণ করেছেন।
এশিয়া কাপ শেষ হলেও নাটক তখনো শেষ হয়নি। খেলা শেষ হওয়ার প্রায় দেড় ঘণ্টা পর শুরু হয়েছে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। তখনো মঞ্চেই ছিলেন এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি) ও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) প্রধান মহসিন নাকভি। কিন্তু তিনি ছিলেন একবারেই নীরব।
পাকিস্তানের খেলোয়াড়েরা রানার্সআপের মেডেল নিয়েছেন বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের হাত থেকে। আর রানার্সআপের চেক তুলে দিয়েছেন নাকভি ও আমিনুল একসঙ্গে। ভারতীয় ক্রিকেটাররা পুরস্কার নিয়েছেন অন্য অতিথিদের কাছ থেকে।
নাটকীয়তা চরমে পৌঁছেছে পুরস্কার বিতরণীর শেষ পর্যায়ে এসে। মঞ্চ থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করেন নাকভি। তার সঙ্গে নেমে যান অতিথিরাও। কারণ, চ্যাম্পিয়ন ভারতীয় দল নাকভির হাত থেকে ট্রফি নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এসিসি ও পিসিবি প্রধানের বাইরেও নাকভির আরেক পরিচয় পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে, নাকভির হাত থেকে ট্রফি নিতে ক্রিকেটারদের নিষেধ করেছে ভারত সরকার। তাই পুরস্কার বিতরণী শেষে ট্রফি নিয়ে যাওয়া হয়েছে ভেতরে। নাকভি নেমে যাওয়ার পর ভারতীয় ক্রিকেটাররা মঞ্চে উঠে ট্রফি ছাড়াই ছবি তুলেছেন।
এর আগে ম্যাচ শেষ হওয়ার পর পুরস্কার বিতরণী মঞ্চ প্রস্তুত করা হলেও শুরুতে সেখানে দেখা যায়নি পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের। প্রায় মিনিট পঞ্চাশেক পরে তারা যখন এলেন, তখনো শেষ হয়নি পুরস্কার বিতরণী শুরুর অপেক্ষা। ভারতের ক্রিকেটাররা এই পুরোটা সময়ই একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তাদের সঙ্গে ছিলেন পরিবারের সদস্যরা।
এর মধ্যেই খবর ছড়িয়ে পড়ে ভারতের ক্রিকেটাররা এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট মহসিন নাকভীর হাত থেকে ট্রফি নিতে চান না। শেষ পর্যন্ত তারা তা করেন কি না সেই অনিশ্চয়তা নিয়েই শুরু হয় পুরস্কার বিতরণী। একে একে দেওয়া হয় সব পুরস্কারই। তবে ভারতের ক্রিকেটাররা মঞ্চে দাঁড়িয়ে থাকা নাকভীর হাত থেকে কোনো পুরস্কার নেননি। এরপরই দেখা মেলে অদ্ভূত সেই দৃশ্যের— চ্যাম্পিয়ন দলকে ট্রফিটা হাতে তুলে দেওয়ার সময়ই মঞ্চ ছেড়ে চলে যান সব অতিথিরা।
এদিকে ফাইনালের শুরুটা ছিল পাকিস্তানের দাপটে। টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে ওপেনার সাহিবজাদা ফারহান ও ফখর জামান ঝড় তোলেন। মাত্র ১০ ওভারেই গড়েন ৮৪ রানের জুটি। ফারহান খেলেন ৩৮ বলে ৫৭ রানের ঝলমলে ইনিংস। তবে তার বিদায়ের পর পাকিস্তান ব্যাটিং যেন তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে। একে একে সাজঘরে ফেরেন বাকি ব্যাটাররা। শেষ ৯ উইকেট হারায় মাত্র ৩৩ রানে। নির্ধারিত ২০ ওভারও টিকতে পারেনি সালমান আলি আগার দল, গুটিয়ে যায় ১৯.১ ওভারে ১৪৬ রানে। ফখর করেন ৩৫ বলে ৪৬ রান। ভারতের হয়ে বল হাতে ভরসা জাগান কুলদীপ যাদব (৪/৩০), অক্ষর প্যাটেল, বুমরাহ ও চক্রবর্তী (প্রতি জন ২টি করে)।
তবে লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা ছিল ভারতের জন্য দুঃস্বপ্নের মতো। পাকিস্তানের ফাহিম আশরাফ আর শাহিন শাহ আফ্রিদির আগুন ঝরানো বোলিংয়ে প্রথম ৪ ওভারেই ৩ উইকেট হারায় ভারত। অভিষেক শর্মা (৫), অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব (১) আর শুভমান গিল (১২) ফেরেন দ্রুত। স্কোর তখন ২০/৩।
সেখান থেকে ইনিংস গুছিয়ে নেন তিলক ভর্মা আর সঞ্জু স্যামসন। দুজনের ব্যাটে আসে ৫৭ রানের জুটি। স্যামসন ফেরেন ২৪ রানে। তবে ভর্মার সঙ্গে পরের জুটিতে শিবম দুবে জ্বালান আশার আলো। দুজন মিলে গড়েন ৬০ রানের পার্টনারশিপ। দুবে করেন ২২ বলে ৩৩ রান, মারেন দুটি ছক্কা ও দুটি চার।
অন্য প্রান্তে ভর্মা ছিলেন অবিচল। চাপের ম্যাচে নিখুঁতভাবে খেলে অপরাজিত থাকেন ৫৩ বলে ৬৯ রানে, যাতে ছিল ৪ ছক্কা ও ৩ চার। তার ব্যাটেই ভারতের জয় নিশ্চিত হয় ৫ উইকেটে। ফাইনালে পাকিস্তানের হয়ে বল হাতে উজ্জ্বল ছিলেন ফাহিম আশরাফ। ৪ ওভারে মাত্র ২৯ রান খরচ করে শিকার করেন ৩ উইকেট। শাহিন ও আবরার পান ১টি করে। শেষ পর্যন্ত তিলক ভর্মার শান্ত, পরিপক্ব ইনিংসই দিল এশিয়া কাপের মুকুট ভারতকে। পাকিস্তানের দুর্দান্ত শুরুর পরও ব্যাটিং ধসে হার মানতে হলো বাবরদের। এশিয়ার সেরা হয়ে আবারও নিজেদের শক্তির জানান দিল টিম ইন্ডিয়া।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান: ১৯.১ ওভারে ১৪৬ (ফারহান ৫৭, ফাখার ৪৬, সাইম ১৪, হারিস ০, সালমান ৮, তালাত ১, নাওয়াজ ৬, আফ্রিদি ০, ফাহিম ০, রউফ ৬, আবরার ১*; দুবে ৩-০-২৩-০, বুমরাহ ৩.১-০-২৫-২, ভারুন ৪-০-৩০-২, আকসার ৪-০-২৬-২, কুলদিপ ৪-০-৩০-৪, তিলাক ১-০-৯-০)।
ভারত: ১৯.৪ ওভারে ১৫০/৫ (অভিষেক ৫, গিল ১২, সুরিয়াকুমার ১, তিলক ৬৯*, স্যামসন ২৪, দুবে ৩৩, রিঙ্কু ৪*; আফ্রিদি ৪-০-২০-১, ফাহিম ৪-০-২৯-৩, নাওয়াজ ১-০-৬-০, রউফ ৩.৪-০-৫০-০, আবরার ৪-০-২৯-১, সাইম ৩-০-১৬-০)।
ফল: ভারত ৫ উইকেটে জিতে চ্যাম্পিয়ন।
ম্যান অব দা ফাইনাল: তিলক ভার্মা।
ম্যান অব দা টুর্নামেন্ট: অভিষেক শার্মা।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com